১০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

বাবা ও ভাইকে হত্যার পর জীবিতদের তাচ্ছিল্য করছিল ইসরায়েলি সেনারা

  • আপডেট সময়: ০৮:০৯:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • 7

হাদিল সালেহ ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য ছোট একটি ফ্ল্যাটে ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কিত অবস্থায় ছিলেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের বেশ কয়েকটি দিন সেখানে তারা এভাবেই পার করছিলেন। আর ইসরায়েলি সেনারা অবিরাম বোমাবর্ষণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছিল। এদিকে গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় কঠোর অভিযান চলছিল।

এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ করে হাদিলদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। তারা হাদিলের ৬০ বছর বয়সী বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর বড় ভাই বাবাকে সাহায্য করতে ছুটে গেলে সেনারা তাঁকেও গুলি করে মেরে ফেলে।

নৃশংস এ হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

সৈন্যরা আশপাশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। যারা বেঁচে যায়, তাদের পালাতে বাধ্য করে সেনারা।

ভয়ংকর ওই হামলার এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনার বিভিন্ন সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ভয়াবহ সেই ঘটনা হাদিলকে এখনো মানসিকভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যে বাসায় তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে এখনো তিনি ফিরে যেতে পারেননি।

বাসাটির বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি সে রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সেটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় দিন।

হাদিল সালেহ বলেন, আরো আগে আরেকটি বোমা হামলায় তাঁদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এর জেরে যুদ্ধের প্রথম বছরে তাঁদের পরিবার একাধিকবার পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়।

হাদিলদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ছিল আল-শিফা হাসপাতালের কাছে হাইদার আবদেল শাফি মোড়ের পাশের একটি অ্যাপার্টমেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। এটা ছিল আমাদের দশমবারের মতো গৃহহারা হওয়া। পবিত্র রমজান মাসে ওই ঘটনা ঘটেছিল। পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছুই প্রায় ছিল না।’

২০২৪ সালের ১৮ মার্চ নিশুতি রাতে ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে বড় ধরনের অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ করা হয়।

ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও সামরিক যান দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। এরপর সেনারা হাসপাতাল চত্বরের আশপাশের ভবনগুলোতে হামলা চালায়। তারা সামনাসামনি মানুষজনকে গুলি করে হত্যা করে, জীবিতদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।

সেই রাতের ঘটনার স্মৃতিচারণা করে হাদিল সালেহ বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে প্রচণ্ড গুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। সেই সঙ্গে ছিল ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের গগণবিদারী আওয়াজ।’

হাদিল সালেহ ও তাঁর পরিবার ওই এলাকার অনেকের মতো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দিনের পর দিন তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এলাকা ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

হাদিল বলেন, ‘সেই দিনগুলো ছিল অবর্ণনীয় কষ্টের। আমরা ইফতার করতে পারতাম না, নামাজ পড়তে পারতাম না। এমনকি অন্ধকারে একটা টর্চও জ্বালাতে পারতাম না। সব জায়গায় সেনারা চরে বেড়াচ্ছিল, ট্যাংকগুলোর ঘোরাঘুরি থামছিল না।’

টানা আট দিন লুকিয়ে থাকার পর ইসরায়েলি বাহিনী অবশেষে সেই ভবনে পৌঁছায়, যেখানে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র: মিডইস্ট আই

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

বাবা ও ভাইকে হত্যার পর জীবিতদের তাচ্ছিল্য করছিল ইসরায়েলি সেনারা

আপডেট সময়: ০৮:০৯:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

হাদিল সালেহ ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য ছোট একটি ফ্ল্যাটে ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কিত অবস্থায় ছিলেন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের বেশ কয়েকটি দিন সেখানে তারা এভাবেই পার করছিলেন। আর ইসরায়েলি সেনারা অবিরাম বোমাবর্ষণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছিল। এদিকে গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় কঠোর অভিযান চলছিল।

এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ করে হাদিলদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। তারা হাদিলের ৬০ বছর বয়সী বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁর বড় ভাই বাবাকে সাহায্য করতে ছুটে গেলে সেনারা তাঁকেও গুলি করে মেরে ফেলে।

নৃশংস এ হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

সৈন্যরা আশপাশের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। যারা বেঁচে যায়, তাদের পালাতে বাধ্য করে সেনারা।

ভয়ংকর ওই হামলার এক বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনার বিভিন্ন সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ভয়াবহ সেই ঘটনা হাদিলকে এখনো মানসিকভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যে বাসায় তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে এখনো তিনি ফিরে যেতে পারেননি।

বাসাটির বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি সে রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সেটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় দিন।

হাদিল সালেহ বলেন, আরো আগে আরেকটি বোমা হামলায় তাঁদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এর জেরে যুদ্ধের প্রথম বছরে তাঁদের পরিবার একাধিকবার পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়।

হাদিলদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ছিল আল-শিফা হাসপাতালের কাছে হাইদার আবদেল শাফি মোড়ের পাশের একটি অ্যাপার্টমেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। এটা ছিল আমাদের দশমবারের মতো গৃহহারা হওয়া। পবিত্র রমজান মাসে ওই ঘটনা ঘটেছিল। পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছুই প্রায় ছিল না।’

২০২৪ সালের ১৮ মার্চ নিশুতি রাতে ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে বড় ধরনের অভিযান চালায়। এ সময় হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ করা হয়।

ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও সামরিক যান দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। এরপর সেনারা হাসপাতাল চত্বরের আশপাশের ভবনগুলোতে হামলা চালায়। তারা সামনাসামনি মানুষজনকে গুলি করে হত্যা করে, জীবিতদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।

সেই রাতের ঘটনার স্মৃতিচারণা করে হাদিল সালেহ বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে প্রচণ্ড গুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। সেই সঙ্গে ছিল ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের গগণবিদারী আওয়াজ।’

হাদিল সালেহ ও তাঁর পরিবার ওই এলাকার অনেকের মতো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দিনের পর দিন তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এলাকা ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

হাদিল বলেন, ‘সেই দিনগুলো ছিল অবর্ণনীয় কষ্টের। আমরা ইফতার করতে পারতাম না, নামাজ পড়তে পারতাম না। এমনকি অন্ধকারে একটা টর্চও জ্বালাতে পারতাম না। সব জায়গায় সেনারা চরে বেড়াচ্ছিল, ট্যাংকগুলোর ঘোরাঘুরি থামছিল না।’

টানা আট দিন লুকিয়ে থাকার পর ইসরায়েলি বাহিনী অবশেষে সেই ভবনে পৌঁছায়, যেখানে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র: মিডইস্ট আই