০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

ডেঙ্গু, করোনা ও দূষণের ত্রিশঙ্কু শিকার বাংলাদেশিরা

  • আপডেট সময়: ০৮:৩১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • 14

এবার একসাথে তিনরকম মহাবিপদের শিকার বাংলাদেশের মানুষ। এডিস মশা দৃশ্যমান হলেও তার মরণ কামড়টা অদৃশ্যই থেকে যায়। প্রথমে সাধারণ জ্বর মনে করেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা, তারপর টেস্ট বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। অনেকক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায়, তখন ডেঙ্গু কেড়ে নেয় প্রাণ।

করোনা অদৃশ্যমান। নতুন রূপে, নতুন কলেবরে ফিরে এসেছে করোনা। আর দূষণের চিত্র তো আমরা সর্বত্রই দেখছি। প্লাস্টিকদূষণ, বায়ুদূষণ, ময়লা-আবর্জনার দূষণ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে গেছে। ঢাকা শহর প্রায়ই বায়ুদূষণ সূচকে শীর্ষে থাকে।

বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। বসবাসের যোগ্য তালিকার শীর্ষ ৫ শহর হলো–ভিয়েনা, কোপেনহেগেন, জুরিখ, মেলবোর্ন ও ক্যালগারি। আর বসবাসের অযোগ্য ৫ শহর হলো– দামেস্ক, ত্রিপোলি, আলজিয়ার্স, লাগোস ও করাচি।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪-এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের র‌্যাংকিং থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে ঢাকা। ৪৩.০ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের করাচির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে তালিকায় ১৬৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।

সূচক অনুযায়ী, ৯৮ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এবং ৩০.৭ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম বাসযোগ্য শহর হয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক।

১৭৩টি শহর নিয়ে স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ ও অবকাঠামো বিবেচনায় ইআইইউর এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, নাগরিক অস্থিরতা এবং আবাসন সংকট সত্ত্বেও এ বছরের গড় স্কোর কিছুটা বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইয়োরোপ বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য অঞ্চল হলেও তাদের স্কোর কমে গেছে। এ বছরের তালিকায় সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১০ ধাপ এগিয়েছে হংকং।

ডেঙ্গু

দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত এক শত্রু এডিস মশা। আর এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এখন আমাদের জন্য এক কঠিন বাস্তবতা। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছরই দেশে কমবেশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতি। ডেঙ্গু রোগ ও এডিস মশা সম্পর্কে দেশের সরকার ও মানুষ এখন অনেকটাই জানেন। রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়—এসব তথ্যও আমাদের জানা। এমনকি সরকার, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা উদ্যোগও নিয়েছে।

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, সবকিছু জানার পরও আমরা কেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি বারবার? এ ব্যর্থতার পেছনে কোথায় ঘাটতি, কাদের দায় আর কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এই ঘূর্ণিচক্র—এখন সময় এসেছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার।

বর্তমানে বরিশাল বিভাগ, বিশেষ করে বরগুনা ও বরিশাল জেলার অবস্থা অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’। গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেলের ভিত্তিতে বলা যায়, আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়া এ প্রবণতার ভয়াবহতা নির্দেশ করে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু প্রবৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে বাড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

করোনা করোনা ভাইরাস এবং ডেঙ্গু, বাংলাদেশে এখন এই দুই রোগেরই প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য। এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা কম।

বাংলাদেশে বর্ষা এলে প্রতিবছরই ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনা পরীক্ষার কিট ও টিকার সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, প্লাটিলেট কিট, জনবল ও স্থান সংকটের কারণে হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুর চিকিৎসা সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, এই দুই সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি বরিশালে, মৃত্যু ঢাকায়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত শুক্রবারের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে (এই লেখার সময় পর্যন্ত) এবং তাদের অর্ধেকের বেশি ঢাকার বাসিন্দা।

এই সময়ের মাঝে ঢাকা ও চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন দুই জন। তারা প্রত্যেকেই নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ১৫৮ জন। আর জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন।

এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ১৫৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মাঝে বেশিরভাগ-ই পুরুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা। এই সময়ের মাঝে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচজন, তাদের তিনজনই নারী।

চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন।তবে, এই গত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু, দু’দিক থেকেই শীর্ষে পুরুষরা। এদিকে, ডেঙ্গু সংক্রমণে সবচেয়ে শীর্ষে আছে বরিশাল বিভাগ।

মৃত্যুতে আবার ঢাকা

এ পর্যন্ত যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, তাদের অর্ধেকই ঢাকার মহানগরের দক্ষিণাঞ্চলের।

এছাড়া, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে চলতি মাসে। গত মে মাসে মোট এক হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলো।

কিন্তু জুন মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশব্যাপী এক হাজার ২২৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যু হারও এখন পর্যন্ত চলতি মাসেই বেশি। কারণ এ মাসে ইতোমধ্যে পাঁচজন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। অথচ পুরো জানুয়ারিতে মারা গিয়েছিলো ১০ জন।

 বরগুনায় এত ডেঙ্গু রোগী কেন?

এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় সর্বোচ্চ।

শুক্রবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় ৬৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে শুক্রবার অবধি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর এক হাজার ৫৫২ এবং মৃতের সংখ্যা ছয় জন।

বরগুনা সদর হাসপাতা‌লের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ রেজায়ানুর আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা “সক্ষমতার বাইরে গিয়ে রোগীর চাপ সামলাতে প্রাণপণ চেষ্টা” করছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ বেডের সংখ্যা কেবল ৫০টি হলেও এই মুহূর্তে সেখানে মোট পাঁচ শতাশিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। “এমার্জেন্সিতে অনেকেই আসছেন, ডেঙ্গু পজেটিভ পাচ্ছি। যে বাসায় একজন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, ওই বাসায় প্রায় প্রত্যেক সদস্যরই ডেঙ্গু,” বলেন তিনি।

হাসপাতালে যারা আসছেন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ‘বাড়ি পাঠানো হচ্ছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “সক্ষমতা তো থাকতে হবে। হাসপাতালের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নাই।”

তাই, যারা তুলনামূলক একটু সুস্থ, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না।

“এরকম একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গুর এত প্রকোপ কল্পনাও করা যায় না,” বলেন এই চিকিৎসক।

তবে, জেলায় এত বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে বরগুনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

“এ জেলার চারপাশে নদী। কিন্তু ফ্লোয়িং ওয়াটারে তো লার্ভা থাকে না। কিন্তু এখানে জলাবদ্ধতাও প্রচুর। বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ময়লা আবর্জনা, পানি জমা থাকে,” বলেন তিনি।

তিনি বলছেন, “সময়মতো সঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হলে এবং পৌর শহরটা যদি আরও পরিচ্ছন্ন থাকতো, তাহলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে যেত না।”

আর যেসব মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি জানান, বরগুনার সবাই এখন ডেঙ্গু নিয়ে ব্যস্ত। এর মাঝে যদি করোনার প্রকোপ বাড়ে, তাহলে হিমশিম খেতে হবে।

“আমরা করোনার টেস্ট করাতে পারছি না, কারণ এখানে কিট এখনও আসে নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

এদিকে, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল ডেঙ্গুর বিষয়ে বিবিসিকে জানান, “গতবার থেকেই ওখানে ডেঙ্গু রোগী বেশি, এবার আরও বেশি।”

পরিস্থিতি সামলাতে পারবে সরকার?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, করোনার কিট ও টিকার ব্যবস্থা ছিল।

তবে ইতোমধ্যে “এগুলো অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে, বাইরে থেকে এগুলো আরও বেশি করে আনার বা কেনার ব্যবস্থা চলছে।”

হাসপাতালগুলো করোনা পরস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাঝখানে দুই বছর করোনা না থাকাতে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত ছিল। এখন পূর্ণ দমে চালু হচ্ছে।”

টিকার ব্যাপারে গত ১১ই জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর বলেছেন, ১৭ লাখ করোনা টিকা বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে খুব শীঘ্রই করোনা শনাক্তকরণ কিট পৌঁছানো হবে।

ডেঙ্গুর উপদ্রব কমাতে সচেতনতা সবচেয়ে বড় কাজ করে। সমস্যা হলো আমরা সচেতন নই। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হচ্ছে প্লাস্টিক ব্যাগ ও আবর্জনা ফেলার কারণে। টব বা অন্য কোনো পাত্রে পানি জমা হয়ে থাকে। এই জমানো পানিতে মশার লার্ভা জন্ম নেয়। শহরে-বন্দরে জলাবদ্ধতা ডেঙ্গু বিস্তারের একটি প্রধান কারণ।

শহর বা মফস্বল শহর, এমনকি গ্রামের বাসিন্দাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে কাজ করে যেতে হবে।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ডেঙ্গু, করোনা ও দূষণের ত্রিশঙ্কু শিকার বাংলাদেশিরা

আপডেট সময়: ০৮:৩১:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

এবার একসাথে তিনরকম মহাবিপদের শিকার বাংলাদেশের মানুষ। এডিস মশা দৃশ্যমান হলেও তার মরণ কামড়টা অদৃশ্যই থেকে যায়। প্রথমে সাধারণ জ্বর মনে করেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা, তারপর টেস্ট বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। অনেকক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায়, তখন ডেঙ্গু কেড়ে নেয় প্রাণ।

করোনা অদৃশ্যমান। নতুন রূপে, নতুন কলেবরে ফিরে এসেছে করোনা। আর দূষণের চিত্র তো আমরা সর্বত্রই দেখছি। প্লাস্টিকদূষণ, বায়ুদূষণ, ময়লা-আবর্জনার দূষণ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে গেছে। ঢাকা শহর প্রায়ই বায়ুদূষণ সূচকে শীর্ষে থাকে।

বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। বসবাসের যোগ্য তালিকার শীর্ষ ৫ শহর হলো–ভিয়েনা, কোপেনহেগেন, জুরিখ, মেলবোর্ন ও ক্যালগারি। আর বসবাসের অযোগ্য ৫ শহর হলো– দামেস্ক, ত্রিপোলি, আলজিয়ার্স, লাগোস ও করাচি।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪-এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের র‌্যাংকিং থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে ঢাকা। ৪৩.০ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের করাচির চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে তালিকায় ১৬৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।

সূচক অনুযায়ী, ৯৮ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা এবং ৩০.৭ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম বাসযোগ্য শহর হয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক।

১৭৩টি শহর নিয়ে স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ ও অবকাঠামো বিবেচনায় ইআইইউর এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, নাগরিক অস্থিরতা এবং আবাসন সংকট সত্ত্বেও এ বছরের গড় স্কোর কিছুটা বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইয়োরোপ বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য অঞ্চল হলেও তাদের স্কোর কমে গেছে। এ বছরের তালিকায় সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১০ ধাপ এগিয়েছে হংকং।

ডেঙ্গু

দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত এক শত্রু এডিস মশা। আর এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এখন আমাদের জন্য এক কঠিন বাস্তবতা। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছরই দেশে কমবেশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতি। ডেঙ্গু রোগ ও এডিস মশা সম্পর্কে দেশের সরকার ও মানুষ এখন অনেকটাই জানেন। রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়—এসব তথ্যও আমাদের জানা। এমনকি সরকার, সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা উদ্যোগও নিয়েছে।

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, সবকিছু জানার পরও আমরা কেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি বারবার? এ ব্যর্থতার পেছনে কোথায় ঘাটতি, কাদের দায় আর কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এই ঘূর্ণিচক্র—এখন সময় এসেছে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার।

বর্তমানে বরিশাল বিভাগ, বিশেষ করে বরগুনা ও বরিশাল জেলার অবস্থা অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’। গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেলের ভিত্তিতে বলা যায়, আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়া এ প্রবণতার ভয়াবহতা নির্দেশ করে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গু প্রবৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে বাড়বে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

করোনা করোনা ভাইরাস এবং ডেঙ্গু, বাংলাদেশে এখন এই দুই রোগেরই প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য। এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তবে ডেঙ্গুর তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার এখনও কিছুটা কম।

বাংলাদেশে বর্ষা এলে প্রতিবছরই ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি বছর একই সময়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনা পরীক্ষার কিট ও টিকার সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, প্লাটিলেট কিট, জনবল ও স্থান সংকটের কারণে হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুর চিকিৎসা সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, এই দুই সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি বরিশালে, মৃত্যু ঢাকায়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত শুক্রবারের করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে (এই লেখার সময় পর্যন্ত) এবং তাদের অর্ধেকের বেশি ঢাকার বাসিন্দা।

এই সময়ের মাঝে ঢাকা ও চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন দুই জন। তারা প্রত্যেকেই নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ১৫৮ জন। আর জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন।

এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ১৫৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মাঝে বেশিরভাগ-ই পুরুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা। এই সময়ের মাঝে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচজন, তাদের তিনজনই নারী।

চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন।তবে, এই গত প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু, দু’দিক থেকেই শীর্ষে পুরুষরা। এদিকে, ডেঙ্গু সংক্রমণে সবচেয়ে শীর্ষে আছে বরিশাল বিভাগ।

মৃত্যুতে আবার ঢাকা

এ পর্যন্ত যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, তাদের অর্ধেকই ঢাকার মহানগরের দক্ষিণাঞ্চলের।

এছাড়া, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে চলতি মাসে। গত মে মাসে মোট এক হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলো।

কিন্তু জুন মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশব্যাপী এক হাজার ২২৫ জন ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যু হারও এখন পর্যন্ত চলতি মাসেই বেশি। কারণ এ মাসে ইতোমধ্যে পাঁচজন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। অথচ পুরো জানুয়ারিতে মারা গিয়েছিলো ১০ জন।

 বরগুনায় এত ডেঙ্গু রোগী কেন?

এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় সর্বোচ্চ।

শুক্রবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় ৬৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে শুক্রবার অবধি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর এক হাজার ৫৫২ এবং মৃতের সংখ্যা ছয় জন।

বরগুনা সদর হাসপাতা‌লের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ রেজায়ানুর আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা “সক্ষমতার বাইরে গিয়ে রোগীর চাপ সামলাতে প্রাণপণ চেষ্টা” করছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ বেডের সংখ্যা কেবল ৫০টি হলেও এই মুহূর্তে সেখানে মোট পাঁচ শতাশিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। “এমার্জেন্সিতে অনেকেই আসছেন, ডেঙ্গু পজেটিভ পাচ্ছি। যে বাসায় একজন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, ওই বাসায় প্রায় প্রত্যেক সদস্যরই ডেঙ্গু,” বলেন তিনি।

হাসপাতালে যারা আসছেন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ‘বাড়ি পাঠানো হচ্ছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “সক্ষমতা তো থাকতে হবে। হাসপাতালের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নাই।”

তাই, যারা তুলনামূলক একটু সুস্থ, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না।

“এরকম একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গুর এত প্রকোপ কল্পনাও করা যায় না,” বলেন এই চিকিৎসক।

তবে, জেলায় এত বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে বরগুনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

“এ জেলার চারপাশে নদী। কিন্তু ফ্লোয়িং ওয়াটারে তো লার্ভা থাকে না। কিন্তু এখানে জলাবদ্ধতাও প্রচুর। বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সব জায়গায় ময়লা আবর্জনা, পানি জমা থাকে,” বলেন তিনি।

তিনি বলছেন, “সময়মতো সঠিকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হলে এবং পৌর শহরটা যদি আরও পরিচ্ছন্ন থাকতো, তাহলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে যেত না।”

আর যেসব মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি জানান, বরগুনার সবাই এখন ডেঙ্গু নিয়ে ব্যস্ত। এর মাঝে যদি করোনার প্রকোপ বাড়ে, তাহলে হিমশিম খেতে হবে।

“আমরা করোনার টেস্ট করাতে পারছি না, কারণ এখানে কিট এখনও আসে নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

এদিকে, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল ডেঙ্গুর বিষয়ে বিবিসিকে জানান, “গতবার থেকেই ওখানে ডেঙ্গু রোগী বেশি, এবার আরও বেশি।”

পরিস্থিতি সামলাতে পারবে সরকার?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, করোনার কিট ও টিকার ব্যবস্থা ছিল।

তবে ইতোমধ্যে “এগুলো অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে, বাইরে থেকে এগুলো আরও বেশি করে আনার বা কেনার ব্যবস্থা চলছে।”

হাসপাতালগুলো করোনা পরস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাঝখানে দুই বছর করোনা না থাকাতে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত ছিল। এখন পূর্ণ দমে চালু হচ্ছে।”

টিকার ব্যাপারে গত ১১ই জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর বলেছেন, ১৭ লাখ করোনা টিকা বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে খুব শীঘ্রই করোনা শনাক্তকরণ কিট পৌঁছানো হবে।

ডেঙ্গুর উপদ্রব কমাতে সচেতনতা সবচেয়ে বড় কাজ করে। সমস্যা হলো আমরা সচেতন নই। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হচ্ছে প্লাস্টিক ব্যাগ ও আবর্জনা ফেলার কারণে। টব বা অন্য কোনো পাত্রে পানি জমা হয়ে থাকে। এই জমানো পানিতে মশার লার্ভা জন্ম নেয়। শহরে-বন্দরে জলাবদ্ধতা ডেঙ্গু বিস্তারের একটি প্রধান কারণ।

শহর বা মফস্বল শহর, এমনকি গ্রামের বাসিন্দাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে কাজ করে যেতে হবে।