তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার জেটি দিয়ে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও সংস্কার বা উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ছবি: ঢাকা মেইল
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার তিন লক্ষাধিক মানুষের
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা জেটিঘাট দীর্ঘ দুই দশক ধরে অবহেলিত। সংস্কারের অভাবে ঘাটটি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ঘাট ব্যবহার করছেন কুতুবদিয়ার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয়দের মতে, যে কোনো মুহূর্তে জেটিটি ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালে কক্সবাজারের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের জন্য পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নে এই জেটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে এর সম্প্রসারণ করে ২০০ গজ দীর্ঘ একটি সরু ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, যার চারপাশে ছিল নিরাপত্তা রেলিং। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় রেলিংগুলো ভেঙে গেছে, পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কংক্রিট উঠে গিয়ে রড বেরিয়ে এসেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, জেটি দিয়ে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও সংস্কার বা উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে জেটিটির অবস্থা দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
কুতুবদিয়ার বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, ‘মগনামা ঘাট কুতুবদিয়া থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র সহজপথ। কিন্তু এখন ঘাটের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। প্ল্যাটফর্মের পিলারগুলো নড়বড়ে, রেলিং ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে চলাচল করছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা এহসান আলী বলেন, ‘২০ বছর আগে জেটি নির্মাণ হয়েছিল। এরপর আর কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে। এই অবস্থায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত যেন সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়।’
স্থানীয় যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেটির পিলারগুলো একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিমেন্ট উঠে গিয়ে রড বের হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত কুতুবদিয়ার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই জেটি ব্যবহার করছে। অথচ সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে, কিন্তু ঘাট সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
মগনামা লঞ্চঘাটে টোল আদায়ে নিয়োজিত কর্মী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কারের দাবিতে বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের কারণে মিনি ট্রাকের চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করাও যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলার ইউএনও মঈনুল হোসেন চৌধুরী জানান, ‘সম্প্রতি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক নিজে এসে ঘাটটি পরিদর্শন করেছেন। জেটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই আপাতত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে নতুন জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নতুন ঘাট নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
দীর্ঘ দুই দশক ধরে সংস্কার না হওয়ায় কুতুবদিয়ার তিন লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এই জেটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। অবিলম্বে জেটি সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এবং দ্বীপবাসীর সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।