
(প্রবন্ধটি ১০ মে, ২০২৫ দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত)
হাসান জাহিদ
সহজে বহনযোগ্য ও যে কোনো আকার দেয়া সম্ভব বলে কেনাকাটা ও বাজার-সদাই করতে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হচ্ছে। এই ব্যাপক ব্যবহারের আরো কারণ হলো বাজার-সদাই করলে এই ব্যাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
হাসান জাহিদ, কথাশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও পরিবেশবিদ
২০০২ সালের দিকে বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যাগ সম্পূর্ণ ফেজ-আউট বা ব্যবহার বন্ধ করে বিশ্বে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এই পলিথিন আবার স্বরূপে ও আরো ব্যাপক হারে ফিরে আসে দেশজুড়ে। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ-ব্যাধি ও পরিবেশ. মাটি ও ইকোসিস্টেম ধ্বংস করে দেশকে পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার।
২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। তবে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি; বরং গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। এরপর সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। কিন্তু এই আইনও বাস্তবে কোনো কাজ আসেনি।
পরিবেশের পাশাপাশি পলিথিন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি এবং ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে পলিথিন। পলিথিন প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক খাবার বা পানির সংস্পর্শে আসলে ধীরে ধীরে খাদ্যে মিশে যায়। এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহে ক্যান্সার, হরমোনগত অসামঞ্জস্য, এবং প্রজনন সমস্যার কারণ হতে পারে।
পলিথিন পোড়ালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো শ্বাসনালীর প্রদাহ, অ্যাজমা, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ধীরে ধীরে ছোটো ছোটো মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ক্ষতি, রক্তে প্রদাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নদী-নালা বা সমুদ্রের পলিথিন বর্জ্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই দূষিত জলজ প্রাণী যখন মানুষ গ্রহণ করে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক খেলনা, প্যাকেটজাত খাদ্য, বা পানির বোতল থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিক মাটি ও পানিকে দূষিত করার ক্ষেত্রে বা ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য খুবই ক্ষতিকর।
পলিথিন হচ্ছে রাসায়নিক যৌগ ইথেনের পলিমার, যা বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তৈরি। পলিথিন হলো একধরণনর নমনীয় কিন্তু শক্ত প্লাস্টিক। এমনকি পলিথিন এসিড, ক্ষার সহ অন্যান্য দ্রাবক দ্বারা আক্রান্ত তথা ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। সাধারণ ভাবে তাই বলা যায় পলিথিন বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি পলিথিন মাটির সাথে মিশে যেতে দুইশত বছর সময় লাগে।
পলিথিন ব্যাগ আমাদের শহরগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো করে দিচ্ছে। খালবিল সহ বিভিন্ন জলাধারে প্লাস্টিক জমে পরিবেশ, জলাভূমি, পানির বিভিন্ন আধার ও জলজ প্রাণী ও মাছের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ঢাকা শহরের ছোটো ছোটো খালে ভাসতে দেখা যায় হাজার হাজার পলিথিন ব্যাগ। এছাড়া এই ব্যাগ ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হয়। ঢাকা ও বড় বড় শহরের ডাম্পিংগ্রাউন্ডগুলোতে লক্ষ লক্ষ পলিথিনের জড়াজড়ি করে পড়ে থাকার দৃশ্য নিত্যনৈমিত্তিক।
ঢাকার চারপাশে রয়েছে চারটি নদী—বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু। ছিল অর্ধশতাধিক খাল। এসব নদী ও খাল মিলে ঢাকা ছিল অপরূপা। অনেক খালই আজ নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। নদীগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দখলে-দূষণে অন্তিম দশা। বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী। নদীর দুইপাশই আবর্জনার স্তূপ। এর বেশির ভাগই ডাবের খোসা ও পলিথিন ব্যাগ। বুড়িগঙ্গার তলদেশে কোটি কোটি পলিথিন ব্যাগ পানি ঢুকে ভারি হয়ে নদীর তলদেশে বিদ্যমান।
পলিথিন এমন একটি পদার্থ যা পচন অযোগ্য। এমনকি পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন করে বায়ু দূষিত করে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। তবু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের কোনো নজির নেই।
পরিসংখ্যানে জানা যায় চমকপ্রদ তথ্য, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি করে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র মতে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিনের ব্যাগ জমা হচ্ছে।
একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানির লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় প্লাস্টিকের কারখানা আছে প্রায় কয়েক শত। লালবাগের চান্দিরঘাট এলাকার পুরোটাই প্লাস্টিক উৎপাদের কারখানা। এখানে প্রকাশ্যে চলে অবৈধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি।
৭০ দশকে তীব্র দূষণকারী এই প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার ছিল না। বাজার-সদাই করতে ব্যবহৃত হতো চটের বা কাপড়ের ব্যাগ, ছালা ও কাগজের মোটা ও পাতলা ঠোঙা। সেইসময় এবং তার পরবর্তী কিছুকাল–মোটামুটি অশির দশক পর্যন্ত মানুষ বুড়িগঙ্গার তীরে বেড়াত, বুড়িগঙ্গার পানি পানও করা যেত। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা একটি দুর্গন্ধযুক্ত মৃত নদী। এর পানিতে মিশেছে নানা রকম জলযানের পোড়া তেল, মানববর্জ্য ও হাজারীবাগ ট্যানারির ক্রোমিয়াম। ক্রোমিয়ামের কারণে ট্যানারি এলাকার মাটি সম্পূর্ণ দূষিত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই অসেচতন, এমনকি শিক্ষিতরাও যত্রতত্র পলিথিন ব্যাগ ফেলে দেন। যার ফলে, বিশেষত শহর এলাকায় গাছের ডাল থেকে মাটির গভীরে ও ড্রেনেজ ও পয়ঃপ্রণালীতে প্লাস্টিক ব্যাগ তীব্র ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
নদীর গভীরতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ পলিথিন। পলিথিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সিটি করপোরেশন, জেলা শহর, পৌরসভা ও উপজেলা শহর এলাকায়। ফলে শহর এলাকার নদ-নদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী নদী যা রাজধানি ঢাকার, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী; চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর পড়েছে। এছাড়া নরসুন্দা, নবগঙ্গা, সুরমা, করতোয়া, ইছামতিসহ বিভিন্ন নদ-নদী পলিথিন দূষণের কবলে পড়েছে।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে কয়েক ফুট পুরু পলিথিনের স্তর জমার কারণে নদীর দূষণ তো বটেই, জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। পলিথিনের প্রভাবে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে যে কারণে বন্যা, নদীভাঙনের মতো সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। সেই সাথে নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব বস্তু দায়ী তার অন্যতম প্রধান হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। ইথিনের পলিমার এই পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যার ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাণ ও প্রকৃতি। সূত্রমতে, পৃথিবীব্যাপী প্রতি মিনিটে এক মিলিয়ন মানুষ বছরে গড়ে ৪০০টি ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দৈনিক এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগসহ প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার ৩০ লাখেরও বেশি যা ক্ষতি করছে পরিবেশের। মাটির উর্বরতা নষ্ট করে ফসলের ক্ষতি করছে পলিথিন। পলিথিন পোড়ালে কার্বন মনোঅক্সাইডের বিষাক্ততা পরিবেশকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পলিথিন মাটিতে পড়ে থাকায় মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট বা ইরি।
পলিথিনের ব্যবহার:
বর্তমানে জীবনযাত্রার এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে পলিথিনের ব্যবহার নেই। কোথায়, কীভাবে এবং কেন পলিথিনের এতো মরণঘাতি ব্যবহার:
- প্যাকেজিং:খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে পোশাক, সবকিছুতেই পলিথিনের মোড়ক ব্যবহার করা হয়
- কৃষি:পলিথিন ফিল্ম ব্যবহার করে গ্রিনহাউস তৈরি করা হয়, যা ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে
- স্বাস্থ্যসেবা:সিরিঞ্জ, গ্লাভস, স্যালাইন ব্যাগসহ অসংখ্য পণ্য তৈরিতে পলিথিন ব্যবহৃত হয়
- শিল্প:পাইপ, তার, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে পলিথিন ব্যবহৃত হয়
- গৃহস্থালি:বালতি, মগ, খেলনা, আসবাবপত্র তৈরিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যাপক
পলিথিনের বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণেই এটি এত জনপ্রিয়। হালকা, টেকসই এবং সহজে তৈরি করা যায় বলে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পলিথিন ব্যবহারের একটিই মাত্র সুবিধা। সহজলভ্য ও সহজে বহনযোগ্য। কিন্তু এর স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল মারাত্মক ও জীবন হরণকারী।
পলিথিনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
পলিথিন স্বাস্থ্যের ক্ষতি ধীর গতিতে করতে থাকে। পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশ দূষণ করে যার ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। যেমন-
-চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, ক্যান্সার, মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা যায়
-আমরা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পলিথিনে বহন করি, নিম্নমানের এসব পলিথিন খাদ্যে একধরনের বিষক্রিয়া করে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর
-পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে
-পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়
এছাড়া উজ্জ্বল বা কালো রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ তৈরি হয়
পলিথিন দূষণ রোধে করণীয়
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সবদিক থেকে। যেভাবে চলছে এমনটা আগামীতেও চললে বিপদ সীমার চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না । জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক কারণ থাকলেও পলিথিনদূষণও এর অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। পলিথিন দূষণ আমাদের নিজেদের রোধ করা উচিৎ। আর পলিথিন দূষণ রোধ করতে আমাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। যেমন-
-পলিথিনের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা
-পচনশীল ময়লা ফেলার আগে প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিভিন্ন সামগ্রী আলাদা (সেগ্রিগেট) করে ফেলা
-যত্রতত্র পলিথিন না ফেলিয়ে একজায়গায় রাখা
-বাজার করার ক্ষেত্রে পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ সাথে রাখা
পলিথিনের দূষণ ও ব্যবহার কমাতে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার করণীয়
পলিথিনের দূষণ যে পর্যায়ে গেছে তার লাগাম টেনে না ধরতে পারলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে আমাদের। পরিবেশ দূষণ ও ব্যবহার রোধে সরকার আইন করলেও তার বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এখন আর থেমে থাকার সময় নেই। পলিথিন দূষণ ঠেকাতে এখন সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাজারের জন্য পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বেশ সোচ্চার। অক্টোবরে সুপারশপ এবং নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়নি।
নভেম্বর মাসের শুরু থেকে অভিযান পরিচালনা করার কথা থাকলেও বাস্তবে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি।
যদিও এর মধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু পলিথিন বহনকারী ট্রাক ও পলিথিন জব্দের তথ্য জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। পলিথিন বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে কর্মকর্তাদের।
১৩ নভেম্বর ২০২৪ পুরোনো ঢাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বাধার মুখে অভিযান স্থগিত করতে হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। কারখানার শ্রমিক-মালিকরা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ করতে থাকেন।
আইন করে নিষিদ্ধ করাটা কাজেও এসেছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মোটামুটি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার সেভাবে দেখা যায়নি। এরপর ধীরে ধীরে নজরদারির অভাবে বাজারে জায়গা ফিরে পায় পলিথিন।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থার একটি হিসেবে প্রতিদিন ঢাকা শহরেই সাড়ে চার কোটি পলিথিন ব্যাগ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয়। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী যারা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য উৎপাদনের সাথে সরাসরি কাজ করেন তাদের উপরই বিষাক্ত রাসায়নিকের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বেশি পড়ে।
এসডো’র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন মনে করেন, যেটি আগে থেকেই নিষিদ্ধ সেটি আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণেই বিস্তার লাভকরেছে এবং বর্তমানে আইনের প্রয়োগে বাধা সৃষ্টিটাও রাজনৈতিকভাবে সরকারকে অপ্রস্তুত করতে করা হচ্ছে।
সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকরণে বদ্ধপরিকর হলেও এজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আগারগাঁওয়ে পরিবেশ ভবনে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এখানে পলিথিনের পরিবর্তে কাগজের ও চটের ব্যাগ ও পণ্য প্রদর্শিত হয়। এসব ব্যাগ ও পণ্য মাটিতে পঁচে যায়, এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে যে কাজটি সবচেয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা প্রয়োজন, তা হলো জনসচেতনতা সৃষ্টির সাথে সাথে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তাদের কুটিরশিল্প তৈরির জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
অনেক কানাডীয় স্টোর এবং মলে প্রতি প্লাস্টিক ব্যাগের জন্য ৫ সেন্ট ফি দিতে হয়। কিছু দোকানে পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগের দাম বেশি, প্রায়শই ২৫ সেন্ট। এই ফি পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য এবং প্লাস্টিকের বর্জ্য কমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমাদের দেশেও প্রতি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের জন্য মূল্য ধরা হলে অনেকেই নিরুৎসাহিত হবেন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে।
এসব কাজ বিচ্ছিন্নভাবে করলে হবে না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে পলিথিন জব্দ ও জরিমানা করার পরও সেসব আবার বাজারে ফিরে আসে।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশনীতি ও বিধিমালায় নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জেলায় জেলায় ব্যাপক গণসচতেনতামূলক ক্যাম্পেইন চালাতে হবে।