০৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

সোরিয়াসিস ও একজিমার আধুনিক চিকিৎসা

  • আপডেট সময়: ০৯:২০:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • 11

ডা. দিদারুল আহসান

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী দুরারোগ্য চর্মরোগ। এ রোগ সব বয়সী মানুষেরই হতে পারে। রোগটি কেন হয়ে থাকে, এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে প্রথমে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সেই স্থানে লালচে ভাব দেখা যায়। একইসঙ্গে ছোট ছোট গুটি, যা চামড়া থেকে সামান্য উঁচুতে থাকে। ক্রমে এগুলো বড় হতে পারে। মাছের আঁশের মতো উজ্জ্বল সাদা শুকনো চলটার মাধ্যমে গুটিগুলো ঢেকে থাকে। এ আঁশ ঘষে তুললে চামড়ায় লালচে ভাব দেখা যায় এবং তা থেকে রস ঝরতে পারে। সেখান থেকে সামান্য রক্তপাতও হতে পারে। অনেকের ধারণা, এটি ছোঁয়াচে রোগ। আসলে এটি কোনো ছোঁয়াচে নয়, এমনকি জীবাণুজনিত রোগও নয়। তাই একজন থেকে অন্য কারও হওয়ার আশঙ্কাও নেই। এ থেকে বড় কোনো শারীরিক সমস্যাও তৈরি হয় না।

রোগের উপসর্গ : ত্বকের যে কোনো স্থানে এ রোগ দেখা দিতে পারে। ত্বক ছাড়া নখেও দেখা দিতে পারে। ত্বকের যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় তা হলোÑ কনুই, হাঁটু, মাথার চামড়া, কোমরের নিচের মাঝখানের স্থান ইত্যাদি। তবে এটি শরীরের যে কোনো স্থানের ত্বকে হতে পারে। যথাসময়ে এ রোগের চিকিৎসা না করালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। যেমনÑ হাত ও পায়ের গিরায় ব্যথা হতে পারে, যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক আর্থোপ্যাথি। এ ছাড়া হাত ও পায়ের তালুতে পুঁজভর্তি দানা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় প্যাস্টুলার সোরিয়াসিস। আবার ছোট ছোট দানার আকারে লালচে আঁশযুক্ত সোরিয়াসিস, যা পুরো শরীরসহ হাত-পা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে, যাকে বলা হয় গাটেট সোরিয়াসিস। নখ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হলে নখের রঙ হলুদ হতে পারে এবং নখের গায়ে ছোট ছোট দানার আকারে ফোঁটা দেখা যায়। নখ পুরু হয়ে যেতে পারে, নখের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সোরিয়াসিসে আরেকটি জটিলতা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক এরিথ্রোডারমা। এতে পুরো শরীরের ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয় এবং ত্বক লালচে হয়ে ফুটে ওঠে। সারা দেহ থেকে শুকনো আঁশ ঝরতে থাকে। সোরিয়াসিস যখন মাথায় দেখা দেয়, তখন তাকে বলা হয় স্ক্যাল্প সোরিয়াসিস। তবে অনেকে এটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস) ভেবে ভুল করে থাকেন।

চিকিৎসা : চিকিৎসায় এটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব- এ কথা বলা সঙ্গত হবে না। তবে বর্তমানে এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি এসেছে, যাতে কিছুটা সফলতা পাওয়া যায়। অন্যদিকে একজিমা ত্বকের এক ধরনের অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ। রাসায়নিক পদার্থ, প্রোটিন, জীবাণু, ছত্রাক ইত্যাদির প্রভাবে একজিমা হতে পারে। কিছু কিছু একজিমা বংশগত। যেমনÑ এটপিক একজিমা, লাইকেন সিমপ্লেক্স। তবে বংশগত কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না সংস্পর্শ একজিমা, স্ক্যারিয়াস একজিমা, অপুষ্টিজনিত ও ছত্রাকজনিত একজিমা। অনেকের ধারণা, একজিমা সারলে হাঁপানি হয়। এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে এটপিক একজিমার সঙ্গে হাঁপানির সম্পর্ক আছে। দেখা গেছে, এটপিক একজিমায় আক্রান্ত রোগীর বংশে কারও হাঁপানি আছে। যাদের দীর্ঘদিনের একজিমা আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে আরও যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

লেখক: সিনিয়র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

সোরিয়াসিস ও একজিমার আধুনিক চিকিৎসা

আপডেট সময়: ০৯:২০:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ডা. দিদারুল আহসান

সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী দুরারোগ্য চর্মরোগ। এ রোগ সব বয়সী মানুষেরই হতে পারে। রোগটি কেন হয়ে থাকে, এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে প্রথমে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সেই স্থানে লালচে ভাব দেখা যায়। একইসঙ্গে ছোট ছোট গুটি, যা চামড়া থেকে সামান্য উঁচুতে থাকে। ক্রমে এগুলো বড় হতে পারে। মাছের আঁশের মতো উজ্জ্বল সাদা শুকনো চলটার মাধ্যমে গুটিগুলো ঢেকে থাকে। এ আঁশ ঘষে তুললে চামড়ায় লালচে ভাব দেখা যায় এবং তা থেকে রস ঝরতে পারে। সেখান থেকে সামান্য রক্তপাতও হতে পারে। অনেকের ধারণা, এটি ছোঁয়াচে রোগ। আসলে এটি কোনো ছোঁয়াচে নয়, এমনকি জীবাণুজনিত রোগও নয়। তাই একজন থেকে অন্য কারও হওয়ার আশঙ্কাও নেই। এ থেকে বড় কোনো শারীরিক সমস্যাও তৈরি হয় না।

রোগের উপসর্গ : ত্বকের যে কোনো স্থানে এ রোগ দেখা দিতে পারে। ত্বক ছাড়া নখেও দেখা দিতে পারে। ত্বকের যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় তা হলোÑ কনুই, হাঁটু, মাথার চামড়া, কোমরের নিচের মাঝখানের স্থান ইত্যাদি। তবে এটি শরীরের যে কোনো স্থানের ত্বকে হতে পারে। যথাসময়ে এ রোগের চিকিৎসা না করালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। যেমনÑ হাত ও পায়ের গিরায় ব্যথা হতে পারে, যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক আর্থোপ্যাথি। এ ছাড়া হাত ও পায়ের তালুতে পুঁজভর্তি দানা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় প্যাস্টুলার সোরিয়াসিস। আবার ছোট ছোট দানার আকারে লালচে আঁশযুক্ত সোরিয়াসিস, যা পুরো শরীরসহ হাত-পা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে, যাকে বলা হয় গাটেট সোরিয়াসিস। নখ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হলে নখের রঙ হলুদ হতে পারে এবং নখের গায়ে ছোট ছোট দানার আকারে ফোঁটা দেখা যায়। নখ পুরু হয়ে যেতে পারে, নখের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সোরিয়াসিসে আরেকটি জটিলতা দেখা দিতে পারে, যাকে বলা হয় সোরিয়াটিক এরিথ্রোডারমা। এতে পুরো শরীরের ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয় এবং ত্বক লালচে হয়ে ফুটে ওঠে। সারা দেহ থেকে শুকনো আঁশ ঝরতে থাকে। সোরিয়াসিস যখন মাথায় দেখা দেয়, তখন তাকে বলা হয় স্ক্যাল্প সোরিয়াসিস। তবে অনেকে এটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস) ভেবে ভুল করে থাকেন।

চিকিৎসা : চিকিৎসায় এটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব- এ কথা বলা সঙ্গত হবে না। তবে বর্তমানে এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি এসেছে, যাতে কিছুটা সফলতা পাওয়া যায়। অন্যদিকে একজিমা ত্বকের এক ধরনের অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ। রাসায়নিক পদার্থ, প্রোটিন, জীবাণু, ছত্রাক ইত্যাদির প্রভাবে একজিমা হতে পারে। কিছু কিছু একজিমা বংশগত। যেমনÑ এটপিক একজিমা, লাইকেন সিমপ্লেক্স। তবে বংশগত কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না সংস্পর্শ একজিমা, স্ক্যারিয়াস একজিমা, অপুষ্টিজনিত ও ছত্রাকজনিত একজিমা। অনেকের ধারণা, একজিমা সারলে হাঁপানি হয়। এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে এটপিক একজিমার সঙ্গে হাঁপানির সম্পর্ক আছে। দেখা গেছে, এটপিক একজিমায় আক্রান্ত রোগীর বংশে কারও হাঁপানি আছে। যাদের দীর্ঘদিনের একজিমা আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে আরও যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

লেখক: সিনিয়র চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ