
প্রতীকী ছবি : এএফপি
পরিবর্তনশীল জলবায়ুর প্রভাব শুধু প্রকৃতিতে নয়, পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা বলছে, সেই দেশের লাখো মানুষ এর ফলে হৃদরোগের বাড়তি ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান একটি গবেষণা বলছে, বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা তাপমাত্রার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ার মানুষদের জন্য।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মারণ রোগের কারণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগ।
সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে করোনারি হার্ট ডিজিজ, যার ফলে মানুষের মধ্যে স্ট্রোক, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক ও এট্রিয়াল ফিব্রিলেশনও হতে পারে। এই রোগগুলোর কারণ হিসেবে গবেষকরা একাধিকবার বলেছেন উচ্চ রক্তচাপ, বাড়তি কোরেস্টেরল, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও মানসিক চাপের কথা। কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার দিকটি সেভাবে আলোচিত হয়নি। এই গবেষণাটি সেদিক থেকে যুগান্তকারী।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পেংবি। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৫ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হবে। এই প্রবণতা একই সঙ্গে আমাদের সমাজ, সার্ভিস প্রভাইডার ও দেশের নীতি নির্ধারকদের জন্য সতর্কবাণী।’
যা বলছে এই গবেষণা
২০০৩ থেকে ২০১৮ সালের স্বাস্থ্য পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা করা হয়েছে।
ডিএএলওয়াই পদ্ধতি ব্যবহার করে এই গবেষণা করা হয়। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ রোগের কারণে কোনো ব্যক্তি কত বছরের আয়ু হারাচ্ছেন, তার হিসেব করা হয়।
বাড়তি তাপমাত্রার ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির ফলে এই বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ হারিয়েছেন ৫০ হাজার বছরের আয়ু, জানায় গবেষণাটি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে দেশটির উত্তরাঞ্চলের মানুষ, যেখানে স্বাভাবিক তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি থাকে।
কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে নতুন নীতি প্রণয়ণ করে ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যাকে উষ্ণ আবহাওয়া সম্পর্কিত রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়া—পেং বির মতে এই গবেষণার পরামর্শ এটাই।
তিনি বলেন, ‘ক্রনিক রোগের রোগী, বয়স্ক মানুষ ও আর্থসামাজিক দিক থেকে দুর্বল ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।’
বাকি বিশ্বের জন্য কতটা প্রযোজ্য এই গবেষণা
ইতালির সেকেড হার্ট ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ফিলিপো ক্রিয়ার মতে, এই গবেষণাটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার জনগণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ফলে তা কতটা বাকি বিশ্বের মানুষের জন্য প্রযোজ্য, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই ধারা যে কিছুটা হলেও অন্যান্য জায়গার জন্যেও সত্য, তা মানেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপের চেয়েও অস্ট্রেলিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চরম।’
এই গবেষণার কাছাকাছি ধারণা দিচ্ছে আরো কয়েকটি গবেষণাও। ২০১৭ সালে একটি গবেষণা বলে, ২১০০ সাল পর্যন্ত ভারতের ৭০ শতাংশ মানুষ অসম্ভব গরমের ভুক্তভোগী হবে। মেক্সিকোর একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২১০০ সালের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উষ্ণ তাপমাত্রাজনিত মৃত্যুর হার বাড়বে ৩২ শতাংশ।