
গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলা ও গুলি বর্ষণে শনিবার (১২ জুলাই) নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারান। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও শতশত মানুষ।
চিকিৎসা ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সকালে পশ্চিম গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে জামাল আবদেল নাসের স্ট্রিটে এক বিমান হামলায় এক নারী এবং তার তিন সন্তান নিহত হন। শহরের পূর্বাঞ্চলীয় আল-তুফাহ পাড়ায়, ইয়াফা স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে চার নারী নিহত এবং আরও ১০ জন আহত হন।
এছাড়াও গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে বিমান হামলায় একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। পৃথক হামলায় গাজা শহরের আল-রিমালে একটি বাড়িতে আরও দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে আল-হাসাইনা স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় এক শিশু নিহত এবং অন্যরা আহত হয়েছে। অন্যদিকে দেইর আল-বালাহর আল-মানসুরা এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালিয়ে সাতজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে একই পরিবারের চারজনও রয়েছে। একই এলাকার আল-আকসা হাসপাতালের কাছে, আরেকটি তাঁবুতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন।
আরো পড়ুন
গাজাকে ‘শিশুদের কবরস্থান’ বানাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
এদিন খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার কুয়েতি হাসপাতালের কাছেও বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো। এতে শিশু এবং একজন নারীসহ ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। পৃথকভাবে উদ্ধারকারী দল খান ইউনিসের শেখ নাসের এলাকা থেকে আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
এদিকে চিকিৎসা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের উত্তরে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষারত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮০ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা আল-শাকুশ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়। , যেখানে অবরুদ্ধ ছিটমহলে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে খাদ্য ও মৌলিক সরবরাহ পাওয়ার আশায় শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে নিহতের সংখ্যা ৭৭০ ছাড়িয়েছে এবং ৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়াও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছেছে।
সূত্র: আনাদোলু, আলজাজিরা