
ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ঢাকা মেইল
গ্রাহকদের ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’য়ের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা জানান, ৫০০ জন উদ্যোক্তা ও তিন হাজারজন ভোক্তার আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা বকেয়া রেখে উধাও হয়েছে কোম্পানিটি।
বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম, মেহেদী, শফিকুল ইসলাম, নুরুল আমিন, জাকারিয়া, হাসমত মুন্সি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের টাকা আত্মসাৎ করেছে ধামাকাশপিং। একেকজন গ্রাহক লাখ লাখ টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন। ব্যবসায়ীরাও সর্বস্ব হারিয়েছেন।
আমাদের দাবি, আমাদের পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হোক।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ধামাকাশপিং ডটকম নানা প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের আশ্বস্ত করা হয় যে, এই কোম্পানির চেয়ারম্যান দেশের স্বনামধন্য অর্থোপেডিক চিকিৎসক, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জয়েন্ট কেয়ার কো-অর্ডিনেটর- ডা. এম আলী ওরফে মো. মোজতবা আলী। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এস এম ডি জসিমউদ্দিন চিশতী।
তারা বলেন, আমরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীগণ ও গ্রাহক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ধামাকাশপিং ডটকমের নির্দেশনা ও চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে যাচ্ছিলাম এবং গ্রাহক পণ্য কিনছিলাম। মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ডেলিভারি এবং পেমেন্টসহ মোটামুটি সবকিছু ঠিক থাকলেও পরবর্তী সময় থেকে পণ্য ডেলিভারি সম্পূর্ণ হলেও আমরা মার্চেন্ট বা সেলাররা চুক্তিনামা অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া বিল পাইনি। এমনকি ক্রেতারা তাদের পণ্য বাবদ অগ্রিম পেমেন্ট করা কোনো টাকাই ফেরত পায়নি।
তারা আরও বলেন, আমাদের পাওনাকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সিরাজুর ইসলাম রানা গং ও পরিচালক কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও মালিকপক্ষের কারো সাথে অদ্যাবধি সরাসরি কোনো সাক্ষাৎ বা সমাধান পাইনি। কোম্পানির চেয়ারম্যান ডা. এম আলী সাথে সরাসরি সাক্ষাতের জন্যে তার বাসভবনে কয়েকবার যাওয়ার পরও তিনি আমাদের সাথে দেখা করেননি এবং তার সাথে ভার্চুয়াল সভার জন্যে একাধিকবার আমরা ইমেইল ও ওয়াটসআপ মারফত যোগাযোগের সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরও কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। আমাদের পক্ষ থেকে বিনয়াবনত অনুরোধ করার পর কোম্পানির দুজন মালিকের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন চিশতী ও ডা. এম আলী মাঝে মাঝে ভার্চুয়াল সভা ও ফেসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম করে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই তারা রক্ষা করেননি।
বক্তারা জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বর্তমানে সপরিবারে আমেরিকায় পলাতক রয়েছেন। এই প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন চিশতী ও ডা. এম আলী, সিরাজুল ইসলাম রানাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে।
তারা জানান, চেয়ারম্যান ডা. এম আলী যে এই চক্রের অন্যতম মূল হোতা। তার যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভায়রা ভাই ও তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বন্ধু পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি এতদিন অধরা থেকেছেন এবং হাতিয়ে নেওয়া এসব অবৈধ অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল অবৈধ সম্পত্তির পাহাড়। পাওনাকৃত টাকা পাওয়ার মানবিক সহায়তার নিমিত্তে বিগত সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার মানবিক আবেদন করার পরও আমরা কোনো সমাধান পাইনি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছে নিয়ে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে ই-কমার্সে পণ্য সরবরাহকারী হিসেবেই ব্যবসা করতে বিনিয়োগ করেছি এবং ভোক্তা হিসেবে পণ্য অর্ডার করেছি। আমাদের স্বপ্ন এই অল্প সময়ে ও কম বয়সে ধূলিসাৎ যেন না হয় সে জন্যে বর্তমান সরকারের কাছে চেয়ারম্যানের বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা আশা করছি আমাদের ন্যায্য পাওনা অর্থ ফেরত পেতে সরকারসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান ডা. মুজতবা আলীকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।