১২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

টানটান উত্তেজনায় জিতল বাংলাদেশ, সিরিজে সমতা

  • আপডেট সময়: ০৮:৩০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • 10

ছবি: মীর ফরিদ, কলম্বো থেকে


জয়ের ফর্মুলা সহজ। টস জয়ের ভাগ্য সহায় হলে ব্যাট করো দেখেশুনে আর বল ফেল উইকেট বরাবর। প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার পর  রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে একই রসায়নে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরার জুরিবোর্ড বাংলাদেশের ১৬ রানের এই জয়ের নায়ক তানভির ইসলামকে বেছে নিয়েছে।

তবে ওয়ানডেতে প্রথমবার ৫ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি এই স্পিনারের আগে জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন একদল তরুণ ক্রিকেটার, যাঁরা ২০২০ যুব বিশ্বকাপ জয়ের অভিযাত্রী ছিলেন।

অবশ্য শ্রীলঙ্কা ইনিংসের ৪৮তম ওভারে মনে হচ্ছিল ম্যাচসেরার পুরস্কারটা বুঝি জানিথ লিয়ানাগের হাতে উঠছে! দুদিন আগে শ্রীলঙ্কার কোচ সনাত্ জয়াসুরিয়ার কাছে নামটা বিশেষভাবে শোনা। সেদিনের সাক্ষাৎকারে আগামীদিনের সম্ভাব্য তারকাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় লিয়ানাগেকে রেখেছিলেন জয়াসুরিয়া। তিনি খুব বাড়িয়ে বলেননি।

২৫ ওয়ানডেতে ৪৫.১৮ গড়ে ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে গতকাল পঞ্চম অর্ধশতক করার পথে প্রাজ্ঞতাও দেখিয়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কার ইনিংসজুড়ে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে বিবর্ণ মুস্তাফিজুর রহমান ডেথ ওভারে লিয়ানাগের মহামূল্য উইকেটটি নিতেই ম্যাচ কার্যত শেষ।

লিয়ানাগের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশের স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে চলা দুশমন্তা চামিরাকে তুলে ম্যাচ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেন তানজিম হাসান সাকিব।

ক্রিকেটকে ঘিরে রোমান্টিসিজমের শেষ নেই।

এই যেমন, তানজিমের উদযাপনে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হওয়ার মধ্যে বাড়তি রোমাঞ্চ আছে। তাওহিদ হৃদয়ের রান আউটের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ করে সেই দায় অনেকটাই মুছেছেন। এরপর বল হাতে জোড়া উইকেট- প্রতিকূলতার সামনে বুক চিতিয়ে এমন লড়াই তানজিমের ট্রেডমার্ক। গতকাল এর পুরস্কারও পেয়েছেন তেজদীপ্ত তানজিম।

তাঁর রানগুলোকে জয়ের অনুপ্রেরণা বলেছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

বাংলাদেশ অবশ্য একার জিম্মায় জেতে না। একসঙ্গে অনেকের নাম চলে আসে। রিশাদ হোসেনকে বেঞ্চে রেখে তানভির ইসলামকে খেলানো বিস্ময় ছড়িয়েছিল। প্রথমটায় না হয় অসুস্থতার কারণে রিশাদকে খেলানো হয়নি। আজ তো তিনি সুস্থই ছিলেন। তবু…। তবু কেন’র উত্তর শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেমাদাসায় উইকেট সোজা বল করলে সাফল্য অনিবার্য, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনারদের বেলায়। তানভির উইকেট তাক করে বল ঘোরানোর চষ্টো করেছেন, আমি ঠিক জায়গায় বল ফেলে টার্ন করাতে চেয়েছি। স্পিনারদের কাজই তো বল ঘোরানো। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তানভিরের টার্নে পরাস্ত হয়েছেন কুশল মেন্ডিস। মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে চার বাউন্ডারিসহ ১৭ রান তুলে যিনি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটার।

অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে পাশে বসা তানভিরের চেয়ে শামীমের খন্ডকালীন স্পিনের প্রশংসাই বেশি করেছেন মিরাজ, এতদিন পর ম্যাচে ফিরে শামীম যে পারফরম্যান্স করেছে, তা দারুণ। ব্যাটিংয়ে ভাল করেছে। তবে যে ৯টা ওভার ও করেছে, তা বিশেষ কিছু।

আক্রমণে এসে প্রথম ওভার মেডেন নেওয়া শামীম পরের ওভারে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। প্রথম ওয়ানডের অভিজ্ঞতা থেকে মিরাজ জানেন এই উইকেটটির গুরুত্ব, ‘আসালঙ্কার উইকেটটা খুব গুরম্নত্বপূর্ণ ছিল। শামীম ওটা নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ৯ ওভার বোলিং করেছে।’ বোলিং বিকল্পের অভাবে ভুগতে থাকা দলে খন্ডকালীন বোলারের ৯ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেওয়া বড় কিছুই।

টানা ৭ হারের পর এই জয় এমনিতেই বিশেষ কিছু। যদিও পারভেজ হোসেন উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়ার পরও বাংলাদেশের ২৪৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে ব্যর্থতার গল্প অবশ্যই আছে। আবার জয়ের প্রসঙ্গে এসে প্রশংসাপ্রাপ্তদের তালিকা বড় করেছেন অধিনায়ক, তানজিম সাকিব শেষদিকে যে রানগুলো করেছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। এই ধরনের উইকেটে ২২০ আর ২৫০ রানের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
এই জয় থেকে সরাসরি প্রাপ্তি- সিরিজ বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। আর ম্যাচের অলিগলি ঘুরে বাড়তি প্রাপ্তিযোগ- মানসিকতা। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ রানে ৭ উইকেট হারানো মিরাজের দল হতাশার অতল থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে, যা নি:সন্দেহে পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অনুপ্রেরণা যোগাবে বাংলাদেশ দলকে। ফুটনোটে জুড়ে দেওয়া যায় যে, ৫ ম্যাচ বিরতির পর এদিন উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর এটা প্রথম জয়ও।

সাইদুজ্জামান, কলম্বো থেকে। কালের কন্ঠ

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

টানটান উত্তেজনায় জিতল বাংলাদেশ, সিরিজে সমতা

আপডেট সময়: ০৮:৩০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

ছবি: মীর ফরিদ, কলম্বো থেকে


জয়ের ফর্মুলা সহজ। টস জয়ের ভাগ্য সহায় হলে ব্যাট করো দেখেশুনে আর বল ফেল উইকেট বরাবর। প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার পর  রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে একই রসায়নে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরার জুরিবোর্ড বাংলাদেশের ১৬ রানের এই জয়ের নায়ক তানভির ইসলামকে বেছে নিয়েছে।

তবে ওয়ানডেতে প্রথমবার ৫ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি এই স্পিনারের আগে জয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন একদল তরুণ ক্রিকেটার, যাঁরা ২০২০ যুব বিশ্বকাপ জয়ের অভিযাত্রী ছিলেন।

অবশ্য শ্রীলঙ্কা ইনিংসের ৪৮তম ওভারে মনে হচ্ছিল ম্যাচসেরার পুরস্কারটা বুঝি জানিথ লিয়ানাগের হাতে উঠছে! দুদিন আগে শ্রীলঙ্কার কোচ সনাত্ জয়াসুরিয়ার কাছে নামটা বিশেষভাবে শোনা। সেদিনের সাক্ষাৎকারে আগামীদিনের সম্ভাব্য তারকাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় লিয়ানাগেকে রেখেছিলেন জয়াসুরিয়া। তিনি খুব বাড়িয়ে বলেননি।

২৫ ওয়ানডেতে ৪৫.১৮ গড়ে ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে গতকাল পঞ্চম অর্ধশতক করার পথে প্রাজ্ঞতাও দেখিয়েছেন। তবে শ্রীলঙ্কার ইনিংসজুড়ে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে বিবর্ণ মুস্তাফিজুর রহমান ডেথ ওভারে লিয়ানাগের মহামূল্য উইকেটটি নিতেই ম্যাচ কার্যত শেষ।

লিয়ানাগের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশের স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে চলা দুশমন্তা চামিরাকে তুলে ম্যাচ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেন তানজিম হাসান সাকিব।

ক্রিকেটকে ঘিরে রোমান্টিসিজমের শেষ নেই।

এই যেমন, তানজিমের উদযাপনে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হওয়ার মধ্যে বাড়তি রোমাঞ্চ আছে। তাওহিদ হৃদয়ের রান আউটের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ করে সেই দায় অনেকটাই মুছেছেন। এরপর বল হাতে জোড়া উইকেট- প্রতিকূলতার সামনে বুক চিতিয়ে এমন লড়াই তানজিমের ট্রেডমার্ক। গতকাল এর পুরস্কারও পেয়েছেন তেজদীপ্ত তানজিম।

তাঁর রানগুলোকে জয়ের অনুপ্রেরণা বলেছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

বাংলাদেশ অবশ্য একার জিম্মায় জেতে না। একসঙ্গে অনেকের নাম চলে আসে। রিশাদ হোসেনকে বেঞ্চে রেখে তানভির ইসলামকে খেলানো বিস্ময় ছড়িয়েছিল। প্রথমটায় না হয় অসুস্থতার কারণে রিশাদকে খেলানো হয়নি। আজ তো তিনি সুস্থই ছিলেন। তবু…। তবু কেন’র উত্তর শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেমাদাসায় উইকেট সোজা বল করলে সাফল্য অনিবার্য, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনারদের বেলায়। তানভির উইকেট তাক করে বল ঘোরানোর চষ্টো করেছেন, আমি ঠিক জায়গায় বল ফেলে টার্ন করাতে চেয়েছি। স্পিনারদের কাজই তো বল ঘোরানো। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তানভিরের টার্নে পরাস্ত হয়েছেন কুশল মেন্ডিস। মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে চার বাউন্ডারিসহ ১৭ রান তুলে যিনি ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটার।

অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে পাশে বসা তানভিরের চেয়ে শামীমের খন্ডকালীন স্পিনের প্রশংসাই বেশি করেছেন মিরাজ, এতদিন পর ম্যাচে ফিরে শামীম যে পারফরম্যান্স করেছে, তা দারুণ। ব্যাটিংয়ে ভাল করেছে। তবে যে ৯টা ওভার ও করেছে, তা বিশেষ কিছু।

আক্রমণে এসে প্রথম ওভার মেডেন নেওয়া শামীম পরের ওভারে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাকে। প্রথম ওয়ানডের অভিজ্ঞতা থেকে মিরাজ জানেন এই উইকেটটির গুরুত্ব, ‘আসালঙ্কার উইকেটটা খুব গুরম্নত্বপূর্ণ ছিল। শামীম ওটা নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ৯ ওভার বোলিং করেছে।’ বোলিং বিকল্পের অভাবে ভুগতে থাকা দলে খন্ডকালীন বোলারের ৯ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেওয়া বড় কিছুই।

টানা ৭ হারের পর এই জয় এমনিতেই বিশেষ কিছু। যদিও পারভেজ হোসেন উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়ার পরও বাংলাদেশের ২৪৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে ব্যর্থতার গল্প অবশ্যই আছে। আবার জয়ের প্রসঙ্গে এসে প্রশংসাপ্রাপ্তদের তালিকা বড় করেছেন অধিনায়ক, তানজিম সাকিব শেষদিকে যে রানগুলো করেছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। এই ধরনের উইকেটে ২২০ আর ২৫০ রানের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
এই জয় থেকে সরাসরি প্রাপ্তি- সিরিজ বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। আর ম্যাচের অলিগলি ঘুরে বাড়তি প্রাপ্তিযোগ- মানসিকতা। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ রানে ৭ উইকেট হারানো মিরাজের দল হতাশার অতল থেকে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে, যা নি:সন্দেহে পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অনুপ্রেরণা যোগাবে বাংলাদেশ দলকে। ফুটনোটে জুড়ে দেওয়া যায় যে, ৫ ম্যাচ বিরতির পর এদিন উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর এটা প্রথম জয়ও।

সাইদুজ্জামান, কলম্বো থেকে। কালের কন্ঠ