গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্র খাবার সংগ্রহের চেষ্টায় সময় কমপক্ষে ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই পদদলিত হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
জিএইচএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খান ইউনিস এলাকায় জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে মর্মান্তিক ঘটনায় ১৯ জন পদদলিত হয়ে মারা গেছেন এবং একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘তারা বিশ্বাস করে, বিশৃঙ্খলা ও হতাহতের ঘটনার জন্য এই ভিড় জনতার মধ্যে মিশে থাকা বিক্ষোভকারীরা দায়ী, যারা হামাসের সঙ্গে যুক্ত।’
তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই ঘটনার জন্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীরা দায়ী, জিএইচএস তাদের অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ত্রাণকেন্দ্রের সরু পথের গেইট বন্ধ করে সেখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জিএইচএসের নিরাপত্তা রক্ষীরা। এরপর আটকে পড়া এসব মানুষের মধ্যে কাঁদানে গ্যাস ও সরাসরি গুলি ছোড়ে তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের কারণে শ্বাসরোধ ও পদদলিত হয়ে মারা যান ১৫ জন।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে শ্বাসরোধ এবং তীব্র পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, গাজায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্র এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠী পরিচালিত কনভয়গুলোতে ত্রাণ নিতে গিয়ে গত ছয় সপ্তাহে কমপক্ষে ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কার্যালয়ের মুখপাত্র থামিন আল-খিতান বলেন, ‘১৩ জুলাই পর্যন্ত আমরা গাজায় খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় ৮৭৫ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি রেকর্ড করেছি। তাদের মধ্যে ৬৭৪ জন জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রে বা এর কাছে নিহত হয়েছেন। বাকি ২০১ জন নিহত হয়েছেন জাতিসংঘ বা জাতিসংঘের অংশীদারদের পরিচালিত ত্রাণ কনভয়ের পথে বা কাছাকাছি এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে গিয়ে।’
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের পর আন্তর্জাতিক চাপে গত ২৬ মে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় জিএইচএফ— ত্রাণ বিতরণ সংস্থা খোলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য খাদ্য সংস্থা জিএইচএফর এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এই উদ্যোগ মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি করে।
সূত্র: আলজাজিরা