ইরানে ইসরাইলের বর্বর হামলা স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আগ্রাসী পরিকল্পনা। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের পারমাণবিক উন্নয়নকে যুক্তরাষ্ট্র বক্র চোখে দেখে আসছে। ইরান পারমাণবিকসমৃদ্ধ দেশ পরিণত হলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন দখলদারিত্ব খর্ব হবার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর চক্ষু রাঙালেও মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেই এসেছ্ উপরন্তু মধ্রপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তার ঘাঁটি মজবুত করে এবং সুচতুরতার সাথে ইরানের দুর্বল স্থান বেছে নিয়ে হামলা করছে। যার ফলশ্রুতিতে ইরান কোনো প্রস্তুতি নেবার আগেই ইসরায়েল বিমানবাহিনি ও ড্রোন দিয়ে ইরানকে চমকে দিয়েছে।
জবারে ইরান ড্রোন সিক্ষেপ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্দান কিছু ড্রোন প্রতিহত করে দেয়। অন্যান্য ড্রোন ইসরায়েল ইন্টারসেপ্ট করে বলে দাবি করেছে।
ইরানের ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। তাদের সেনাপ্রদান ও আইআরজিসির প্রধান এবং অন্তত ৫ জন বৈজ্ঞানিক নিহত হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে ইসরায়েলের কাপুরুষোচিৎ গ্রাউন্ড আক্রমণে। ধরে নেয়া যায় মোশাদের গোয়েন্দারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ইরানি নেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করা ইসারায়েলি বিমানবাহিনির পক্ষে সম্ভব ছিল না। এটি ঘটেছে অনেকটা স্যাবোটেজ ঢংয়ে।
ভয়ংকর বিষয় হলো ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা টাগেট করে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে। যদিও তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার প্রকৃত প্রকৃত অবস্থানে আঘাত করতে পারেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি, র্প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ও আইআরজিসি প্রধান হুঁশিয়ারি বদলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডন্টে এরডোয়ান ইসরায়েলের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিযেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টতই ঘোষণা দিয়েদেছেন পরমাণু চুক্তি না করলে ইরান ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হবে। এখনেই মূল বিষয়টি নিহিত। তিনি ইরানকে চুক্তি করতে বাধ্য করে তাদের পদতলে করায়ত্ত করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনীদের পদতলে এসে যাবে।
ইরান ড্রোন আক্রমণের পর ইসরায়েলে অন্তত ১৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তার ফলাফল কী, ইসরায়েলের কতোটা ক্ষতি হয়েছে, সেট এখনও নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণে তেহরানের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে–এ কথা বলা যায়।
এখন আশংকা, মথ্যপ্রাচ্য ঘিরে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধে কিনা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেীদি আরব কড়া বার্তা দিয়েছে। কড়া বার্তার চেয়ে সৌদি আরব, মিশর ও তুরস্ক এগিয়ে এলে মার্কিন ও ইসরায়েলি জোটের নার্ভ দুর্বল হয়ে যাবে। মিশর তুরস্ক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগিয়ে আসবে কি?
পাকিস্তান ইসরাইলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের প্রতি।
আয়রন ডোমও রক্ষা করতে পারল না ইসরায়েলকে: পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান।
শনিবার ভোরে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যেসব স্থানে আঘাত হানা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকা, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক সদর দপ্তর এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবস্থিত।
মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানে।
এতে বেসামরিক হতাহত এবং দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি ইসরায়েলের বিখ্যাত বিমান-প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত আয়রন ডোম সিস্টেম রয়েছে, তার উপর নতুন করে নজরদারি শুরু করেছে।
১৯ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ওই আয়রন ডোম ভেঙে চোখের পলকে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে আঘাত হানে।
ক্লিপটি শুরু হয় বিকট শব্দে বেরিয়ে আসা প্রজেক্টাইল দিয়ে। তারপর আলোর ঝলক এবং আগুনের একটি গোলা বিকট শব্দে ভবনটিতে আঘাত করে।
এর পেছনে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকার মার্গানিট টাওয়ারটি দেখা যায়। যা আইডিএফ সদর দপ্তরের কাছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
ট্রাম্পের অন্য সুর: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের অবসান হওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এ পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। তাকে তিনি তার অভিমত জানিয়েছেন।
বলেছেন ইসরায়েল-ইরানের এই যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। পাশাপাশি তার (রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত।
এটা কি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্য স্ট্র্যাটেজি, নাকি সময় নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের কতোটা দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধবাজ ও নিষ্পাপ মানব ও মানব শিশু হন্তারক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে তো তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রিসের রাজধানি অ্যাথেন্সে। এতোটাই ভয় মার্কিনী ও ইসরায়েলিদের?
ট্রাম্প একদিকে বলছেন, ইরান চুক্তি করলেই ইসরায়েল আক্রমণ থামাবে। অন্য কথায়, এই চুক্তি কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য তিনি বলছেন, যে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রকেই অ্যামেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো কয়েক যুগ ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে।
অ্যামেরিকার কথায় ও কাজে একটা ‘কিন্তু’ থেকে যায়। থেকে যায়, আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের আশঙ্কা। ইসরায়েল ও অ্যামেরিকা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।