০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

আলজাজিরার বিশ্লেষণ: ক্ষমতার শেষ প্রান্তে নেতানিয়াহু?

  • আপডেট সময়: ০৬:২৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • 4

গাজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে একজন বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের পতাকা হাতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি ৭ জুন তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতির পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ছবিটি তোলা। ছবি: এএফপি


  • জনপ্রিয়তা কতটা কমেছে
  • রাজনৈতিকভাবে কী কী সমালোচনা উঠেছে
  • জোট সরকার ভাঙার সম্ভাবনা কতটা
  • আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল কতটা একঘরে
  • আইনি সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে
  • নেতানিয়াহুর সময় কি শেষ

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেদিকেই তাকান, চারপাশে শুধু সংকটই যেন ঘনিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় তার সরকারের যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন বিদেশি নেতারা, এমনকি সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীরাও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে।

কারণ গাজায় যে দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার ছবি এখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।

নিজ দেশে নেতানিয়াহু তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই মনে করেন, তিনি শুধু ক্ষমতা ধরে রাখতেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন। আইনি দিক থেকেও তার বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় কৌঁসুলিরা এখন তাকে জেরা শুরু করেছেন।

রাজনৈতিক দিকেও তিনি বিপদের মুখে। তার জোট সরকার ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

নিজের পুরো রাজনৈতিক জীবনে নেতানিয়াহু কখনো এতটা চাপে পড়েননি। কিন্তু সত্যিই কি এটাই ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর শেষ অধ্যায়? আমরা যা জানি :

ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা কতটা কমেছে?

খুবই এবং আরো কমছে।

গাজায় যুদ্ধকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ বহুদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে আছে। কিন্তু মার্চ মাসে এই অভিযোগ নতুন মাত্রা পায়, যখন ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের জীবন আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

মে মাসের শেষ দিকে চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের এক জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহু গাজায় আটক ইসরায়েলিদের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখাকে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলার সময় জিম্মি হওয়াদের মুক্তির দাবি ঘিরেই ইসরায়েলের বিক্ষোভগুলো মূলত আবর্তিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে জিম্মিদের আরো বিপদে ফেলছেন।

সম্প্রতি একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশের ইসরায়েলিরা গাজার মানুষের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছেন। শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানানো হয়েছে। তেল আবিবে শনিবার রাতের বিক্ষোভে এখন অনেকেই ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি বহন করেছেন।

এমনকি সেনাবাহিনীতেও অসন্তোষ বাড়ছে। সংরক্ষিত সেনারা (রিজার্ভিস্ট) যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন—এমন খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে কী কী সমালোচনা উঠেছে?

সম্প্রতি ইসরায়েলের দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। সাবেক সেনা জেনারেল এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকা এহুদ বারাক টাইম ম্যাগাজিনে বলেছেন, নেতানিয়াহুর এখন দুটি পথ—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় জিম্মিমুক্তি ও যুদ্ধ শেষ, অথবা রাজনৈতিক স্বার্থে চালানো ‘প্রতারণার যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়া।

এ ছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা এহুদ ওলমার্ট হারেৎজ পত্রিকায় লিখেছেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং ‘এটি এখন একটি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক যুদ্ধ’।

এ ছাড়া রেশেত বেত রেডিওকে ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতা ও সাবেক জেনারেল ইয়াইর গোলান বলেন, ‘একটি সুস্থ দেশ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় না, শিশুদের হত্যা করে না এবং জনগণকে গণহারে উচ্ছেদ করে না।’

তিনি এ কথা বলেন, যখন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

ওলমার্ট মঙ্গলবার আরো বলেন, ট্রাম্পের উচিত নেতানিয়াহুকে সোজাসুজি বলা, ‘এবার যথেষ্ট হয়েছে।’

নেতানিয়াহুর জোট সরকার ভাঙার সম্ভাবনা কতটা?

বহু বছর ধরেই ইসরায়েল সমাজে বিতর্ক চলছে—আল্ট্রা-অর্থোডক্স (কট্টরপন্থী ধর্মীয়) যুবকদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা। তারা যদি পূর্ণকালীন ধর্মীয় শিক্ষার্থী হন, তবে এত দিন এই নিয়োগ থেকে ছাড় পেতেন। ২০২৪ সালের জুনে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, এই ছাড় আর চলবে না। এটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ইসরায়েলিদের দীর্ঘদিনের দাবি, যারা এই দ্বৈত নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন।

কিন্তু ক্ষমতাসীন জোটের দুই আল্ট্রা-অর্থোডক্স দল—শাস ও ইউনাইটেড তোর%

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

আলজাজিরার বিশ্লেষণ: ক্ষমতার শেষ প্রান্তে নেতানিয়াহু?

আপডেট সময়: ০৬:২৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

গাজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে একজন বিক্ষোভকারী ইসরায়েলের পতাকা হাতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি ৭ জুন তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতির পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ছবিটি তোলা। ছবি: এএফপি


  • জনপ্রিয়তা কতটা কমেছে
  • রাজনৈতিকভাবে কী কী সমালোচনা উঠেছে
  • জোট সরকার ভাঙার সম্ভাবনা কতটা
  • আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল কতটা একঘরে
  • আইনি সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে
  • নেতানিয়াহুর সময় কি শেষ

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেদিকেই তাকান, চারপাশে শুধু সংকটই যেন ঘনিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকায় তার সরকারের যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন বিদেশি নেতারা, এমনকি সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীরাও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে।

কারণ গাজায় যে দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার ছবি এখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।

নিজ দেশে নেতানিয়াহু তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকেই মনে করেন, তিনি শুধু ক্ষমতা ধরে রাখতেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন। আইনি দিক থেকেও তার বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলায় কৌঁসুলিরা এখন তাকে জেরা শুরু করেছেন।

রাজনৈতিক দিকেও তিনি বিপদের মুখে। তার জোট সরকার ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

নিজের পুরো রাজনৈতিক জীবনে নেতানিয়াহু কখনো এতটা চাপে পড়েননি। কিন্তু সত্যিই কি এটাই ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীর শেষ অধ্যায়? আমরা যা জানি :

ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা কতটা কমেছে?

খুবই এবং আরো কমছে।

গাজায় যুদ্ধকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ বহুদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে আছে। কিন্তু মার্চ মাসে এই অভিযোগ নতুন মাত্রা পায়, যখন ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের জীবন আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

মে মাসের শেষ দিকে চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের এক জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহু গাজায় আটক ইসরায়েলিদের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নিজের ক্ষমতা ধরে রাখাকে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলার সময় জিম্মি হওয়াদের মুক্তির দাবি ঘিরেই ইসরায়েলের বিক্ষোভগুলো মূলত আবর্তিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে জিম্মিদের আরো বিপদে ফেলছেন।

সম্প্রতি একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশের ইসরায়েলিরা গাজার মানুষের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছেন। শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানানো হয়েছে। তেল আবিবে শনিবার রাতের বিক্ষোভে এখন অনেকেই ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি বহন করেছেন।

এমনকি সেনাবাহিনীতেও অসন্তোষ বাড়ছে। সংরক্ষিত সেনারা (রিজার্ভিস্ট) যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন—এমন খবর প্রকাশের পর বিভিন্ন বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে কী কী সমালোচনা উঠেছে?

সম্প্রতি ইসরায়েলের দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। সাবেক সেনা জেনারেল এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকা এহুদ বারাক টাইম ম্যাগাজিনে বলেছেন, নেতানিয়াহুর এখন দুটি পথ—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় জিম্মিমুক্তি ও যুদ্ধ শেষ, অথবা রাজনৈতিক স্বার্থে চালানো ‘প্রতারণার যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়া।

এ ছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা এহুদ ওলমার্ট হারেৎজ পত্রিকায় লিখেছেন, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং ‘এটি এখন একটি ব্যক্তিগত রাজনৈতিক যুদ্ধ’।

এ ছাড়া রেশেত বেত রেডিওকে ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতা ও সাবেক জেনারেল ইয়াইর গোলান বলেন, ‘একটি সুস্থ দেশ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় না, শিশুদের হত্যা করে না এবং জনগণকে গণহারে উচ্ছেদ করে না।’

তিনি এ কথা বলেন, যখন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

ওলমার্ট মঙ্গলবার আরো বলেন, ট্রাম্পের উচিত নেতানিয়াহুকে সোজাসুজি বলা, ‘এবার যথেষ্ট হয়েছে।’

নেতানিয়াহুর জোট সরকার ভাঙার সম্ভাবনা কতটা?

বহু বছর ধরেই ইসরায়েল সমাজে বিতর্ক চলছে—আল্ট্রা-অর্থোডক্স (কট্টরপন্থী ধর্মীয়) যুবকদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা। তারা যদি পূর্ণকালীন ধর্মীয় শিক্ষার্থী হন, তবে এত দিন এই নিয়োগ থেকে ছাড় পেতেন। ২০২৪ সালের জুনে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, এই ছাড় আর চলবে না। এটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ ইসরায়েলিদের দীর্ঘদিনের দাবি, যারা এই দ্বৈত নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন।

কিন্তু ক্ষমতাসীন জোটের দুই আল্ট্রা-অর্থোডক্স দল—শাস ও ইউনাইটেড তোর%