এই সময়ের ব্যস্ত টিভি অভিনেত্রী রিয়ামনি। কয়েকটি সফল নাটকের নায়িকা। তার প্রধান চরিত্রে অভিনীত সাড়াজাগানো দুটি নাটক ‘খরগোস নাকি লাভ বার্ডস’ ও ‘পুরস্কার পঞ্চাশ লক্ষ’ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
শুক্রবার ১১ জুলাই, ২০২৫) সন্ধ্যায় রিয়া এসেছিলো আমার সাথে দেখা করতে। রিয়া আমার একজন প্রিয় ও স্নেহভাজন ছাত্রী। সে কিছুটা সময় পেয়ে আমার সাথে আড্ডা দিতে এসেছিলো। তখনই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আর এই সিদ্ধান্তটা আমাদেরকে মূল আড্ডা থেকে অনেকটা সরিয়ে দিয়ে একটা সাক্ষাৎকারে রূপ নিলো।
এই সাক্ষাৎকারটা নিতান্তই ইনফরমাল। আর সাক্ষাৎকারের ভাষাটাও তেমনি খোলামেলা ও অনেকটা স্মৃতিচারণ ঢংয়ের। কফি হাতে দুজনে কথা বলছিলাম। সাক্ষাৎকারে মিডিয়ার প্রচলিত ঢংয়ে ‘আপনি’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি । ‘তুমি’টাই রেখে দেয়া হয়েছে।
আসলে আমি ভাবতে পারছিলাম না যে, রিয়া সম্পর্কে আমার পত্রিকায় কোনো কথোপকথন যোগ হবে না। সে এখন ব্যস্ত নায়িকা। সবকিছু সামলে আজকের দিনে একজনের সাথে আরেকজনের দেখা হয়ে যাওয়াটা একটা যুদ্ধ করার মতো বিষয়।
আমি তার গুণমুগ্ধ। আমার চেনাজানা ও স্নেহের পাত্রী বলে নয়। ও আসলেই স্বল্পসময়ে টিভিনাটকে ঠাঁই করে নিতে পেরেছে পরিশ্রম, মনোযোগ ও মেধা দিয়ে।
♣♣♣
আর কথা না বাড়িয়ে মূল পর্বে চলে যাই:
নাটকের শুরুটা কীভাবে?
উত্তর: ফটোশুটের মাধ্যমে। রফিকুল ইসলাম র্যাফ (রফিকুল ইসলাম রাফি) আমার বেশ কিছু ফটোশুট করেন। বাংলাদেশে এই সময়ে সবচেয়ে ভালো ফটোগ্রাফারদের মধ্যে আমি উনাকে একজন মনে করি। তার ফটোশুট ও আমার কয়েকটি পোর্টফোলিও চ্যানেল আইতে সাবমিট করা হয়। চ্যানেল আইতে আমি দেখা করি। চ্যানেল আই আমাকে সিলেক্ট করে। এরপর তারা আমাকে প্রশ্ন করেন যে, আমি নাটক করতে পারবো কিনা। একইসাথে তারা আমার আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষাটাও নিলেন। উতড়ে গেলাম। আমাকে নেয়া হলো ‘গলার কাঁটা’ নামের একটা নাটকে। পরে আমি পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু স্যারের সাথে কাজ করি। চ্যানেল আই পরিবারে যথেষ্ট প্রশংসা পেলাম। আর দর্শকদের কাছ থেকেও প্রশংসা পেলাম। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, আরো কাজ করবো এবং ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
তুমি অনেক শহুরে চরিত্রে অভিনয় করেছো। গ্রাম্য চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
উত্তর: আমি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি। এক জায়গায় আমাকে দেখানো হয়েছে একজন ড্রাগ- অ্যাডিক্ট চরিত্র হিসেবে। আসলে আমার হেয়ারস্টাইলটা একটু আলাদা। টমবয় টাইপের। গ্রামের মেয়েদের চুল লম্বা ও বেণী হয়। যেটা আমার সাথে যায় না। সেজন্য গ্রাম্য চরিত্রে আমার এখনও প্রবেশ করা হয়নি, যদিও প্রথম দিকে গ্রাম্য সাধারণ মেয়ের চরিত্রায়ন করেছি।
তুমি তাহলে কী ধরনের চরিত্রে ঢুকতে চাও?
উত্তর: আমার ভালো লাগে থ্রিলার টাইপের চরিত্র, যেখানে একটু অ্যাকশন থাকবে, ফ্যান্টাসি থাকবে। আমি চাই যে, আমার মতো করে কোনো চরিত্র থাকবে। যেমন, আমার সর্বশেষ নাটক ‘খরগোস নাকি লাভ বার্ডস’। আমি চাই আমাকে ঘিরে একটি গল্প হোক, যেখানে হয়তো আমি আমাকে মেলে ধরতে পারবো।
https://www.youtube.com/watch?v=tr5K7ot06BY
রিয়ামনি অভিনীত নাটকের একটি দৃশ্য
তুমি জেন-জিদের কীভাবে দেখো? এরকম কোনো চরিত্রে তুমি অভিনয় করবে কিনা
উত্তর: আসলে আমি নিজেও জেন-জিদের একজন। তবে তাদের মতো আমি কোনো ক্যারেক্টারে যেতে চাই না। আমি একটু আনকম্ফোর্টেবল। তাদের অনেকের সাথেই তো ওঠা-বসা। তবে তাদের স্টাইল, ভাষা ও উপস্থাপনা, এসবে আমি একটু আনইজি ফিল করি। তাদেরকে আমি অপছন্দ করি, তা না। আমি আসলে সহজ হতে পারি না। সবার সাথে আমি একটা ভাইব মিলিয়ে চলি। জেন-জিদের সাথে বা আন্যান্য সবার সাথে। তবে একটা স্বপ্ন আমি লালন করি। আমার ভেতরে যে গল্প ও ফ্যান্টাসি থাকে–সেসব নিয়েই আমার নিজ চরিত্রকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাই।
এই সুপ্ত ইচ্ছে কি তোমার স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতা নাকি মনের তাগিদ?
উত্তর: একান্তভাবেই মনের তাগিদ।
একজন প্রিয় পরিচালকের নাম তো তুমি বললে। এরকম কোনো পরিচালকের পরিচালনায় কোন নায়ক বা বিপরীত চরিত্রের সাথে তুমি অভিনয় করতে চাও বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো?
উত্তর: আমি অনেক কাজ করেছি। ভিন্ন ধরনের হিরো বা কো-আর্টিস্ট ছিলো। তো সবার সাথেই যে আমাকে একদম মানায়, তা নয়। অনেকের সাথেই একটু ভিন্নতা থাকে। গল্পটা তুলে ধরা যায় না ওই ভিন্নতার কারণে। তো আমি আগেই বলেছি, ‘খরগোস নাকি লাভবার্ডস’, যে নাটকে আমার কো-আর্টিস্ট নাওভীর সাথে বুঝাপড়াটা ভালোই ছিলো। আর হিরো বলতে যা বোঝায়, মানে আমি অনেকের সাথে কাজ করেছি। কিন্তু সমস্যাটা হলো সবাই আমার সিনিয়র। মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয় যে, আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি জুনায়েদ বোগদাদীর সাথে। তার সাথে অনেকবার কাজ করতে হয়েছে। গল্প অনুযায়ী যাকে মানায়, আমি তাকেই এক্সপেক্ট করবো।
https://www.youtube.com/watch?v=s-qD0-TFUVQ
মান অভিমানের অবসান, আরেকটি নাটকে
একটা ছবিতে দেখা গেছে যে,শ্রদ্ধেয় আবুল হায়াতের কাঁধে মাথা রেখে তুমি একজন বাবা’র স্নেহ পেতে চাইছো। এই ছবিটা তোমার ফেসবুকে দেথেছি আমি। সম্ভবত শুটিংয়ের অবসরে। এরকম আরো কেউ আছেন, যাদেরকে তুমি আপনজন ভাবতে পারো। পুরোনোদের মধ্যে।
উত্তর: হ্যাঁ, উনি মেকআপ রুমে এসে আমার মাথায় হাত রেখে স্নেহের সুরে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কেমন আছি। তার এই একটি কথাতেই আমি বুঝে গেলাম কতোটা স্নেহপ্রবণ তিনি। যে কারণে আমি উনার কাঁধে মাথা রেখে শান্তি পেয়েছিলাম। আর পুরোনোদের কথা বলছেন, সবার সাথে তো আমার কাজ করা হয়নি। প্রথমবারের মতো আমি উনার মতো একজন জাতশিল্পীর সাথে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম। আর সেই স্নেহ-মমতার বন্ধনটুকু নাটকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
শুটিং করতে গিয়ে তুমি কোনো টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়েছিলে? বা সেইরকম সমস্যা হয়ে থাকলে সেটাকে ঘিরে কোনো ফান বা হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছিলো কিনা কিংবা কেউ বিরক্ত বোধ করেছিলো কিনা।
উত্তর: না, তেমন কিছু হয়নি। আমার কারণে কেউ বিরক্ত হয়েছে, এমনটি কখনো ঘটেনি। কিন্তু একটা ফান হয়েছিলো। আমি কয়েকটি নাটক করেছি উইগ পরে। একটা নাটকের সিন ছিলো একজন ভিলেন আমার চুল ধরে টেনে ফেলে আমাকে রেইপ করবে। সেই ভিলেন চুল ধরে টান দিতেই আমার উইগ উড়ে গিয়ে অন্য জায়গায় পড়লো, আমি পড়লাম আরেকদিকে (হাসি)।
https://www.youtube.com/watch?v=sOWDGCq8XXY
পুরস্কার পঞ্চাশ লক্ষ নাটকের একটি দৃশ্যে…
এই টেইকটা নিশ্চয়ই কাট করতে হয়েছিলো? এই নাটকের পরিচালক কে ছিলেন?
উত্তর: হ্যাঁ, কাট করতে হয়েছিলো। পরিচালক ছিলেন রাজিবুল ইসলাম রাজিব।
এই পর্যায়ে তোমার নিজের কোনো স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা আছে? নিজেকে এগিয়ে নিতে, আরো দর্শক-নন্দিত হতে?
উত্তর: পরিকল্পনা তো অনেককিছুই থাকে। আজ থেকে দুবছর আগে, ভাবিনি যে, নায়িকা হবো। কিন্তু হয়ে গেলাম। নিজকে এগিয়ে নিতে অনেকেরই নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা থাকে। আমারও আছে।
গল্পের প্রয়োজনে ভিন্ন বেশে…
ইউটিউবে তোমার নাটকের কমেন্টস পড়ি। বেশিরভাগই পজিটিভ। আর আমি নিজেও মনে করি যে, তুমি অনেকটা তুঙ্গেই আছো। আরো কী করা যেতে পারে বা তুমি পারবে বলে মনে হয়?
উত্তর: পরিকল্পনা অনেক আছে। আসলে আমার নাট্যজীবনের বয়সও তেমন হয়নি; ঠিক দুবছরও হয়নি, দেড়বছর হবে। তবে আমি নিজের উন্নতি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো। নিজেই একটা কিছু করবো। নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে যা বোঝায় আরকি।
এবার একটু স্মৃতিচারণ হয়ে যাক। আমার কন্ঠে গানের সাথে তুমি মডেলিং করেছিলে কয়েকটি। সেসব প্রফেশনাল ছিলো না। অ্যামেচার ধরনের ছিলো। তবে সেসব আমার কাছে মূল্যবান। এখন আর সেসব হয় না। তুমি খুব ব্যস্ত থাকো। আমি গান ও লেখালেখি নিয়ে পড়ে আছি।
উত্তর: হ্যাঁ, সেসব অবশ্যই অমূল্য স্মৃতি। বিশেষভাবে আপনার কয়েকটি গান আমি খুব পছন্দ করি। সেসব এখনো আমি শুনি ইউটিউবে। আমার সাথে শেয়ার করেছেন, এমন কয়েকটি ক্লিপ আমি এখনো দেখি।
এমন গানের কোনো স্মৃতির কথা বলবে?
উত্তর: হ্যাঁ এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় আমরা রিকশায় করে ফিরছিলাম। আপনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘এই মেঘলা দিনে একলা, ঘরে থাকে না তো মন’ গান টা গাইছিলেন। সেই সন্ধ্যা, বৃষ্টি ও গান আমার মনের পটে আঁকা হয়ে গেছে।
আমাকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করো?
উত্তর: আপনি আমার টিচার ও মেন্টর। আমি আপনাকে অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। আমার স্কুলজীবন থেকেই আপনার সাথে আমার পরিচয়। অনেক গাইডলাইনস ও মুল্যবান উপদেশ আমি পেয়েছি আপনার কাছে। আমি এখনও কোনো প্রবলেম ফেস করলে আপনাকে ফোন করে পরামর্শ নিই। আমি অনেক ভুলের জায়গা শুধরে নিয়েছি আপনার সান্নিধ্যে। সত্যি, সেইসব দিনগুলো ছিলো খুবই আনন্দের।
ধন্যবাদ, তোমাকে। তোমার নাটক দেখে পরিবারে কারা কী ধরনের মন্তব্য করেন?
উত্তর: সবাই ভালোই বলেন। আমার বোন, দাদি, ফুপি। সবাই। তবে আম্মু তো শুটিংএর সময় আমার সাথে থাকেন। আমি থাকি ক্যামেরার সামনে, আম্মু পেছনে। নাটক দেখে আমার কোনো ব্যত্যয় ঘটলে, আম্মু তা আমাকে বলেন। আমি শুধরে নিই পরে।
উনি যেসব ভুল ধরেন, সেটা কি শুধুই কিছু বলার মতো বলা, নাকি এটা একধরনের মূল্যায়ন।
উত্তর: না, সেরকম নয়। উনি যেভাবে দেখেন, সেটাই বলেন। ভুলটা উনি ধরতে জেনে গেছেন। মা হিসেবে তিনি তো আমার মঙ্গল চাইবেনই। আমার কাছে সেটা তিক্ত হলেও আমাকে মানতে হবে। আমি সেটা মেনে নিই।
এখন তোমার পরিকল্পনা কী?
উত্তর: আমি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি নাটক করছি। আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আরো বেশি দর্শকের মন কেড়ে নিতে।
তোমার পড়াশোনা ও নাটক দুটিই চলুক। একটা হলো শিক্ষা ও কেরিয়ার। অন্যটা হলো ক্রিয়েটিভিটি।
উত্তর: ঠিক তাই, স্যার।
অবসর তো তেমন পাও না। কিছুটা সময় পেলে কী করো?
উত্তর: বাসায় সময় দিই। আমার বিড়াল আছে। ওদের সাথে সময় কাটাই। ঘরের কাজ করি।
তোমার জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো। আরো বড় হও।
উত্তর: আপনিও ভালো থাকবেন স্যার।
♣সাক্ষাৎকার গ্রহণে উত্তরাধুনিক সম্পাদক হাসান জাহিদ