১৭ মে গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার গাজা উপত্যকায় তাদের সম্প্রসারিত অভিযানের অংশ হিসেবে ‘ব্যাপক স্থল অভিযান’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। একই সময়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে উদ্ধারকর্মীরা ইসরায়েলি হামলায় বহু মানুষের মৃত্যুর খবর দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ‘লড়াই বন্ধে’ হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি করার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘোষণা আসে। সেনাবাহিনী জানায়, গত এক দিনে তাদের বাহিনী ‘উত্তর ও দক্ষিণ গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে’, যেখানে তারা ‘ডজনখানেক সন্ত্রাসীকে নির্মূল করেছে, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করেছে...এবং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলোতে (সেনা) মোতায়েন রয়েছে’।
অন্যদিকে ‘ব্যাপক স্থল অভিযান’ শুরুর ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই গাজা উপত্যকা থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘কিসুফিমে সাইরেন বাজানোর পর মধ্য গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রবেশের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে।’ এর মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং অন্যটি খোলা জায়গায় পড়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তাদের এই বাড়তি অভিযান মূলত জিম্মি মুক্ত করা ও হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যেই।
কিন্তু শনিবার এই অভিযান শুরুর প্রাথমিক পর্যায়েই ইসরায়েল ও হামাস কাতারে পরোক্ষ আলোচনায় জড়ায়, যেখানে একটি চুক্তির চেষ্টা চলছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘দোহায় থাকা আলোচনা দল একটি চুক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে—তা হোক উইটকফ ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে বা যুদ্ধ শেষের অংশ হিসেবে।’ মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ আগে এই আলোচনায় জড়িত ছিলেন।
আরো পড়ুন
গাজায় নতুন হামলা বন্ধে চাপ বাড়ছে ইসরায়েলের ওপর
https://www.kalerkantho.com/online/world/2025/05/18/1519270
নেতানিয়াহুর বিবৃতি অনুসারে, চুক্তিতে ‘সব জিম্মির মুক্তি, হামাস যোদ্ধাদের নির্বাসন ও গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতি মার্চ মাসে ভেঙে যাওয়ার পর কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনা এখনো কোনো সফল সমাধানে পৌঁছতে পারেনি। নেতানিয়াহু হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত না করে যুদ্ধ শেষের বিরোধী, আর হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু শনিবার বলেছেন, দোহায় আলোচনা শুরু হয়েছে ‘কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই’। এক হামাস সূত্র বলছে, ‘মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ আলোচনায় থাকা বিরোধের সমাধানে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
হামাস তখন ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনো গাজায় রয়েছে। তবে সেনাবাহিনী বলছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ ইসরায়েলের হামলা পুনরায় শুরুর পর থেকে কমপক্ষে তিন হাজার ১৯৩ জন নিহত হয়েছে, যার ফলে যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৩৩৯ জনে।