০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ৬ পরমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত

  • আপডেট সময়: ০৯:৫১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • 8

ছবিসূত্র: ইরনা/এএফপি


শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় ইরানের ছয়জন শীর্ষ পরমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম শুক্রবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেদুন আব্বাসি এবং ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচিও রয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে।

শুক্রবারের শুরুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিশ্চিত করেছেন, হামলায় বেশ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

এই হামলায় তেহরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে এবং গোটা অঞ্চলকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলা ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তেহরান ও এর আশপাশের একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ বিজ্ঞানীরা, যাদের ইরান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নজরদারি থেকে আড়ালে রেখেছিল। এখন তারা ইসরায়েল-ইরানের ছায়াযুদ্ধের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তেহরানজুড়ে গভীর শোক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

ইরনারা জানিয়েছে, শুধু বিজ্ঞানীরা নয়, কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাও এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানান, গোপন গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে—ইরান গোপনে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছিল এবং দুর্গনির্মিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছিল।

তিনি আরো দাবি করেন, নিহত বিজ্ঞানীরা পরমাণু বোমার মূল উপাদান তৈরির গোপন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ইরান বারবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই হামলার একদিন আগেই জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইরানকে তীব্রভাবে তিরস্কার করে।

এর জবাবে ইরান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা তৃতীয় একটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র চালু করবে এবং সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাবে—যা এই হামলার পথ প্রশস্ত করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ ও সুরক্ষিত বাংকারগুলোর পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, এখন কূটনীতির জন্য সময় হাতে নেই।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এককভাবে এই অভিযান চালালেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্ঞানের বাইরে এটা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে নিজেকে দূরে রেখেছে, তবে তেহরানকে পাল্টা হামলা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছে।

ইসরায়েলের আকাশসীমা বর্তমানে বেসামরিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ, এবং দেশজুড়ে সাইরেন বেজে চলেছে। পাল্টা ইরানি হামলার আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। এদিকে, ওমানে আসন্ন রবিবারে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে অনুষ্ঠেয় আলোচনা এখন অনিশ্চয়তার মুখে ঝুলে আছে।

সূত্র : সিএনএন

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ৬ পরমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত

আপডেট সময়: ০৯:৫১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ছবিসূত্র: ইরনা/এএফপি


শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় ইরানের ছয়জন শীর্ষ পরমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম শুক্রবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেদুন আব্বাসি এবং ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচিও রয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে।

শুক্রবারের শুরুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিশ্চিত করেছেন, হামলায় বেশ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

এই হামলায় তেহরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে এবং গোটা অঞ্চলকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলা ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তেহরান ও এর আশপাশের একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ বিজ্ঞানীরা, যাদের ইরান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নজরদারি থেকে আড়ালে রেখেছিল। এখন তারা ইসরায়েল-ইরানের ছায়াযুদ্ধের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তেহরানজুড়ে গভীর শোক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

ইরনারা জানিয়েছে, শুধু বিজ্ঞানীরা নয়, কিছু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাও এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানান, গোপন গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে—ইরান গোপনে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছিল এবং দুর্গনির্মিত ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছিল।

তিনি আরো দাবি করেন, নিহত বিজ্ঞানীরা পরমাণু বোমার মূল উপাদান তৈরির গোপন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ইরান বারবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই হামলার একদিন আগেই জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইরানকে তীব্রভাবে তিরস্কার করে।

এর জবাবে ইরান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা তৃতীয় একটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র চালু করবে এবং সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাবে—যা এই হামলার পথ প্রশস্ত করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ ও সুরক্ষিত বাংকারগুলোর পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, এখন কূটনীতির জন্য সময় হাতে নেই।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা এককভাবে এই অভিযান চালালেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্ঞানের বাইরে এটা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে নিজেকে দূরে রেখেছে, তবে তেহরানকে পাল্টা হামলা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছে।

ইসরায়েলের আকাশসীমা বর্তমানে বেসামরিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ, এবং দেশজুড়ে সাইরেন বেজে চলেছে। পাল্টা ইরানি হামলার আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। এদিকে, ওমানে আসন্ন রবিবারে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে অনুষ্ঠেয় আলোচনা এখন অনিশ্চয়তার মুখে ঝুলে আছে।

সূত্র : সিএনএন