
ঢাকার ট্যানারি মোড়— যা হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ ও ঝিগাতলার সংযোগস্থল। প্রতিদিন এই চারমুখো মোড়টিতে সকাল-সন্ধ্যা ভয়াবহ যানজট আর অসহনীয় শব্দদূষণে নাকাল হচ্ছেন এলাকাবাসী।
২৫ জুন (বুধবার) রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, মোড়টিতে চারদিক থেকে আসা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং কুরিয়ার সার্ভিসের বড় ট্রাক একসঙ্গে এসে ভিড় জমায়। ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অনবরত হর্নের শব্দে কান ঝাঝিয়ে ওঠে, পরিবেশ হয়ে ওঠে বিষাক্ত।
এই যানজট শুধুমাত্র মোড়েই সীমাবদ্ধ নয়। তা ছড়িয়ে পড়ে হাজারীবাগ, ঝিগাতলা, রায়ের হাইস্কুল ও কায়সার সুইটসের মোড় পর্যন্ত। এমনকি আশেপাশের গলির রাস্তার দিকেও এর প্রভাব পড়ছে।
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
হাজারীবাগের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রকিবুর রহমান যানজট ও শব্দদূষণ নিয়ে অতিষ্ঠ বহুদিন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ভাই, এ জ্যামের কথা আর বইলেন না। প্রতিদিন দু’বার জ্যামে পড়ি, সময় নষ্ট হয় কম করে হলেও দুই ঘণ্টা। সকাল-বিকাল একই অবস্থা। আল্লাহ জানে কবে এই মোড় নিয়ে কর্তৃপক্ষ ভাববে।’
শব্দ দূষণে আতঙ্কিত শিশুরা, উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
ট্যানারী মোড়ের এক আবাসিক ভবনে পরিবারসহ বসবাস করেন সারোয়ার হোসেন। তার দুই বছরের শিশুর ঘুম ভেঙে যায় সকাল সকাল গাড়ির হর্নে।
‘সকাল হলেও হর্নের শব্দে বাচ্চা ভয় পেয়ে উঠে যায়। রাত ৮টার পর থেকে তো একেবারে জ্যামের মহোৎসব শুরু হয়। জানালা খোলা যায় না শব্দের কারণে। এভাবে চলতে থাকলে আমার ছেলের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে।’
যানজটে রিকশা চালকদের ‘যে আগে যাবে সে বাঁচবে’ প্রতিযোগিতা
যানজটে রিকশাচালকদের মধ্যে দেখা যায় এলোমেলোভাবে চলাচলের প্রবণতা। তারা বলেন,
‘আগে গেলে তবেই তো জ্যাম পার হব। তাই যতটুকু জায়গা পাই, ঢুকে যাই।’
কিন্তু এর ফলে একাধিকবার রিকশাচালকদের মাঝে বচসা বেধে যায়। একদিকে যাওয়ার চেষ্টায় অন্যদিকে আসা রিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে জ্যাম আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
ট্যানারি মোড়ের এ দুরবস্থা এখন শুধুই যানজট নয়, শব্দদূষণ ও মানসিকচাপের ঘূর্ণিপাকে রূপ নিয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় না ঘটলে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ সুদূরপরাহত। এলাকাবাসীর একটাই দাবি— দ্রুত সমাধান।
কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) রাজীব গায়েন বলেন, ‘ট্যানারি মোড়টি আসলে মূল সড়ক থেকে ভেতরে। তাই সেখানে আমাদের কাজের সক্ষমতা সীমিত। বর্তমানে বেড়িবাঁধে আটলেনের রাস্তার কাজ চলছে। এই কারণে সবাই বিকল্প হিসেবে ট্যানারি মোড়ের রাস্তা ব্যবহার করছে, তাই চাপ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রাস্তা পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত রিকশার কারণেও যানজট হয়। বেড়িবাঁধের আটলেনের রাস্তা চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’