
গাজা উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে ১০০টিরও বেশি এনজিও ও মানবাধিকার গোষ্ঠী। তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণ করতে দিচ্ছে না। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিতে পারে সতর্ক করে গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
বুধবার (২৩ জুলাই) সেভ দ্য চিলড্রেন, মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)-সহ ১০০টিরও বেশি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেছে।
সংস্থাগুলো বলেছে, গাজা সীমান্তের বাইরে কয়েক হাজার টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা সরবরাহ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে ইসরায়েল কর্তৃক সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার বা ত্রাণ সরবরাহ করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় ত্রাণগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মানবিক ব্যবস্থা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ওপর চলতে পারে না… ইসরায়েল সরকারের বিধিনিষেধ, বিলম্ব এবং সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে গাজায় খাবারের জন্য চরম বিশৃঙ্খলা, অনাহার এবং মৃত্যু হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে নতুন করে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ক্ষুধাজনিত কারণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১১১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি শিশু।
এনজিওগুলো আন্তর্জাতিক সরকারগুলোকে গাজায় সবধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, সমস্ত স্থলপথ উন্মুক্ত, উপত্যকায় সকলের জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত এবং জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবরোধের অবসান ঘটাতে রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেমন অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্থানান্তর বন্ধ করা।
এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ একটানা বেশ কয়েক দিন ধরে কিছু না খেয়ে আছে।
মঙ্গলবার ডব্লিউএফপির জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিচালক রস স্মিথ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার ক্ষুধা সংকট হতাশার নতুন এবং আশ্চর্যজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ টানা কয়েক দিন ধরে খাবার পাচ্ছে না।’
ডব্লিউএফপির অনুমান অনুসারে, গাজার জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। এরমধ্যে ১ লাখ নারী ও শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে চরম অপুষ্টি দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজা বিশ্বের ‘একমাত্র দুর্ভিক্ষের সংজ্ঞায়িত অঞ্চল’ যেখানে শতভাগ জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
গাজা মিডিয়া অফিস বলেছে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য ও পানি সংকটের কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি অন্তত ৮ লাখ মানুষ। সংকট মোকাবেলায় প্রতিদিন ১৩০০ ট্রাক খাদ্য প্রয়োজন। যদিও জাতিসংঘ দিনে কমপক্ষে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠানোর কথা বলেছিলো।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চাইছে ইসরায়েল। এই মারাত্মক পরিণতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে দায়ী।
এদিকে গাজার দুর্ভিক্ষ নিয়ে ১০০টিরও বেশি সংস্থার বিবৃতির নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছে, ‘বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো হামাসের হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে’।
এতে আরও বলা হয়, ‘আলোচনার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, তারা হামাসের প্রচারণার প্রতিধ্বনি করছে এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; আমরা সকল সংগঠনকে হামাসের প্রচারণা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গাজায় বর্তমানে ৯৫০টি ত্রাণের ট্রাক আছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর উচিত সেগুলো বিতরণ করা।
সূত্র: আলজাজিরা