১১:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

এক জোড়া জুতার দাম ৩৩৫ কোটি টাকা!

  • আপডেট সময়: ০৮:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • 46

অনলাইন ডেস্ক : বিখ্যাত ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজে’র অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড এর জাদুকরী জুতো বলে কথা। ১৯৩৯ সালে জুডির পায়ের সেই লাল জুতো জোড়ার দাম কোটি টাকা। শিরোনামটি পড়েই নিশ্চয় ভ্রু কুঁচকে গেছে। এক জোড়া জুতার দাম আবার ৩৩৫ কোটি টাকা হয় কীভাবে! কিন্তু ঘটনা সত্যি।

যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক নিলামে এক জোড়া জুতো বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার সমান।

চলচ্চিত্রটিতে ব্যবহৃত জুতোগুলোর মধ্যে যে চার জোড়া এখনো টিকে আছে সেগুলোর একটি এটি। বিখ্যাত এই জুতোটি একবার মিনেসোটার একটি জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছিল। প্রায় এক মাস আগে অনলাইনে নিলাম শুরু হয়, যেখানে জুতোর দাম ৩০ লাখ ডলার পর্যন্ত উঠবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা যায় ধারণার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিকিয়েছে এটি।

এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ অকশন এই জুতোজোড়াকে হলিউড স্মৃতিচিহ্নের ‘হলি গ্রেইল’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা জানায়, এটি সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া স্মারক।

ডালাসের নিলাম কক্ষে বিজয়ী ঘোষণার পর করতালির মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন উপস্থিত সবাই। কাকতালীয়ভাবে ‘দ্য উইজার্ড অব ওজে’র প্রিক্যুয়েল ‘উইকেড’ সাম্প্রতিক সময়েই মুক্তি পায়। সব কিছু মিলিয়ে তাই পুরোনো দিনের সেই বিখ্যাত চলচ্চিত্রটির প্রতি মানুষের নতুন করে আগ্রহের জন্ম নেয়।

১৯৩৯ সালের ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব ওজে’ ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করার সময় জুডি গারল্যান্ডের বয়স ছিল কেবল ১৬ বছর। প্রখ্যাত মিডিয়া আউটলেট ভ্যারাইটি এই ছবিকে তাদের প্রথম ‘১০০ সেরা সিনেমা’ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে।

১৯০০ সালে ছোটদের জন্য লেখা ফ্রাঙ্ক বমের বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব ওজ’ অবলম্বনে নির্মিত হয় চলচ্চিত্রটি। বইতে ডরোথির জাদুকরী জুতো রুপার ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতারা জুতোগুলোকে লাল রঙে বদলে নেন। রুবির জুতো বা রুবি স্লিপারজ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলেও মূলত এটি চুমকি খচিত।

চলচ্চিত্রে, বইয়ের মতোই, একটি বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন ডরোথি তিনবার তার পায়ের গোড়ালি ঠুকিয়ে ‘বাড়ির মতো আর কিছু নেই’ বলতে বলতে জাদুর দেশ ওজ ছেড়ে ক্যানসাসে তার বাড়িতে ফিরে যায়।

চলচ্চিত্রে জুডি গারল্যান্ড বেশ কয়েক জোড়া জুতো ব্যবহার করেছিলেন। সঠিক সংখ্যাটি জানা যায়নি। তবে এখন এগুলোর মধ্যে কেবল চার জোড়া জুতো টিকে আছে। এর মধ্যে একটি প্রদর্শিত রয়েছে স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টরিতে। কিন্তু নিলামে বিক্রি হওয়া জোড়াটির রয়েছে নিজস্ব বিশেষ গল্প।

সংগ্রাহক মাইকেল শ এই জুতোজোড়া মিনেসোটার গ্র্যান্ড র‍্যাপিডসে অবস্থিত জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামে ধার দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২০০৫ সালে এটি চুরি হয়ে যায়। পেশাদার চোর টেরি জন মার্টিন হাতুড়ি দিয়ে কাচের বাক্স ভেঙে জুতো চুরি করেন। তার ধারণা ছিল, ১০ লাখ ডলারের বিমা করা এই জুতোজোড়া আসল রত্ন দিয়ে বানানো।

কিন্তু যখন তিনি চুরি করা জিনিসের গোপন বিক্রেতার কাছে এগুলো বিক্রি করতে যান, তখন জানতে পারেন জুতোয় রত্ন নয়, বরং কাচ ও চুমকি ব্যবহার করা হয়েছে। হতাশ হয়ে তিনি জুতো জোড়া অন্য একজনকে দিয়ে দেন। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর এর কোনো খবর ছিল না। অবশেষে ২০১৮ সালে এফবিআই একটি বিশেষ অভিযানে এই জুতোজোড়া উদ্ধার করে।

৭০-এর কোঠায় থাকা এবং হুইলচেয়ারে চলাচল করা টেরি জন মার্টিন ২০২৩ সালে এই চুরির দায় স্বীকার করেন।

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

এক জোড়া জুতার দাম ৩৩৫ কোটি টাকা!

আপডেট সময়: ০৮:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক : বিখ্যাত ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজে’র অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড এর জাদুকরী জুতো বলে কথা। ১৯৩৯ সালে জুডির পায়ের সেই লাল জুতো জোড়ার দাম কোটি টাকা। শিরোনামটি পড়েই নিশ্চয় ভ্রু কুঁচকে গেছে। এক জোড়া জুতার দাম আবার ৩৩৫ কোটি টাকা হয় কীভাবে! কিন্তু ঘটনা সত্যি।

যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক নিলামে এক জোড়া জুতো বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩৩৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার সমান।

চলচ্চিত্রটিতে ব্যবহৃত জুতোগুলোর মধ্যে যে চার জোড়া এখনো টিকে আছে সেগুলোর একটি এটি। বিখ্যাত এই জুতোটি একবার মিনেসোটার একটি জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছিল। প্রায় এক মাস আগে অনলাইনে নিলাম শুরু হয়, যেখানে জুতোর দাম ৩০ লাখ ডলার পর্যন্ত উঠবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা যায় ধারণার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিকিয়েছে এটি।

এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ অকশন এই জুতোজোড়াকে হলিউড স্মৃতিচিহ্নের ‘হলি গ্রেইল’ বলে উল্লেখ করেছে। তারা জানায়, এটি সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া স্মারক।

ডালাসের নিলাম কক্ষে বিজয়ী ঘোষণার পর করতালির মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন উপস্থিত সবাই। কাকতালীয়ভাবে ‘দ্য উইজার্ড অব ওজে’র প্রিক্যুয়েল ‘উইকেড’ সাম্প্রতিক সময়েই মুক্তি পায়। সব কিছু মিলিয়ে তাই পুরোনো দিনের সেই বিখ্যাত চলচ্চিত্রটির প্রতি মানুষের নতুন করে আগ্রহের জন্ম নেয়।

১৯৩৯ সালের ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব ওজে’ ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করার সময় জুডি গারল্যান্ডের বয়স ছিল কেবল ১৬ বছর। প্রখ্যাত মিডিয়া আউটলেট ভ্যারাইটি এই ছবিকে তাদের প্রথম ‘১০০ সেরা সিনেমা’ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে।

১৯০০ সালে ছোটদের জন্য লেখা ফ্রাঙ্ক বমের বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব ওজ’ অবলম্বনে নির্মিত হয় চলচ্চিত্রটি। বইতে ডরোথির জাদুকরী জুতো রুপার ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতারা জুতোগুলোকে লাল রঙে বদলে নেন। রুবির জুতো বা রুবি স্লিপারজ বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলেও মূলত এটি চুমকি খচিত।

চলচ্চিত্রে, বইয়ের মতোই, একটি বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন ডরোথি তিনবার তার পায়ের গোড়ালি ঠুকিয়ে ‘বাড়ির মতো আর কিছু নেই’ বলতে বলতে জাদুর দেশ ওজ ছেড়ে ক্যানসাসে তার বাড়িতে ফিরে যায়।

চলচ্চিত্রে জুডি গারল্যান্ড বেশ কয়েক জোড়া জুতো ব্যবহার করেছিলেন। সঠিক সংখ্যাটি জানা যায়নি। তবে এখন এগুলোর মধ্যে কেবল চার জোড়া জুতো টিকে আছে। এর মধ্যে একটি প্রদর্শিত রয়েছে স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টরিতে। কিন্তু নিলামে বিক্রি হওয়া জোড়াটির রয়েছে নিজস্ব বিশেষ গল্প।

সংগ্রাহক মাইকেল শ এই জুতোজোড়া মিনেসোটার গ্র্যান্ড র‍্যাপিডসে অবস্থিত জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামে ধার দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২০০৫ সালে এটি চুরি হয়ে যায়। পেশাদার চোর টেরি জন মার্টিন হাতুড়ি দিয়ে কাচের বাক্স ভেঙে জুতো চুরি করেন। তার ধারণা ছিল, ১০ লাখ ডলারের বিমা করা এই জুতোজোড়া আসল রত্ন দিয়ে বানানো।

কিন্তু যখন তিনি চুরি করা জিনিসের গোপন বিক্রেতার কাছে এগুলো বিক্রি করতে যান, তখন জানতে পারেন জুতোয় রত্ন নয়, বরং কাচ ও চুমকি ব্যবহার করা হয়েছে। হতাশ হয়ে তিনি জুতো জোড়া অন্য একজনকে দিয়ে দেন। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর এর কোনো খবর ছিল না। অবশেষে ২০১৮ সালে এফবিআই একটি বিশেষ অভিযানে এই জুতোজোড়া উদ্ধার করে।

৭০-এর কোঠায় থাকা এবং হুইলচেয়ারে চলাচল করা টেরি জন মার্টিন ২০২৩ সালে এই চুরির দায় স্বীকার করেন।