
প্রতীকী ছবি
ইন্টারনেটের এই যুগে ফাইল ট্রান্সফার প্রোটোকল বা এফটিপি সার্ভার একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সাধারণ ইন্টারনেট সংযোগের চেয়ে এফটিপিতে আলাদা ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ থাকে, যার ফলে বড় ফাইল যেমন সিনেমা, সফটওয়্যার বা গেমস দ্রুত ডাউনলোড বা স্ট্রিম করা যায়। এফটিপি সার্ভার মূলত একটি বিশেষায়িত সিস্টেম, যেখানে ব্যবহারকারীরা সহজেই ফাইল আদান-প্রদান করতে পারে। কিন্তু এই সুবিধার অপব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যক্তি সিনেমা পাইরেসির মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
আজকাল কোনো নতুন সিনেমা মুক্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই তা পাইরেটেড সংস্করণে এফটিপি সার্ভারে চলে আসে। শুধু এফটিপিই নয়, ইউটিউব, ফেসবুক বা বিভিন্ন নামী-অনামী ওয়েবসাইটেও অবৈধভাবে সিনেমা আপলোড করা হয়। হিন্দি, তামিল, মালয়ালাম, তেলেগু, ইংরেজি কিংবা বাংলা-সব ভাষার সিনেমাই পাইরেসির শিকার হচ্ছে। প্রথমে হলের নিম্নমানের রেকর্ডিং (ক্যামরিপ) ছড়ায়, পরে তা উচ্চমানের এইচডি ভার্সনে রূপান্তরিত হয়।
সম্প্রতি ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমাও পাইরেসির শিকার হয়েছে, যা এইচডি কোয়ালিটিতে ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগেও বহু বাংলা সিনেমা একই ভাগ্য বরণ করেছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কিভাবে এই পাইরেসি ঘটে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিনেমা হলে ভিডিও রেকর্ডিং করে বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ফাইল লিক করে এই কাজ করা হয়। অনেক সময় হল কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই এই অপরাধে জড়িত থাকেন, নইলে মূল সিনেমার এইচডি ভার্সন কিভাবে বাইরে চলে আসে? পাইরেসি শুধু ফাইল লিক করাই নয়, বরং তা ডাউনলোড, শেয়ার বা পুনরায় আপলোড করাও একই পর্যায়ের অপরাধ।
পাইরেসি শুধু একটি আইনি অপরাধই নয়, এটি সিনেমা শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি। নির্মাতা, শিল্পী, টেকনিশিয়ান-সবাই তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়। পাইরেসির কারণে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সিনেমা শিল্প। কিন্তু আমরা যদি সচেতন না হই, এই সমস্যা কখনই সমাধান হবে না। সিনেমা দেখার সঠিক মাধ্যম হলো থিয়েটার বা লিগ্যাল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
পাইরেটেড কন্টেন্ট দেখার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় একদিন এই শিল্পই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রকেও এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাইরেসির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো জরুরি। সিনেমা শিল্পকে বাঁচাতে হলে পাইরেসি নির্মূল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং শিল্পের সুরক্ষায় এগিয়ে আসি।























