
ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে অংশ নিয়ে সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এতে কারও দাবি ছিল সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচনের, আবার কোনো পক্ষ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানায়।
শনিবার বিকেল তিনটায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ বৈঠকে বসে।
বৈঠকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “প্রথম ছয় মাসে আমাদের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। প্রথম ইনিংস সফল হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো।”
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও পক্ষ তাদের বক্তব্য তুলে ধরে।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সংস্কারের ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে। সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
আর জামায়াত ইসলামী জানিয়েছে,সংস্কার নিয়ে সেসব প্রস্তাবনা আসছে সেগুলোতে সমর্থন জানাবে তারা। সেই সংস্কার শেষেই নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে দলটি।
সংস্কার ইস্যুতে আলোচনা হলেও এই বৈঠকে উঠে আসে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
বৈঠকের পর শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রথম ধাপ হিসেবে আমরা প্রস্তাব করেছি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়ার। যাতে নিবন্ধন বাতিল করার মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করা যায়।”
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই জিনিসটা করা হচ্ছে কারণ যাতে করে একটা সনদ তৈরি হয়। যেটা হবে জুলাই সনদ বা জুলাই চার্টার। এটিতে যেন আমরা সবাই মিলে একমত হতে পারি।”
ছবির উৎস,CA PRESS WING
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই চার্টার
ঐকমত্য কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক ঐক্যসহ ২৬টি দলের শতাধিক নেতা যোগ দেন।
প্রধান উপদেষ্টার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আলী রীয়াজ শুরুতেই প্রাথমিক বক্তব্য তুলে ধরেন।
অধ্যাপক রীয়াজ এসময় বলেন, “সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আমরা আলাদা আলাদাভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলবো। আমরা জোটগতভাবে কথা বলবো। এক পর্যায়ে হয়তো আবার সকলকে একত্রিত করে ফিরে আসবো।”
এভাবে দলগুলোর সাথে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত ঐকমত্যের বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টাও।
কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে আর কোন কোন বিষয়গুলো কীভাবে সংস্কার প্রস্তাব থেকে জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত হবে তার একটি ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন ইস্যুতে একমত হয়েছে কিংবা দ্বিমত হয়েছে সে সব দিয়ে দেয়া হবে ওয়েবসাইটে। কারো কোনো বিষয়ে সংশোধনী থাকলে সেটা তারা দিতে পারবে। আমাদের দায়িত্ব হলো জাতির সামনে আপনাদের ইচ্ছা তুলে ধরা।”
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “কোনো দল চাইলে ১০০ প্রস্তাবের মধ্যে ৯৮টিতে রাজি হতে পারে। আবার কোনো দল দুই টিতেও রাজি হতে পারে। এর ভিত্তিতে আমরা কী কাজ করবো সেটা পরবর্তীতে ঠিক করবো।”
অধ্যাপক ইউনূস এসময় জানান, এই বিষয়গুলো নিয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিতেই তৈরি হবে জুলাই সনদ বা জুলাই চার্টার, সেই সনদে সব দলের স্বাক্ষর থাকবে।
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
ছবির উৎস,CA PRESS WING
ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক
কবে শেষ হবে সংস্কার?
মূলত সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো এই আলোচনায় দ্রুত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে।
বিশেষ করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনে গুরুত্ব দেয়।
যে কারণে কবে নাগাদ সংস্কার শেষ হবে সেই প্রশ্ন বৈঠকে যেমন আলোচনা হয়, আবার বৈঠক শেষেও সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদ ও সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চান।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সংস্কারের ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি হবে। সেটার ওপর ভিত্তি করে অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এই প্রসঙ্গে জামায়াত ইসলামীও বলেছে প্রায় একইভাবে। তবে তারা বরাবরের মতো সংস্কারে জোর দিয়েছে।
দলের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বলেছি এই সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার পরই যেন যথা শিগগিরই সম্ভব যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।”
ঐকমত্য কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আলী রীয়াজ বৈঠক থেকে বের হওয়ার পর তার কাছেও একই প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের।
জবাবে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “এই কমিশনেরই মেয়াদ দেয়া হয়েছে ছয় মাস। সেক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই। যেহেতু ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের সারাংশ ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দিয়েছি। তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করার জন্য সময় তাদের সময় দিতে হবে।”
সেই সময় কতদিন কিংবা পরবর্তী কতদিনের মধ্যে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে?
এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “আমরা আশা করছি যে ছয় মাসের চেয়েও কম সময়ে সম্ভব হয়। যদি তাই হয় তাহলে বুঝতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ আছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও মনে করে যত দ্রুততর সময়ে সম্ভব সেটা করার। কিন্তু এটা হয়তো অকস্মাৎ হবে না।”বিবিসি