০২:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের দম্ভ চিরদিনের জন্য হোক স্তব্ধ

  • আপডেট সময়: ০৮:১০:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • 3

ইরানের কাছে মার খাওয়ার পরও ইসরায়েলের দম্ভ চূর্ণ হয়নি। তারা একের পর এক গাজায় হামলা চালিয়ে হত্যা করছে শিশুসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ছায়াতলে থেকে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। মানবতার ঘৃণ্য লংঘনের জন্য ইসরায়েলের নামটিই পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ইসরায়েলের বিমান হামলা ও বন্দুকের গুলিতে গাজায় রবিবার তিন শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, গাজার চারটি স্থানে বিমান হামলায় ১৩ জন ও একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে বন্দুক হামলায় একজন নিহত হন।

বাসাল আরো বলেন, গাজার জেয়তুন এলাকার একটি বাড়িতে বিমান হামলায় বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে দুই শিশু নিহত হয়। আবদেল রহমান আজম নামের ওই পরিবারের একজন এএফপি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে আগুন দেখতে পাই, বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

অথচ ইরানের প্রথমদিকের মিসাইল হামলায় ইসরায়েলে এক শিশুর মৃত্যু হলে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইরান শিশু হত্যা করছে, যা মানবতার লংঘন। ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কোনো শিশুকে নির্দিষ্টভাবে হত্যা করার জন্য নিক্ষেপিত হয়নি; হয়েছে ইসরায়েলকে শায়েস্তা করতে। অথচ যুগ যুগ ধরে ইসরায়েল রীতিমতো সুনির্দিষ্টভাবে গাজায় হাজারো শিশুকে হত্যা করেছে। পঙ্গু করে দিয়েছে বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। তখন শিশুদের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দরদ কোথায় লুকিয়ে ছিলো!

প্রতিবাদের সাহসী পদক্ষেপ কোনো মুসলিম রাষ্ট্র থেকেই আসছে না। ইরান ইসরায়েলে শাণিত আক্রমণ শানালেও দেশটি মূলত একা। উপরন্তু নানাভাবে চাপ আসছে ইরানের ওপর।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তো নয়ই, এমনকি জাতিসংঘও সুবিচার করছে না ইরানের প্রতি। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান বলেছেন, ইরান কয়েকমাসের মধ্যেই আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। এর মাধ্যমেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন সম্ভব বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও এসব স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি।

এসব বক্তব্য এই বার্তা দেয় যে, তিনি যেন পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি জাতিসংঘের দায়িত্বশীল পদে আসীন হয়েও  ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন সম্পর্কে যেন বিষোদগার করছেন, একচোখা নীতিতে চলছেন।

গাজার ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কোনো মুসলিম রাষ্ট্র পাশে নেই। হামাস বা আল কুদস কিংবা কাসাম ব্রিগেডের পক্ষে পরাশক্তি ইসরায়েলের বিপক্ষে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লড়াই চালাবার পথ খোলা নেই। তবুও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে; ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করছে।

গাজাবাসীদের  জন্য পানি-ত্রাণ-খাদ্য আর বসবাসের কোনো পন্থাই খোলা নেই। বর্তমান বিশ্বের বুর্জোয়া ও নিষ্পেষণের নিয়মনীতিতে সার্বভৌমত্ব ও আধুনিক ভৌগোলিক সীমারেখা নিয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বার্থের কথা বলে।  তারা নিজের সুবিধামতো পরাশক্তি দেশগুলোকে তাদের দেশের অভ্যন্তরে ঘাঁটি গড়তে দেয়। এই ঘাঁটি গড়ার বিষয়টি একদিনে হয়নি। কয়েকযুগ সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল নিজেদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে একে একে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করে, ছিবড়ে বানিয়ে। এই কারণেই আজ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল বলয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বাকি ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রগুলো। একেই বলে যুদ্ধের আগেই আত্মসমর্পণ!

স্বাধীন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সৃষ্টি করতে, ইসরায়েলের দম্ভ চূর্ণ করতে ইরানের মতো দেশের সাথে হাত মিলাতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করছে শিয়া-সুন্নির পার্থক্য আর পরাশক্তির বলয়ে অবস্থান করে নিজেদেরকে ‘নিরাপদ ও স্বাধীন’ দেশ হিসেবে দেখতে চাইছে, তারা ভুল করছে। তাদের এই আপাতদৃষ্টির ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব’ অক্ষত আছে বলে তাদের প্রতীতি হয়। অচিরেই এই ধারণা বা তাদের এই অবিমৃষ্যকারিতা বুমেরাং হয়ে তাদের দিকেই ফিরে আসবে। পরাশক্তিধর ও সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে ও সেসব ধরে রাখতে প্রয়োজনে সব ফিলিস্তিনিদের মেরে ফেলতে পারে। আর ফিলিস্তিনিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে তেল ও সম্পদের লোভে সাম্রাজ্যবাদীরা এইসব তথাকথিত স্বাধীন দেশকে নিয়েও খেলবে, মারবে, চুষে সব রক্ত খেয়ে নেবে। তাই এইসব মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব রক্ষায় একমত ও একজোট হতে হবে। নইলে সামনে মহাবিপদ ঘনিয়ে আসবে।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধসে পড়ল ৩ ভবন, নিহত ১

ইসরায়েলের দম্ভ চিরদিনের জন্য হোক স্তব্ধ

আপডেট সময়: ০৮:১০:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

ইরানের কাছে মার খাওয়ার পরও ইসরায়েলের দম্ভ চূর্ণ হয়নি। তারা একের পর এক গাজায় হামলা চালিয়ে হত্যা করছে শিশুসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ছায়াতলে থেকে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। মানবতার ঘৃণ্য লংঘনের জন্য ইসরায়েলের নামটিই পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ইসরায়েলের বিমান হামলা ও বন্দুকের গুলিতে গাজায় রবিবার তিন শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, গাজার চারটি স্থানে বিমান হামলায় ১৩ জন ও একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে বন্দুক হামলায় একজন নিহত হন।

বাসাল আরো বলেন, গাজার জেয়তুন এলাকার একটি বাড়িতে বিমান হামলায় বাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে দুই শিশু নিহত হয়। আবদেল রহমান আজম নামের ওই পরিবারের একজন এএফপি বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে আগুন দেখতে পাই, বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

অথচ ইরানের প্রথমদিকের মিসাইল হামলায় ইসরায়েলে এক শিশুর মৃত্যু হলে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইরান শিশু হত্যা করছে, যা মানবতার লংঘন। ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কোনো শিশুকে নির্দিষ্টভাবে হত্যা করার জন্য নিক্ষেপিত হয়নি; হয়েছে ইসরায়েলকে শায়েস্তা করতে। অথচ যুগ যুগ ধরে ইসরায়েল রীতিমতো সুনির্দিষ্টভাবে গাজায় হাজারো শিশুকে হত্যা করেছে। পঙ্গু করে দিয়েছে বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। তখন শিশুদের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দরদ কোথায় লুকিয়ে ছিলো!

প্রতিবাদের সাহসী পদক্ষেপ কোনো মুসলিম রাষ্ট্র থেকেই আসছে না। ইরান ইসরায়েলে শাণিত আক্রমণ শানালেও দেশটি মূলত একা। উপরন্তু নানাভাবে চাপ আসছে ইরানের ওপর।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তো নয়ই, এমনকি জাতিসংঘও সুবিচার করছে না ইরানের প্রতি। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান বলেছেন, ইরান কয়েকমাসের মধ্যেই আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। এর মাধ্যমেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন সম্ভব বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও এসব স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি।

এসব বক্তব্য এই বার্তা দেয় যে, তিনি যেন পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি জাতিসংঘের দায়িত্বশীল পদে আসীন হয়েও  ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন সম্পর্কে যেন বিষোদগার করছেন, একচোখা নীতিতে চলছেন।

গাজার ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কোনো মুসলিম রাষ্ট্র পাশে নেই। হামাস বা আল কুদস কিংবা কাসাম ব্রিগেডের পক্ষে পরাশক্তি ইসরায়েলের বিপক্ষে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লড়াই চালাবার পথ খোলা নেই। তবুও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে; ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করছে।

গাজাবাসীদের  জন্য পানি-ত্রাণ-খাদ্য আর বসবাসের কোনো পন্থাই খোলা নেই। বর্তমান বিশ্বের বুর্জোয়া ও নিষ্পেষণের নিয়মনীতিতে সার্বভৌমত্ব ও আধুনিক ভৌগোলিক সীমারেখা নিয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বার্থের কথা বলে।  তারা নিজের সুবিধামতো পরাশক্তি দেশগুলোকে তাদের দেশের অভ্যন্তরে ঘাঁটি গড়তে দেয়। এই ঘাঁটি গড়ার বিষয়টি একদিনে হয়নি। কয়েকযুগ সময় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল নিজেদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে একে একে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করে, ছিবড়ে বানিয়ে। এই কারণেই আজ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল বলয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বাকি ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রগুলো। একেই বলে যুদ্ধের আগেই আত্মসমর্পণ!

স্বাধীন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সৃষ্টি করতে, ইসরায়েলের দম্ভ চূর্ণ করতে ইরানের মতো দেশের সাথে হাত মিলাতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করছে শিয়া-সুন্নির পার্থক্য আর পরাশক্তির বলয়ে অবস্থান করে নিজেদেরকে ‘নিরাপদ ও স্বাধীন’ দেশ হিসেবে দেখতে চাইছে, তারা ভুল করছে। তাদের এই আপাতদৃষ্টির ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব’ অক্ষত আছে বলে তাদের প্রতীতি হয়। অচিরেই এই ধারণা বা তাদের এই অবিমৃষ্যকারিতা বুমেরাং হয়ে তাদের দিকেই ফিরে আসবে। পরাশক্তিধর ও সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে ও সেসব ধরে রাখতে প্রয়োজনে সব ফিলিস্তিনিদের মেরে ফেলতে পারে। আর ফিলিস্তিনিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে তেল ও সম্পদের লোভে সাম্রাজ্যবাদীরা এইসব তথাকথিত স্বাধীন দেশকে নিয়েও খেলবে, মারবে, চুষে সব রক্ত খেয়ে নেবে। তাই এইসব মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব রক্ষায় একমত ও একজোট হতে হবে। নইলে সামনে মহাবিপদ ঘনিয়ে আসবে।