
এবার মুকুলের পরিমাণ খুবই কম। উল্টো গজাচ্ছে নতুন পাতা। ছবি–জাগো নিউজ
শেখ মহসীন, ঈশ্বরদী (পাবনা)
ফাল্গুন মাস এলেই লিচুর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঈশ্বরদীর প্রতিটি গ্রামে। থোকায় থোকায় হলুদ রঙের মুকুলে ছেয়ে যায় শত শত লিচু বাগান। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। লিচুগাছে মুকুল নেই বললেই চলে।
চিরাচরিত মুকুলের গন্ধও নেই। উল্টো কচিপাতা গজাচ্ছে। মুকুল কম আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বাগানমালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে কেউ দেখেনি।
এবার লিচুর মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো সময় আছে লিচুর মুকুল আসার। এরই মধ্যে কিছু গাছে লিচুর মুকুল আসা শুরু হয়েছে।
লিচু ঈশ্বরদী এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৪৫০-৫০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয়। লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা।
আরো পড়ুন:
কখন লিচু খাওয়া বিপজ্জনক?
পুষ্টিগুণে ভরপুর লিচু
উপজেলার ‘লিচু গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শত শত বাগানের লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজিয়েছে। গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। এজন্য লিচু উৎপাদন নিয়ে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চাষিরা। দেখা গেলো, ফাল্গুন মাসের ১৭ দিন অতিক্রম হতে চললেও চাষিরা লিচু বাগান পরিচর্যা করছেন না। বাগানে সার, কীটনাশক ও মুকুলের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ব্যবহার করছেন না। অন্যান্য বছর এসময় যেখানে বাগানগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন চাষিরা, এবার যেন বাগানগুলোতে সুনসান নীরবতা।
লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগানে ১০০ লিচু গাছ থাকলে সেখানে মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও বেশ কম। অতীতে এত কম মুকুল কখনো দেখা যায়নি। হঠাৎ এ বছর কেন এমন হলো তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে তাদের ধারণা, আবহাওয়ার কারণে এবছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে।
লিচু চাষে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক উপজেলার মিরকামারী গ্রামের আব্দুল জলিল কিতাব ওরফে লিচু কিতাব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি। এমন বিপর্যয় কখনো হয়নি। শুধু আমার নয়, পুরো দেশে লিচু চাষের এ অবস্থা। এজন্য দায়ী করতে হলে প্রথমে পরিবর্তিত আবহাওয়াকে দায়ী করতে হবে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কি না সন্দেহ আছে। এবছর ১০ শতাংশ লিচুর ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’