১০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ইরান আক্রমণ: চরম মূল্য দিচ্ছে ইসরায়েল

  • আপডেট সময়: ১২:১৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • 9

হাসান জাহিদ

ইরানে ইসরাইলের বর্বর হামলা স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একটি আগ্রাসী পরিকল্পনা। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের পারমাণবিক উন্নয়নকে ‍যুক্তরাষ্ট্র বক্র চোখে দেখে আসছে। ইরান পারমাণবিকসমৃদ্ধ দেশ পরিণত হলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন দখলদারিত্ব খর্ব হবার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলই শুধু আক্রমণ করেনি, করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। মোশাদ ঢুকে গেছিল ইরানের ভেতরে। দুইজন ধরাও পড়েছে। ইরান আগে আক্রমণ করেনি; করেছে ইসরায়েল। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের নজির তো এখনও নেই। ইরানের পেছনে কয়েক যুগ ধরে লেগে আছে য়ুক্তরারষ্ট্র। যেমন তারা ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান ধ্বংস করেছে। জর্ডানকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে।

সরাসরি কেউ নেই ইরানের সাথে। ইসরায়েলের মোসাদ চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ইরানের নেতাদের মারতে পারে। এটা তাদের মজ্জাগত। গাজায় ত্রাণসামগ্রী আটকে দিয়েছিলো তারা। গ্রেটা থুনবার্গকে ছেড়ে দিয়েছিলো হজম করতে পারবে না বলে। ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার শিশুকে মেরে ফেলেছে, পঙ্গু করে দিয়েছে চিরতরে। একজন বাবা মৃত ছেলে বা মেয়ের লাশ বহন করেছে। সেই তুলনায় ইরানের কিছু সংখ্যক ব্যালিস্টিক মিসাইল তো ইসরায়েলের প্রাপ্য।

এদিকে ইরান নেমেছে ঘরের শত্রুদের ধরতে। কথায় আছে, ঘরের ইঁদুর বেড়া কাটে। তেমনি মার্কিন ও মোসাদের তৎপরতায় ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী, সেনাবাহিনি প্রধানসহ অন্তত নয় জনকে তারা হত্যা করেছে। এটা যুদ্ধ নয়; কাপুরুষোচিৎ হামলা। বিকৃত মনোবাসনা পূরণের খতরনাক নমুনা।

ট্রাম্প একেক সময় একেক কথা বলছেন। তিনি কীভাবে পারমাণবিক ভারসাম্য রক্ষা করবেন? তিনি নিজেই তো ভারসাম্যহীন। আর নেতানিয়াহু এ যুগের রক্তচোষা ড্রাকুলা। ইরানের ভাগ্যে যা-ই থাকুক না কেন, দুই সাইকোর নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমরা। একজন একবার গ্রীসে পালায়, আরেকবার আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকে। ফের প্রকাশ্যে এসে হুমকি দেয়। এদেরকে থামানো দরকার।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর চক্ষু রাঙালেও মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেই এসেছে, উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তার ঘাঁটি মজবুত করে এবং সুচতুরতার সাথে ইরানের দুর্বল স্থান বেছে নিয়ে হামলা করছে। যার ফলশ্রুতিতে ইরান কোনো প্রস্তুতি নেবার আগেই ইসরায়েল বিমানবাহিনি ও ড্রোন দিয়ে ইরানকে চমকে দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধান কাজ হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা। কাজটি সহজ নয় মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পারমাণবিক স্ফনাগুলো মাটির গভীরে সুরক্ষিত–মাটি থেকে অন্তত ৬০ ফিট গভীরে প্রোথিত। এগুলো ধ্বংস করার প্রযুক্তি বা বিশেষ বোমা ইসরায়েলের নেই। তারা একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা। কেননা, ইসরাইল থেকে অন্তত ৫টি দেশ পেরিয়ে প্রস্তুতি রিফুয়েলিং-এর সুযোগ তারা পাচ্ছে। এই ৫ দেশে মার্কিন ঘাঁটি ব্যবহার করার। বিমান আক্রমণে ইরানের এই সুবিধা নেই। তবে দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল, হাইপারসোনিক মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে ইরান আক্রমণের জবাব দিয়ে যাচ্ছে। এই মিসাইলগুলো উড়ে যাচ্ছে ইরাক, লেবানন, সিরিয়া জর্ডান প্রভৃতি দেশ। ইরানের পথম দুর্বল আক্রমণে জর্ডান কিছু ইরানি মিসাইল ভূপাতিত করলেও এখন কিন্তু এইসব মুসলিম দেশ তাদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে ইরানি মিসাইল উড়ে যেতে দেখলেও নীরব থাকছে।

ইসরাইলের আক্রমণের জবারে ইরান ড্রোন সিক্ষেপ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান কিছু ড্রোন প্রতিহত করে দেয়। অন্যান্য ড্রোন ইসরায়েল ইন্টারসেপ্ট করে বলে দাবি করেছে।

ইরানের ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। তাদের সেনাপ্রধান ও আইআরজিসির প্রধান বৈজ্ঞানিকসহ অন্তত ৯ জন নিহত হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে ইসরায়েলের কাপুরুষোচিৎ গ্রাউন্ড আক্রমণে। ধরে নেয়া যায় মোসাদের গোয়েন্দারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ইরানি নেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করা ইসারায়েলি বিমানবাহিনির পক্ষে সম্ভব ছিল না। এটি ঘটেছে অনেকটা স্যাবোটেজ ঢংয়ে।

ভয়ংকর বিষয় হলো ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা টাগেট করে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে। যদিও তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার প্রকৃত প্রকৃত অবস্থানে আঘাত করতে পারেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি,  র্প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ও আইআরজিসি প্রধান হুঁশিয়ারি বদলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডন্টে এরডোয়ান ইসরায়েলের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন।

রাশিয়া ও চীন ইসরায়েলি হামলাকে সুনজরে দেখছে না। তুরস্ক ইরানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, চীনা কার্গো বিমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার ও মিসাইল নিয়ে ইরানে অবতরণ করেছে। এটি অসমর্থিত সূত্র থেকে প্রকাশিত হলেও এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইরানি কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, পাকিস্তান ইসরায়েলে পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাত হানবে। এই আশাবাদ হয়তো অনেকটাই সুদূরপরাহত। তবে যুদ্ধের বিষয়ে কোনো সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। পাকিস্তান অবশ্য ইরানের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সম্ভবত মোসাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য। কেননা, পাকিস্তান প্রকাশ্যে ইরানের হয়ে মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা কামনা করেছে।

যারা ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজার ধ্বংসস্তূপ দেখেছেন, সেই ধ্বংস্তূপের সাথে তেল আবিব ও হাইফার ধ্বংস্তূপ এখন মিলিয়ে নিতে পারবেন। এই কাণ্ড ঘটিয়েছে ইরান। বিশেষত গত চারদিনে ইসরায়েল নিজেদের ধ্বংস হতে দেখেছে। নেতানিয়াহু চাপাবাজি অব্যাহত রাখলেও ইসরায়েলি জনগণ ও যুদ্ধবাজরা এখন অনেকটাই ক্লান্ত। ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি চাইলেও ইরান তাদের শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে যুগপৎ আহত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। কথা হলো, ইরানি মিসাইল ও ড্রোন মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। সেইক্ষেত্রে তাদেরকে স্থলপথে আক্রমণ করতে হবে। কিন্তু এতোদূরের পথ পাড়ি দিয়ে সেই আক্রমণ সম্ভব হবে না। মিশর এগিয়ে এলে তারা সিনাই দিয়ে ইসরায়েলে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু মিশর এতোটাই নীরব যে এরকম কোনো দেশ ভূ-মানচিত্রে আছে কিনা, তা নিয়েই ঘুরাপাক খেতে হবে। সৌদি আরব যথারীতি ইসরায়েলের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে কাজ সেরে চুপচাপ বসে আছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টতই ঘোষণা দিয়েদেছেন পরমাণু চুক্তি না করলে ইরান ভয়াবহ  আক্রমণের শিকার হবে। এখনেই মূল বিষয়টি নিহিত। তিনি ইরানকে চুক্তি করতে বাধ্য করে তাদের পদতলে করায়ত্ত করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য মার্কিনীদের পদতলে এসে যাবে।

ইরান ড্রোন আক্রমণের পর ইসরায়েলে অন্তত কয়েকশ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তার ফলাফল কী, ইসরায়েলের কতোটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। হাইফা, মধ্য ইসরায়েল ও তেল আবিবের কিছু অংশ গাজার মতোই ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণে তেহরানের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে–এ কথা বলা যায়।

এখন আশংকা, মথ্যপ্রাচ্য ঘিরে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাঁধে কিনা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেীদি আরব কড়া বার্তা দিয়েছে, একথা আগেই বলেছি। কড়া বার্তার চেয়ে সৌদি আরব, মিশর ও তুরস্ক এগিয়ে এলে মার্কিন ও ইসরায়েলি জোটের নার্ভ দুর্বল হয়ে যাবে। মিশর  তুরস্ক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগিয়ে আসবে কি?

পাকিস্তান ইসরাইলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের প্রতি।

আয়রন ডোমও রক্ষা করতে পারল না ইসরায়েলকে: পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান।

শনিবার ভোরে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যেসব স্থানে আঘাত হানা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকা, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক সদর দপ্তর এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবস্থিত।

মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে বেসামরিক হতাহত এবং দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি ইসরায়েলের বিখ্যাত বিমান-প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত আয়রন ডোম সিস্টেম রয়েছে, তার ওপর নতুন করে নজরদারি শুরু করেছে ইসরায়েল।

একটা ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ওই আয়রন ডোম ভেঙে চোখের পলকে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে আঘাত হানে।

ক্লিপটি শুরু হয় বিকট শব্দে বেরিয়ে আসা প্রজেক্টাইল দিয়ে। তারপর আলোর ঝলক এবং আগুনের একটি গোলা বিকট শব্দে ভবনটিতে আঘাত করে।

এর পেছনে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকার মার্গানিট টাওয়ারটি দেখা যায়। যা আইডিএফ সদর দপ্তরের কাছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

ট্রাম্পের অন্য সুর: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের অবসান হওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এ পোস্টে একথা  জানিয়েছেন  বলে নিশ্চিত করেছে কাতার-ভিত্তিক  সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

তাকে তিনি তার অভিমত জানিয়েছেন।বলেছেন ইসরায়েলি-ইরানি যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। এখন কেন তিনি এসব কথা বলছেন!

পাশাপাশি তার (রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। এটা কি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্য স্ট্র্যাটেজি, নাকি সময় নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের কতোটা দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধবাজ ও নিষ্পাপ মানব ও মানব শিশু হন্তারক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে তো তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রিসের রাজধানি অ্যাথেন্সে। এতোটাই ভয় মার্কিনী ও ইসরায়েলিদের?

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, ইরান চুক্তি করলেই ইসরায়েল আক্রমণ থামাবে। অন্য কথায়, এই চুক্তি কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য না দখলদারিত্বের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রকেই অ্যামেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো কয়েক যুগ ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে।

অ্যামেরিকার কথায় ও কাজে একটা ‘কিন্তু’ থেকে যায়। থেকে যায়, আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের আশঙ্কা। ইসরায়েল ও অ্যামেরিকা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।


https://www.youtube.com/watch?v=tSG_mXzVyso


ট্রাম্পের নয়া ফিকির: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো ইরানে ইসরায়েলের হামলায় জোরালো সমর্থন জানাচ্ছে, কখনো তিনি নিজের এই অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, আবার কিছু সময় পর আবারও সমর্থনে ফিরে আসছেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে তার এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তার অবস্থানকে অস্পষ্ট করে তুলেছে। সংঘাত যতই বাড়ছে, ততই অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এসব হামলা ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেই’ চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলকে দমাতে হবে মনস্তাত্ত্বিক আঘাত হেনে শক্তিমত্তায় ইসরায়েল অপ্রতিরোধ্য, স্থল, জল, আকাশে। ইসরায়েলের সাথে আছে বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী, কৌশলী ও শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, তারা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধও করছে। অর্থ এই যে, ইসরায়েলকে কাবু করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে হবে। সেটা কি ঠেকানো সম্ভব, বিশ্বের কোন্ সাগরে বা দ্বীপে কিংবা রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি নেই?

তাদের ভূতুড়ে অবস্থান সব স্থানেই। তারা ইচ্ছে করলেই লেবানন, ইরাক বা ইয়েমেনে বিমান আক্রমণ শানাতে পারে। লোহিত সাগর তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ক্ষেপণাস্ত্র ও অগণিত সৈন্যে ঠাঁসা। লোহিত সাগরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য।

‘ভারত মহাসাগরে মার্কিন গোপন ঘাঁটি কেন?’ যমুনা টিভি’র একটি ইউটিউব চ্যানেলে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন এবিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দিয়াগো গার্সিয়া একটি জনমানবহীন দ্বীপ। কাগজে-কলমে এটি ব্রিটেনের অধীনস্থ থাকলেও বিগত পাঁচদশক ধরে এটি মার্কিনীদেরই ঘাঁটি। এই দ্বীপে রয়েছে পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত জাহাজ,বিমানবাহী রণতরী আর যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি। বঙ্গোপসাগরের সতেরোশ’ মাইল দূরের এই ঘাঁটি থেকে অল্পসময়ের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো প্রান্তে বিমান হামলা চালানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্ধশতকের চুক্তি শেষ হয় ২০১৬ সালে। তখন এই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত করা হয়।

১৯৭০ সালেই এই দ্বীপ মার্কিনীদের দখলে চলে আসে। এই দ্বীপ আসলে রহস্যে ঢাকা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ষাট-সত্তর দশকেই এই দ্বীপকে গোপন ঘাঁটি বানিয়ে রাখে। অভিযোগ আছে যে, এই দ্বীপটিকে গোয়ান্তানামো কারাগারের মতোই ব্যবহারের।

২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের শুরুতে এই দ্বীপ থেকেই বিমান হামলা চালানো হয়। ২০১৮ সালে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন ফ্রিডম অব নেভিগেশন মিশনে এই দ্বীপ থেকেই বি ফিফটি টু বোমারু বিমান উড্ডয়ন করে। ২০২০ সালে কাশেম সুলায়মানীকে হত্যার জেরে ইরান হুমকি দিলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ হয়। তখন মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা দানে এই দ্বীপে ছয়টি বোমারু বিমান পাঠানো হয়।

আশির দশকের মধ্যে দিয়াগো গার্সিয়া এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুইটি শক্তিশালী ঘাঁটির একটি হয়ে ওঠে। অন্যটি হলো গুয়াম। সপ্তম নৌবহরের আওতায় বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। পশ্চিম প্রশান্ত মহসাগরের দ্বীপ গুয়াম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর একটি গুয়াম। ৫৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির ৩৯ শতাংশ মার্কিন সামরিক স্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যুগান্তকারী সৃষ্টির একটি থাড (Thaad) বসানো হয়েছে গুয়ামে। দুটি দেয়া হয়েছে ইসরায়েলকে। সাথে প্যাট্রিয়ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

ইসরায়েল জানে, তারা সর্বকালের সবচাইতে জঘন্য বর্বরতার নজির রাখছে। এটা করছে তারা ভীতি থেকে। ইসরায়েলের এই ভয়টাকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধা ও তাদের মিত্রদের কাজে লাগাতে হবে। মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোক বা না হোক; অন্তত হুমকি-ধামকির কাজটা তাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে। যে কাজটি খামেনি করে যাচ্ছেন।

আর মাঝেমধ্যে মিসাইল ও ড্রোন বৃষ্টি ঝরাতে হবে। সেটা যেখান থেকেই আসুক। পালাবদল করে হুথি, হামাস, হিজবুল্লাহ, মিত্র প্রতিরোধযোদ্ধা, তথা আল কাসাম ব্রিগেড, আল কুদস, হিজবুল্লাহ, ইরাকি মিলিশিয়া প্রভৃতি।

এর সাথে সাথে তুরস্ক, সৌদি, মিশর  মাঝেমধ্যে সরব হলে অনেকটাই ধাক্কা খাবে ইসরায়েলের থিংক-ট্যাংক।

মোড়ল মুসলিম দেশগুলো এই ভোটের লাভজনক দিকটিকে কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে। ইসরায়েল মুখোশ বদলাচ্ছে আর অ্যামেরিকা ইরান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। কোনো কারণে যুদ্ধ শুরু হলে অ্যামেরিকা দিয়াগো গার্সিয়াকে বিশ্ববাসীর আরো নাগালের বাইরে নিয়ে, রহস্যময় আক্রমণ করে ইরানকে বেসামাল করার চেষ্টা করবে। এরকম একটি ট্র্যাজিক পরিণতি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই মিশর ১৯৭৩ সালের মতো অগ্রসর হচ্ছে সিনাইয়ের দিকে।

 ইসরায়েল কেন শক্তিশালী? মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে ছোট্ট একটি ‘দেশ’ ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে যায় ব্রিটেন, আর ইহুদিরা ঘোষণা করে নিজস্ব রাষ্ট্র ইসরায়েলের। তখন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র শুধু টিকেই থাকেনি, বরং তাদের পরিধি আরো বাড়িয়েছে। গত ৭৫ বছরে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে একদিকে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।

– ইসরায়েলের এতটা শক্তির পেছনে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত অ্যামেরিকার একটা বড় অবদান আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অ্যামেরিকার বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ পেয়ে আসছে ইসরায়েল।

– “ইসরায়েলের জন্মই হয়েছে মূলত পরাশক্তিদের বিশাল সমর্থনে যেটা ইসরায়েলের ক্ষমতায়নে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের আওতাধীন মিডলইস্ট ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ড. সেইয়েদ আলী আলাভি।

– ইসরায়েলের প্রতিবেশী মিশর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন – সব কয়টি দেশ শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি ইসরায়েলের উত্থান। প্রতিবেশীদের সাথে তিনটি পুরোদমের যুদ্ধ (১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩) এবং আরো বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল।

– অ্যামেরিকার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস-এর রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েলের প্রযুক্তিকে অত্যাধুনিক করতে প্রভাব রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ অর্থবছরে যৌথ সামরিক প্রকল্পে ৫২ কোটি মার্কিন ডলারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস যার মাঝে ৫০ কোটি শুধু মিসাইল তৈরির খাতের জন্য।

-অ্যামেরিকার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ ইসরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান করেছে বলে মনে করেন তুরস্কের বিশেষজ্ঞ মিজ বুশরা নূর ওযঘুলার আকতেল, যিনি ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক। মিস আকতেল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন।

মিজ আকতেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, এভাবেই ইসরায়েল ‘স্টার্ট আপ রাষ্ট্র’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

– শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে। ইসরায়েলের চমক জাগানো সাফল্যগুলোর মধ্য অন্যতম হচ্ছে তাদের কৃষি খাত।

ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে ইসরায়েল ‘রাষ্ট্রে’র যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে পানি এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল। কৃষি-ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরনের শস্য ফলানোর সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি।

– নেতৃত্বের দিক দিয়ে শুরু থেকেও বিচক্ষণতা দেখিয়েছে ইসরায়েল, যেটা তাদের এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

দেশটির নেতৃত্ব সামরিক, কৃষি, শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করেছে।

আকতেলের মতে তাদের নেতৃত্বের স্টাইল এবং নীতি নির্ধারণ একটু ভিন্ন ধরনের।

“তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়” বলেন মিজ আকতেল।

ইসরায়েলের ইহুদিরা মূলত এ অঞ্চলে এসেছিল বাইরের ভূখণ্ড, বিশেষত ইয়োরোপ থেকে।

 মনস্তাত্বিক দিক: একটি নতুন গবেষণায় ১৩ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরের দিনগুলিতে উচ্চ মাত্রার মানসিক যন্ত্রণা এবং উদ্বেগের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন রেইচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের বারুচ ইভচার স্কুল অব সাইকোলজির অধ্যাপক বোয়াজ বেন-ডেভিড, ডক্টর ওরটাল শিমন-রাজ এবং চেলেট ব্রেসলার, অ্যাশকেলন কলেজের ডক্টর লিয়া রিং এবং হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যুবাল পালগি। ৬০০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কের নমুনার ওপর ভিত্তি করে করা এই গবেষণাটি আক্রমণের তাৎক্ষণিক মানসিক পরিণতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করে।

স্টাডিতে বলা হয়েছে:

‘According to the researchers, these findings underscore the need for early identification of traumatic reactions and timely therapeutic intervention to mitigate the risk of long-term psychological harm. The study also highlights the widespread emotional distress experienced by Israel’s adult population on the night of the first Iranian attack, emphasizing the need for tailored psychological interventions during times of crisis.’

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে তেল আবিবে সাদ্দাম হোসেনের স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান শুরু করে ইরাক। পরের মাসে, প্রায় ৪২টি স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়, মূলত তেল আবিব এবং হাইফা শহরে। এই আক্রমণে ইসরায়েলের জন্য একটি ক্ষতিকর দিক ছিল ট্রমা। ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে ভাইবোন যৌন ক্রীড়ায় লিপ্ত হয় বুদ্ধিশুদ্ধি ভোঁতা হয়ে গিয়ে।

ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য: দখলদারিত্ব ছাড়াও ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য ফিলিস্তিনি শিশুদের মেরে ফেলা বা পঙ্গু করে দেয়া যাতে তারা ভবিষ্যতে বড় হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না যেতে পারে। এটি ইসরায়েলি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম একটি প্রমাণ যে, তারা সমূলে উৎপাটিত করতে চায় ফিলিস্তিনিদের।

আরববিশ্বের, বিশেষত ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী যোদ্ধাদের ইসরায়েলের দুর্বল মনস্তাত্ত্বিক দিক ও ভয়-ভীতিটাকে কাজে লাগাতে হবে বিভিন্ন দিক থেকে ড্রোন, ভারী অস্ত্র, রকেট, মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণ চালিয়ে।

সবকিছুই করতে হবে মুসলিম দেশগুলোকে। রাশিয়া-চীন ফিলিস্তিনের পক্ষে যতই অটল অবস্থানের ঘোষণা দিক না কেন, ফিলিস্তিনিদের হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবার বিষয়ে তারা পরীক্ষিত বন্ধু নয়। ইয়োরোপের অনেক দেশ ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের বসতে হবে ইসরায়েলের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরিতে।

তবে, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এক হয়ে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি বা চুক্তিতে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চুক্তিতে গাজা, রাফা ও পশ্চিম তীর অন্তত ফিলিস্তিনিদের যেন নিরাপদ আবাসস্থল হয় সেই চেষ্টা চালাতে হবে যে কোনো উপায়ে।

আর ইরান যদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেমন, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর ও সৌদি আরব থেকে অবশ্যই প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সাহায্য আসতে হবে। যেমনটি হয়েছে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে। ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের মদদ ও সাহায্য পেয়ে পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে এখনও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

সবশেষে, বলতে চাই, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের দামামা বাজার সাথে বিশ্বের স্থিতিশীলতার একটি বিষয় রয়েছে। ইরানের হরমুজ প্রণালী বিশ্বের আমদানি-রপ্তানির একটি অন্যতম ক্ষেত্র। এখানে জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে বা বাধাগ্রস্ত হলে তেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে মন্দা দেখা দেবে।

ইরানকে যদি নিতান্তই চুক্তি করতে হয় তবে, তাদের প্রধান দাবি হবে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের জন্য আলাদা ভূখণ্ড দাবি। এই আলোচনায় ফিলিস্তিনও যোগ দিবে। অন্য শর্ত হবে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নির্বিবাদে চালিয়ে নিতে দিতে হবে। ইসরায়েলের কোনো শর্ত থাকতে পারে না। তারা যুগ যুগ ধরে, এবং বিশেষত সাম্প্রতিককালে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীরে, সেসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাদেরকে বিশ্বদরবারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

আপাতত ইরানের করণীয়: ঘরের ইঁদুরগুলোকে মারতে হবে। অর্থাৎ, ইরানের মাটি থেকে মোসাদ এজেন্টদের নির্মূল করতে হবে।

-একইসাথে ইসরায়েলে আক্রমণ অব্যাহত রাখতে হবে

-ট্রাম্পের পাগলামির দিকে খেয়াল রাখতে হবে

-ইসরায়েলি বিমান ঘায়েল করার কৌশলগত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে

 

*হাসান জাহিদ, কথাশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও পরিবেশবিদ

সূত্র:

https://www.news-medical.net/news/20250326/Study-reveals-surge-in-anxiety-and-distress-following-the-Iranian-attack.aspx

BBC: https://www.bbc.com/bengali/articles/cw01w1pp9ljo

Jamuna TV

 

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ইরান আক্রমণ: চরম মূল্য দিচ্ছে ইসরায়েল

আপডেট সময়: ১২:১৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

হাসান জাহিদ

ইরানে ইসরাইলের বর্বর হামলা স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একটি আগ্রাসী পরিকল্পনা। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের পারমাণবিক উন্নয়নকে ‍যুক্তরাষ্ট্র বক্র চোখে দেখে আসছে। ইরান পারমাণবিকসমৃদ্ধ দেশ পরিণত হলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন দখলদারিত্ব খর্ব হবার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলই শুধু আক্রমণ করেনি, করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। মোশাদ ঢুকে গেছিল ইরানের ভেতরে। দুইজন ধরাও পড়েছে। ইরান আগে আক্রমণ করেনি; করেছে ইসরায়েল। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের নজির তো এখনও নেই। ইরানের পেছনে কয়েক যুগ ধরে লেগে আছে য়ুক্তরারষ্ট্র। যেমন তারা ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান ধ্বংস করেছে। জর্ডানকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে।

সরাসরি কেউ নেই ইরানের সাথে। ইসরায়েলের মোসাদ চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ইরানের নেতাদের মারতে পারে। এটা তাদের মজ্জাগত। গাজায় ত্রাণসামগ্রী আটকে দিয়েছিলো তারা। গ্রেটা থুনবার্গকে ছেড়ে দিয়েছিলো হজম করতে পারবে না বলে। ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার শিশুকে মেরে ফেলেছে, পঙ্গু করে দিয়েছে চিরতরে। একজন বাবা মৃত ছেলে বা মেয়ের লাশ বহন করেছে। সেই তুলনায় ইরানের কিছু সংখ্যক ব্যালিস্টিক মিসাইল তো ইসরায়েলের প্রাপ্য।

এদিকে ইরান নেমেছে ঘরের শত্রুদের ধরতে। কথায় আছে, ঘরের ইঁদুর বেড়া কাটে। তেমনি মার্কিন ও মোসাদের তৎপরতায় ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী, সেনাবাহিনি প্রধানসহ অন্তত নয় জনকে তারা হত্যা করেছে। এটা যুদ্ধ নয়; কাপুরুষোচিৎ হামলা। বিকৃত মনোবাসনা পূরণের খতরনাক নমুনা।

ট্রাম্প একেক সময় একেক কথা বলছেন। তিনি কীভাবে পারমাণবিক ভারসাম্য রক্ষা করবেন? তিনি নিজেই তো ভারসাম্যহীন। আর নেতানিয়াহু এ যুগের রক্তচোষা ড্রাকুলা। ইরানের ভাগ্যে যা-ই থাকুক না কেন, দুই সাইকোর নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমরা। একজন একবার গ্রীসে পালায়, আরেকবার আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকে। ফের প্রকাশ্যে এসে হুমকি দেয়। এদেরকে থামানো দরকার।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর চক্ষু রাঙালেও মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেই এসেছে, উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তার ঘাঁটি মজবুত করে এবং সুচতুরতার সাথে ইরানের দুর্বল স্থান বেছে নিয়ে হামলা করছে। যার ফলশ্রুতিতে ইরান কোনো প্রস্তুতি নেবার আগেই ইসরায়েল বিমানবাহিনি ও ড্রোন দিয়ে ইরানকে চমকে দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধান কাজ হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা। কাজটি সহজ নয় মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পারমাণবিক স্ফনাগুলো মাটির গভীরে সুরক্ষিত–মাটি থেকে অন্তত ৬০ ফিট গভীরে প্রোথিত। এগুলো ধ্বংস করার প্রযুক্তি বা বিশেষ বোমা ইসরায়েলের নেই। তারা একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা তাদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা। কেননা, ইসরাইল থেকে অন্তত ৫টি দেশ পেরিয়ে প্রস্তুতি রিফুয়েলিং-এর সুযোগ তারা পাচ্ছে। এই ৫ দেশে মার্কিন ঘাঁটি ব্যবহার করার। বিমান আক্রমণে ইরানের এই সুবিধা নেই। তবে দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল, হাইপারসোনিক মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে ইরান আক্রমণের জবাব দিয়ে যাচ্ছে। এই মিসাইলগুলো উড়ে যাচ্ছে ইরাক, লেবানন, সিরিয়া জর্ডান প্রভৃতি দেশ। ইরানের পথম দুর্বল আক্রমণে জর্ডান কিছু ইরানি মিসাইল ভূপাতিত করলেও এখন কিন্তু এইসব মুসলিম দেশ তাদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে ইরানি মিসাইল উড়ে যেতে দেখলেও নীরব থাকছে।

ইসরাইলের আক্রমণের জবারে ইরান ড্রোন সিক্ষেপ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জর্ডান কিছু ড্রোন প্রতিহত করে দেয়। অন্যান্য ড্রোন ইসরায়েল ইন্টারসেপ্ট করে বলে দাবি করেছে।

ইরানের ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। তাদের সেনাপ্রধান ও আইআরজিসির প্রধান বৈজ্ঞানিকসহ অন্তত ৯ জন নিহত হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে ইসরায়েলের কাপুরুষোচিৎ গ্রাউন্ড আক্রমণে। ধরে নেয়া যায় মোসাদের গোয়েন্দারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ইরানি নেতাদের খুঁজে খুঁজে বের করা ইসারায়েলি বিমানবাহিনির পক্ষে সম্ভব ছিল না। এটি ঘটেছে অনেকটা স্যাবোটেজ ঢংয়ে।

ভয়ংকর বিষয় হলো ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা টাগেট করে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছে। যদিও তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার প্রকৃত প্রকৃত অবস্থানে আঘাত করতে পারেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি,  র্প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ও আইআরজিসি প্রধান হুঁশিয়ারি বদলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডন্টে এরডোয়ান ইসরায়েলের আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন।

রাশিয়া ও চীন ইসরায়েলি হামলাকে সুনজরে দেখছে না। তুরস্ক ইরানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, চীনা কার্গো বিমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার ও মিসাইল নিয়ে ইরানে অবতরণ করেছে। এটি অসমর্থিত সূত্র থেকে প্রকাশিত হলেও এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইরানি কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, পাকিস্তান ইসরায়েলে পারমাণবিক অস্ত্রের আঘাত হানবে। এই আশাবাদ হয়তো অনেকটাই সুদূরপরাহত। তবে যুদ্ধের বিষয়ে কোনো সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। পাকিস্তান অবশ্য ইরানের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সম্ভবত মোসাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য। কেননা, পাকিস্তান প্রকাশ্যে ইরানের হয়ে মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা কামনা করেছে।

যারা ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজার ধ্বংসস্তূপ দেখেছেন, সেই ধ্বংস্তূপের সাথে তেল আবিব ও হাইফার ধ্বংস্তূপ এখন মিলিয়ে নিতে পারবেন। এই কাণ্ড ঘটিয়েছে ইরান। বিশেষত গত চারদিনে ইসরায়েল নিজেদের ধ্বংস হতে দেখেছে। নেতানিয়াহু চাপাবাজি অব্যাহত রাখলেও ইসরায়েলি জনগণ ও যুদ্ধবাজরা এখন অনেকটাই ক্লান্ত। ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি চাইলেও ইরান তাদের শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে যুগপৎ আহত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। কথা হলো, ইরানি মিসাইল ও ড্রোন মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। সেইক্ষেত্রে তাদেরকে স্থলপথে আক্রমণ করতে হবে। কিন্তু এতোদূরের পথ পাড়ি দিয়ে সেই আক্রমণ সম্ভব হবে না। মিশর এগিয়ে এলে তারা সিনাই দিয়ে ইসরায়েলে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু মিশর এতোটাই নীরব যে এরকম কোনো দেশ ভূ-মানচিত্রে আছে কিনা, তা নিয়েই ঘুরাপাক খেতে হবে। সৌদি আরব যথারীতি ইসরায়েলের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে কাজ সেরে চুপচাপ বসে আছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টতই ঘোষণা দিয়েদেছেন পরমাণু চুক্তি না করলে ইরান ভয়াবহ  আক্রমণের শিকার হবে। এখনেই মূল বিষয়টি নিহিত। তিনি ইরানকে চুক্তি করতে বাধ্য করে তাদের পদতলে করায়ত্ত করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাহলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য মার্কিনীদের পদতলে এসে যাবে।

ইরান ড্রোন আক্রমণের পর ইসরায়েলে অন্তত কয়েকশ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তার ফলাফল কী, ইসরায়েলের কতোটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। হাইফা, মধ্য ইসরায়েল ও তেল আবিবের কিছু অংশ গাজার মতোই ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণে তেহরানের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে–এ কথা বলা যায়।

এখন আশংকা, মথ্যপ্রাচ্য ঘিরে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাঁধে কিনা। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেীদি আরব কড়া বার্তা দিয়েছে, একথা আগেই বলেছি। কড়া বার্তার চেয়ে সৌদি আরব, মিশর ও তুরস্ক এগিয়ে এলে মার্কিন ও ইসরায়েলি জোটের নার্ভ দুর্বল হয়ে যাবে। মিশর  তুরস্ক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগিয়ে আসবে কি?

পাকিস্তান ইসরাইলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের প্রতি।

আয়রন ডোমও রক্ষা করতে পারল না ইসরায়েলকে: পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান।

শনিবার ভোরে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যেসব স্থানে আঘাত হানা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকা, যেখানে ইসরায়েলের সামরিক সদর দপ্তর এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবস্থিত।

মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ইরানের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে বেসামরিক হতাহত এবং দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি ইসরায়েলের বিখ্যাত বিমান-প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত আয়রন ডোম সিস্টেম রয়েছে, তার ওপর নতুন করে নজরদারি শুরু করেছে ইসরায়েল।

একটা ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ওই আয়রন ডোম ভেঙে চোখের পলকে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে আঘাত হানে।

ক্লিপটি শুরু হয় বিকট শব্দে বেরিয়ে আসা প্রজেক্টাইল দিয়ে। তারপর আলোর ঝলক এবং আগুনের একটি গোলা বিকট শব্দে ভবনটিতে আঘাত করে।

এর পেছনে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকার মার্গানিট টাওয়ারটি দেখা যায়। যা আইডিএফ সদর দপ্তরের কাছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

ট্রাম্পের অন্য সুর: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের অবসান হওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এ পোস্টে একথা  জানিয়েছেন  বলে নিশ্চিত করেছে কাতার-ভিত্তিক  সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।

তাকে তিনি তার অভিমত জানিয়েছেন।বলেছেন ইসরায়েলি-ইরানি যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। এখন কেন তিনি এসব কথা বলছেন!

পাশাপাশি তার (রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। এটা কি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্য স্ট্র্যাটেজি, নাকি সময় নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছেন ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের কতোটা দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধবাজ ও নিষ্পাপ মানব ও মানব শিশু হন্তারক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে তো তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রিসের রাজধানি অ্যাথেন্সে। এতোটাই ভয় মার্কিনী ও ইসরায়েলিদের?

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, ইরান চুক্তি করলেই ইসরায়েল আক্রমণ থামাবে। অন্য কথায়, এই চুক্তি কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য না দখলদারিত্বের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাষ্ট্রকেই অ্যামেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো কয়েক যুগ ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে।

অ্যামেরিকার কথায় ও কাজে একটা ‘কিন্তু’ থেকে যায়। থেকে যায়, আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের আশঙ্কা। ইসরায়েল ও অ্যামেরিকা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।


https://www.youtube.com/watch?v=tSG_mXzVyso


ট্রাম্পের নয়া ফিকির: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো ইরানে ইসরায়েলের হামলায় জোরালো সমর্থন জানাচ্ছে, কখনো তিনি নিজের এই অবস্থান থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, আবার কিছু সময় পর আবারও সমর্থনে ফিরে আসছেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে তার এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তার অবস্থানকে অস্পষ্ট করে তুলেছে। সংঘাত যতই বাড়ছে, ততই অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এসব হামলা ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেই’ চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলকে দমাতে হবে মনস্তাত্ত্বিক আঘাত হেনে শক্তিমত্তায় ইসরায়েল অপ্রতিরোধ্য, স্থল, জল, আকাশে। ইসরায়েলের সাথে আছে বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী, কৌশলী ও শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, তারা সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধও করছে। অর্থ এই যে, ইসরায়েলকে কাবু করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে হবে। সেটা কি ঠেকানো সম্ভব, বিশ্বের কোন্ সাগরে বা দ্বীপে কিংবা রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি নেই?

তাদের ভূতুড়ে অবস্থান সব স্থানেই। তারা ইচ্ছে করলেই লেবানন, ইরাক বা ইয়েমেনে বিমান আক্রমণ শানাতে পারে। লোহিত সাগর তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ক্ষেপণাস্ত্র ও অগণিত সৈন্যে ঠাঁসা। লোহিত সাগরে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য।

‘ভারত মহাসাগরে মার্কিন গোপন ঘাঁটি কেন?’ যমুনা টিভি’র একটি ইউটিউব চ্যানেলে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন এবিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দিয়াগো গার্সিয়া একটি জনমানবহীন দ্বীপ। কাগজে-কলমে এটি ব্রিটেনের অধীনস্থ থাকলেও বিগত পাঁচদশক ধরে এটি মার্কিনীদেরই ঘাঁটি। এই দ্বীপে রয়েছে পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত জাহাজ,বিমানবাহী রণতরী আর যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি। বঙ্গোপসাগরের সতেরোশ’ মাইল দূরের এই ঘাঁটি থেকে অল্পসময়ের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো প্রান্তে বিমান হামলা চালানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্ধশতকের চুক্তি শেষ হয় ২০১৬ সালে। তখন এই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত করা হয়।

১৯৭০ সালেই এই দ্বীপ মার্কিনীদের দখলে চলে আসে। এই দ্বীপ আসলে রহস্যে ঢাকা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ষাট-সত্তর দশকেই এই দ্বীপকে গোপন ঘাঁটি বানিয়ে রাখে। অভিযোগ আছে যে, এই দ্বীপটিকে গোয়ান্তানামো কারাগারের মতোই ব্যবহারের।

২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের শুরুতে এই দ্বীপ থেকেই বিমান হামলা চালানো হয়। ২০১৮ সালে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন ফ্রিডম অব নেভিগেশন মিশনে এই দ্বীপ থেকেই বি ফিফটি টু বোমারু বিমান উড্ডয়ন করে। ২০২০ সালে কাশেম সুলায়মানীকে হত্যার জেরে ইরান হুমকি দিলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ হয়। তখন মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা দানে এই দ্বীপে ছয়টি বোমারু বিমান পাঠানো হয়।

আশির দশকের মধ্যে দিয়াগো গার্সিয়া এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুইটি শক্তিশালী ঘাঁটির একটি হয়ে ওঠে। অন্যটি হলো গুয়াম। সপ্তম নৌবহরের আওতায় বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। পশ্চিম প্রশান্ত মহসাগরের দ্বীপ গুয়াম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর একটি গুয়াম। ৫৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির ৩৯ শতাংশ মার্কিন সামরিক স্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যুগান্তকারী সৃষ্টির একটি থাড (Thaad) বসানো হয়েছে গুয়ামে। দুটি দেয়া হয়েছে ইসরায়েলকে। সাথে প্যাট্রিয়ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

ইসরায়েল জানে, তারা সর্বকালের সবচাইতে জঘন্য বর্বরতার নজির রাখছে। এটা করছে তারা ভীতি থেকে। ইসরায়েলের এই ভয়টাকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধযোদ্ধা ও তাদের মিত্রদের কাজে লাগাতে হবে। মুসলিম বিশ্ব ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোক বা না হোক; অন্তত হুমকি-ধামকির কাজটা তাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে। যে কাজটি খামেনি করে যাচ্ছেন।

আর মাঝেমধ্যে মিসাইল ও ড্রোন বৃষ্টি ঝরাতে হবে। সেটা যেখান থেকেই আসুক। পালাবদল করে হুথি, হামাস, হিজবুল্লাহ, মিত্র প্রতিরোধযোদ্ধা, তথা আল কাসাম ব্রিগেড, আল কুদস, হিজবুল্লাহ, ইরাকি মিলিশিয়া প্রভৃতি।

এর সাথে সাথে তুরস্ক, সৌদি, মিশর  মাঝেমধ্যে সরব হলে অনেকটাই ধাক্কা খাবে ইসরায়েলের থিংক-ট্যাংক।

মোড়ল মুসলিম দেশগুলো এই ভোটের লাভজনক দিকটিকে কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে। ইসরায়েল মুখোশ বদলাচ্ছে আর অ্যামেরিকা ইরান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। কোনো কারণে যুদ্ধ শুরু হলে অ্যামেরিকা দিয়াগো গার্সিয়াকে বিশ্ববাসীর আরো নাগালের বাইরে নিয়ে, রহস্যময় আক্রমণ করে ইরানকে বেসামাল করার চেষ্টা করবে। এরকম একটি ট্র্যাজিক পরিণতি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই মিশর ১৯৭৩ সালের মতো অগ্রসর হচ্ছে সিনাইয়ের দিকে।

 ইসরায়েল কেন শক্তিশালী? মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে ছোট্ট একটি ‘দেশ’ ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে যায় ব্রিটেন, আর ইহুদিরা ঘোষণা করে নিজস্ব রাষ্ট্র ইসরায়েলের। তখন থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র শুধু টিকেই থাকেনি, বরং তাদের পরিধি আরো বাড়িয়েছে। গত ৭৫ বছরে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে একদিকে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে।

– ইসরায়েলের এতটা শক্তির পেছনে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত অ্যামেরিকার একটা বড় অবদান আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অ্যামেরিকার বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ পেয়ে আসছে ইসরায়েল।

– “ইসরায়েলের জন্মই হয়েছে মূলত পরাশক্তিদের বিশাল সমর্থনে যেটা ইসরায়েলের ক্ষমতায়নে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের আওতাধীন মিডলইস্ট ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ড. সেইয়েদ আলী আলাভি।

– ইসরায়েলের প্রতিবেশী মিশর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন – সব কয়টি দেশ শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি ইসরায়েলের উত্থান। প্রতিবেশীদের সাথে তিনটি পুরোদমের যুদ্ধ (১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩) এবং আরো বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল।

– অ্যামেরিকার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস-এর রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েলের প্রযুক্তিকে অত্যাধুনিক করতে প্রভাব রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ অর্থবছরে যৌথ সামরিক প্রকল্পে ৫২ কোটি মার্কিন ডলারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস যার মাঝে ৫০ কোটি শুধু মিসাইল তৈরির খাতের জন্য।

-অ্যামেরিকার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ ইসরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান করেছে বলে মনে করেন তুরস্কের বিশেষজ্ঞ মিজ বুশরা নূর ওযঘুলার আকতেল, যিনি ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক। মিস আকতেল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন।

মিজ আকতেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, এভাবেই ইসরায়েল ‘স্টার্ট আপ রাষ্ট্র’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

– শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে। ইসরায়েলের চমক জাগানো সাফল্যগুলোর মধ্য অন্যতম হচ্ছে তাদের কৃষি খাত।

ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে ইসরায়েল ‘রাষ্ট্রে’র যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে পানি এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল। কৃষি-ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরনের শস্য ফলানোর সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি।

– নেতৃত্বের দিক দিয়ে শুরু থেকেও বিচক্ষণতা দেখিয়েছে ইসরায়েল, যেটা তাদের এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

দেশটির নেতৃত্ব সামরিক, কৃষি, শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করেছে।

আকতেলের মতে তাদের নেতৃত্বের স্টাইল এবং নীতি নির্ধারণ একটু ভিন্ন ধরনের।

“তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়” বলেন মিজ আকতেল।

ইসরায়েলের ইহুদিরা মূলত এ অঞ্চলে এসেছিল বাইরের ভূখণ্ড, বিশেষত ইয়োরোপ থেকে।

 মনস্তাত্বিক দিক: একটি নতুন গবেষণায় ১৩ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরের দিনগুলিতে উচ্চ মাত্রার মানসিক যন্ত্রণা এবং উদ্বেগের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন রেইচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের বারুচ ইভচার স্কুল অব সাইকোলজির অধ্যাপক বোয়াজ বেন-ডেভিড, ডক্টর ওরটাল শিমন-রাজ এবং চেলেট ব্রেসলার, অ্যাশকেলন কলেজের ডক্টর লিয়া রিং এবং হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যুবাল পালগি। ৬০০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কের নমুনার ওপর ভিত্তি করে করা এই গবেষণাটি আক্রমণের তাৎক্ষণিক মানসিক পরিণতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করে।

স্টাডিতে বলা হয়েছে:

‘According to the researchers, these findings underscore the need for early identification of traumatic reactions and timely therapeutic intervention to mitigate the risk of long-term psychological harm. The study also highlights the widespread emotional distress experienced by Israel’s adult population on the night of the first Iranian attack, emphasizing the need for tailored psychological interventions during times of crisis.’

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে তেল আবিবে সাদ্দাম হোসেনের স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান শুরু করে ইরাক। পরের মাসে, প্রায় ৪২টি স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়, মূলত তেল আবিব এবং হাইফা শহরে। এই আক্রমণে ইসরায়েলের জন্য একটি ক্ষতিকর দিক ছিল ট্রমা। ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে ভাইবোন যৌন ক্রীড়ায় লিপ্ত হয় বুদ্ধিশুদ্ধি ভোঁতা হয়ে গিয়ে।

ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য: দখলদারিত্ব ছাড়াও ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য ফিলিস্তিনি শিশুদের মেরে ফেলা বা পঙ্গু করে দেয়া যাতে তারা ভবিষ্যতে বড় হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না যেতে পারে। এটি ইসরায়েলি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম একটি প্রমাণ যে, তারা সমূলে উৎপাটিত করতে চায় ফিলিস্তিনিদের।

আরববিশ্বের, বিশেষত ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী যোদ্ধাদের ইসরায়েলের দুর্বল মনস্তাত্ত্বিক দিক ও ভয়-ভীতিটাকে কাজে লাগাতে হবে বিভিন্ন দিক থেকে ড্রোন, ভারী অস্ত্র, রকেট, মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণ চালিয়ে।

সবকিছুই করতে হবে মুসলিম দেশগুলোকে। রাশিয়া-চীন ফিলিস্তিনের পক্ষে যতই অটল অবস্থানের ঘোষণা দিক না কেন, ফিলিস্তিনিদের হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবার বিষয়ে তারা পরীক্ষিত বন্ধু নয়। ইয়োরোপের অনেক দেশ ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের বসতে হবে ইসরায়েলের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরিতে।

তবে, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এক হয়ে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি বা চুক্তিতে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। চুক্তিতে গাজা, রাফা ও পশ্চিম তীর অন্তত ফিলিস্তিনিদের যেন নিরাপদ আবাসস্থল হয় সেই চেষ্টা চালাতে হবে যে কোনো উপায়ে।

আর ইরান যদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেমন, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর ও সৌদি আরব থেকে অবশ্যই প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সাহায্য আসতে হবে। যেমনটি হয়েছে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে। ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের মদদ ও সাহায্য পেয়ে পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে এখনও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

সবশেষে, বলতে চাই, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের দামামা বাজার সাথে বিশ্বের স্থিতিশীলতার একটি বিষয় রয়েছে। ইরানের হরমুজ প্রণালী বিশ্বের আমদানি-রপ্তানির একটি অন্যতম ক্ষেত্র। এখানে জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে বা বাধাগ্রস্ত হলে তেল ও অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে মন্দা দেখা দেবে।

ইরানকে যদি নিতান্তই চুক্তি করতে হয় তবে, তাদের প্রধান দাবি হবে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ ও ফিলিস্তিনের জন্য আলাদা ভূখণ্ড দাবি। এই আলোচনায় ফিলিস্তিনও যোগ দিবে। অন্য শর্ত হবে, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নির্বিবাদে চালিয়ে নিতে দিতে হবে। ইসরায়েলের কোনো শর্ত থাকতে পারে না। তারা যুগ যুগ ধরে, এবং বিশেষত সাম্প্রতিককালে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীরে, সেসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাদেরকে বিশ্বদরবারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

আপাতত ইরানের করণীয়: ঘরের ইঁদুরগুলোকে মারতে হবে। অর্থাৎ, ইরানের মাটি থেকে মোসাদ এজেন্টদের নির্মূল করতে হবে।

-একইসাথে ইসরায়েলে আক্রমণ অব্যাহত রাখতে হবে

-ট্রাম্পের পাগলামির দিকে খেয়াল রাখতে হবে

-ইসরায়েলি বিমান ঘায়েল করার কৌশলগত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে

 

*হাসান জাহিদ, কথাশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও পরিবেশবিদ

সূত্র:

https://www.news-medical.net/news/20250326/Study-reveals-surge-in-anxiety-and-distress-following-the-Iranian-attack.aspx

BBC: https://www.bbc.com/bengali/articles/cw01w1pp9ljo

Jamuna TV