ইকরামুল হক শাকিল
সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কৃষক পরিবারের সন্তান ইকরামুল হক শাকিল। তার এ জয়ে শুধু পরিবারই খুশিই নয়, তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছে এলাকাবাসীও।
সোমবার বিকেলে শাকিলের এভারেস্ট জয়ের খবর এলাকায় পৌঁছালে তার বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশী, স্বজন ও দুর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ। এসময় তাদের বেশ উচ্ছসিত দেখা যায়। শাকিলের মা তাদের সঙ্গে অশ্রুসিক্ত চোখে শাকিলকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করছেন।
৩৫ বছর বয়সী শাকিলের জন্ম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগচালা গ্রামে। এ গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা। শাকিলের বাবা কৃষক খবির উদ্দিন, মা গৃহিনী শিরিনা বেগম, দুই ভাই সজিব আহমেদ ও সাকিব আহমেদকে নিয়ে তাদের সংসার। ২০১৯ সালের বাবার মৃত্যুর পর পরিবার হাল ধরেন তার মা। বাবার রেখে যাওয়া কয়েক বিঘা জমি চাষ করে তার ভাই সজিব আহমেদ। আরেক ভাই সাকিব স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক।
শাকিলের লেখা বই হাতে তার মা ও ভাই
শাকিলদের বাড়ির তিন কোণে তিন বসত ঘর। উত্তরের ভিটার ঘরটি জীর্ণ ও দক্ষিণের ভিটার ঘরটিতে গবাদিপশু রাখেন, পূর্ব পাশের ঘরটিতে শাকিলের পরিবার বসবাস করেন। শাকিল স্থানীয় ৭ নং বাগচালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি শ্রীপুরের পিয়ার আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ছোট বয়স থেকেই লেখালিখি, বই পড়া, ভ্রমণে বেশ আকৃষ্ট ছিলেন শাকিল। এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ও ভ্রমণবিষয়ক ছয়টি বই লিখেছেন।
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শাকিল এই ভাঙা ঘর থেকে এত ওপরে যাবে, এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি নাই। শাকিলের উছিলাতে আজকে আমাদের গ্রামকে সারা দেশের মানুষের মতো সারা বিশ্বের মানুষ চিনেছে।’
শাকিলদের বাড়িতে ভিড় করেছেন বিভিন্ন জন
শাকিলের মা শিরিনা আক্তার বলেন, গত শুক্রবার রাতে শাকিলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়। এরপর থেকে তিনি বেশ চিন্তিত ছিলেন। সন্তানের চিন্তায় গত তিনদিন তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সন্তানের সফলতার জন্য সন্তানকে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ্ কাছে দোয়া করেছেন। শাকিলের সফলতার খবর শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহমেদ বলেন, ‘আমি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে এভারেস্ট জয়ের বিষয়টি জেনেছি। শাকিলের এমন অর্জনে আমরা গর্বিত।’