
অযত্ন আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে না মানিকগঞ্জের ডিসি পার্ক। সোমবার সকালে তোলা। – কালের কণ্ঠ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাতকোড়া এলাকায় প্রায় পাঁচ একর জমিতে জমিদার পরিবারের পরিত্যক্ত অবকাশকেন্দ্রটি এখন ডিসি পার্ক নামে পরিচিত হলেও তা কেবল সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জেলার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমান জমিদার বাড়ির ভবন ও তাদের রেখে যাওয়া নানা নিদর্শন দেখার জন্য।
এক কিলোমিটার দক্ষিণে বালিয়াটি পূর্ব বাড়ির জমিদারদের তৈরি অবকাশ কেন্দ্র হীরালালের বাগানবাড়ি বলে পরিচিত।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চারদিকে পানি, মাঝখানে দ্বীপের মতো। নৌকাযোগে সেখানে গিয়ে অবসর সময় কাটাতেন জমিদাররা। ৪৭-এর দেশভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এতে বাগানবাড়িটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। চলে লুঠপাট, ভাঙচুর। দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি অযত্ন অবহেলায় ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়।
ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, হাতকোড়া মৌজায় ৯০ শতাংশ কৃষিজমি, ২৫ শতাংশ ভিটি, ৪০ শতাংশ ফলের বাগান, ২৩১ শতাংশ পুকুর, ৮০ শতাংশ ডোবা নিয়ে বাগানবাড়িটি ‘খ’ তালিকাভুক্ত সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে।
স্বাধীনতার পর উত্তর কাওন্নারা গ্রামের আসমান আলী নামের এক ব্যক্তি এ সম্পদ ভোগদখল করেন। ২০০৭ সালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওসার আহমেদ সম্পত্তিটি সরকারি হেফাজতে নিয়ে চারদিকে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি গেড়ে দেন। ২০১৬ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মূর্তজা মাসুমের তত্ত্বাবধানে ডিসি রাশেদা ফেরদৌস ডিসি পার্ক হিসেবে উদ্বোধন করেন। তবে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হলেও ডিসি পার্ক সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ।
বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল, ব্যক্তি লিজ নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য ধ্বংস হতে পারে ঐতিহ্যের অতীতের রেখে যাওয়া অবকাশযাপন কেন্দ্রটি।
ইতিহাসবিদ সমরেন্দু সাহা লাহোর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বালিয়াটি জমিদারদের নিয়ে গবেষণা করে দেখেছি—এই অবকাশ কেন্দ্রটির রয়েছে নানা ইতিহাস। এটাকে জমিদারবাড়িতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সংস্কার করে একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। ইতিহাসবিদদের জন্যও একটি পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে এটি।’
ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অযত্নে পড়ে থাকা ডিসি পার্ককে দৃষ্টিনন্দন করতে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বীপটির মধ্যে কয়েকটি নৌকা, পিকনিক স্পট, গাড়ি পার্কিং, শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদনের জন্য কয়েকটি রাইড গড়ে তোলা হবে। পর্যটকরা টিকিটের মাধ্যমে ডিসি পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন। এ ছাড়া শীতকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিকনিক করতে চাইলে ভাড়া নিতে পারবে।’
তার ভাষ্য, ডিসি পার্কটির প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুতই শেষ করা হবে। এজন্য রাজনৈতিক, সুশীল সমাজসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।