০১:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

গাজা নিয়ে মন্তব্য, ২ ইসরায়েলি মন্ত্রীর ওপর ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা

  • আপডেট সময়: ০৪:৩৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
  • 10

ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ। ফাইল ছবি: এএফপি


গাজা উপত্যকা নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের কারণে যুক্তরাজ্য দুই ইসরায়েলি কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিবিসি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ—এই দুই মন্ত্রী এখন থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষিদ্ধ থাকবেন এবং তাদের ব্রিটেনে থাকা যেকোনো সম্পদ জব্দ করা হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন।

ডেভিড ল্যামি বলেন, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গভির ‘চরমপন্থী সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন’। এর জবাবে ইসরায়েল বলেছে, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই আমরা এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি, দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তির, যাদের এই অঞ্চলের শাসনে কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকা থাকতে পারে না, সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

এদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার জানিয়েছেন, এই ‘অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে’ প্রতিক্রিয়া জানাতে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভা বৈঠক করবে।

গণমাধ্যমটি বলছে, এই পদক্ষেপ এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েল সরকারকে চাপ দিতে সক্রিয় হয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর আরো জানিয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের মতো অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যও স্পষ্ট করে বলছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।’

দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্মোটরিচ ও বেন-গভিরের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে গাজার পরিস্থিতি থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না। সেখানে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্মোটরিচ ও বেন-গভির—দুজনই কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য, যারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছেন। এই দুই নেতা গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে তাদের অবস্থানের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। স্মোটরিচ গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন, আর বেন-গভির গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

হেবরন পাহাড়ে একটি নতুন ইসরায়েলি বসতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মোটরিচ জানান, ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি ‘ঘৃণা’ অনুভব করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন এর আগেও আমাদের এই ভূমিতে বসতি স্থাপন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল, এবার তারা সেটা আর করতে পারবে না। আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছায় নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখব।’

বিবিসির তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে সংঘটিত নজিরবিহীন আন্ত সীমান্ত হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ২০ মাস পার হয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৫৪ হাজার ৯২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

গাজা নিয়ে মন্তব্য, ২ ইসরায়েলি মন্ত্রীর ওপর ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময়: ০৪:৩৯:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ। ফাইল ছবি: এএফপি


গাজা উপত্যকা নিয়ে দেওয়া মন্তব্যের কারণে যুক্তরাজ্য দুই ইসরায়েলি কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিবিসি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ—এই দুই মন্ত্রী এখন থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষিদ্ধ থাকবেন এবং তাদের ব্রিটেনে থাকা যেকোনো সম্পদ জব্দ করা হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন।

ডেভিড ল্যামি বলেন, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী বেন-গভির ‘চরমপন্থী সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন’। এর জবাবে ইসরায়েল বলেছে, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সরকারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই আমরা এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি, দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তির, যাদের এই অঞ্চলের শাসনে কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকা থাকতে পারে না, সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

এদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার জানিয়েছেন, এই ‘অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে’ প্রতিক্রিয়া জানাতে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভা বৈঠক করবে।

গণমাধ্যমটি বলছে, এই পদক্ষেপ এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েল সরকারকে চাপ দিতে সক্রিয় হয়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর আরো জানিয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ের মতো অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যও স্পষ্ট করে বলছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।’

দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্মোটরিচ ও বেন-গভিরের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে গাজার পরিস্থিতি থেকে আলাদা করে দেখা যাবে না। সেখানে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্মোটরিচ ও বেন-গভির—দুজনই কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য, যারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছেন। এই দুই নেতা গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে তাদের অবস্থানের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। স্মোটরিচ গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন, আর বেন-গভির গাজার বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন।

হেবরন পাহাড়ে একটি নতুন ইসরায়েলি বসতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মোটরিচ জানান, ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি ‘ঘৃণা’ অনুভব করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রিটেন এর আগেও আমাদের এই ভূমিতে বসতি স্থাপন ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল, এবার তারা সেটা আর করতে পারবে না। আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছায় নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখব।’

বিবিসির তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে সংঘটিত নজিরবিহীন আন্ত সীমান্ত হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার ২০ মাস পার হয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৫৪ হাজার ৯২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।