০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

ঝুলে আছে সহস্রাধিক মামলা: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার শীর্ষে বাংলাদেশিরা, ভয়াবহ নির্যাতন লিবিয়ায়

  • আপডেট সময়: ১১:২২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • 8

সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের স্বপ্ন এখন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে রূপ নিচ্ছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই অন্তত ৯,৭৩৫ জন বাংলাদেশি লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে ইতালি প্রবেশ করতে গিয়ে লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে অনেক বাংলদেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।

তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। ঘটছে প্রাণহানিও। তবে এতোকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না। গত একযুগে এভাবে সাগর পাড়িয়ে দিয়ে ইউরোপে গেছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যাদের লিবিয়া নেওয়া হয় তাদের সবাই চাকুরি পায় না। উল্টো অধিকাংশকেই লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। তবে এতোকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না।

ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করে। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পযর্ন্ত এই পথে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ, এ বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় অন্তত ২৩ বাংলাদেশির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয় যারা লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু পরে ভূমধ্যসাগরে সেটি ডুবে যায়।


আরো পড়ুন

অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্রে কাজ করা ফিলিস্তিনি সমাজকর্মীকে গুলি করে হত্যা

https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/07/29/1554285


ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে যারা ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের বেশিরভাগ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এলাকার। তাদের ৬০ শতাংশের পরিবারকে স্থানীয় দালালরা ভালো চাকুরির প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু ৮৯ শতাংশই চাকুরি বা কোন কাজ পাননি। উল্টো নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন। যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই-মিসর হয়ে লিবিয়া গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তানবুল-দুবাই হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে কাতার হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া এবং অল্প কিছু লোক ঢাকা থেকে সরাসরি লিবিয়া গিয়েছেন। এভাবে লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দি হয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। বন্দিদের ৭৯ শতাংশই শারিরীক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তারা কখনো তিনবেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।

মানবপাচারের মামলা হলেও বিচার মিলছে না
মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালে সরকার আইন করার পর থেকে মানবপাচার আইনে নিয়মিত মামলা হলেও অধিকাংশ মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আবার যেগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে সেখানে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবপাচার মামলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পযর্ন্ত ৪ হাজার ৩৬০ টা মামলা ঝুলে আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬ টা মামলা এখনো তদন্তধীন। আর তিন হাজার ১৪ টি মামলা বিচারাধীন।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ঝুলে আছে সহস্রাধিক মামলা: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার শীর্ষে বাংলাদেশিরা, ভয়াবহ নির্যাতন লিবিয়ায়

আপডেট সময়: ১১:২২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

সংগৃহীত ছবি


বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের স্বপ্ন এখন ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে রূপ নিচ্ছে। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই অন্তত ৯,৭৩৫ জন বাংলাদেশি লিবিয়া হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে ইতালি প্রবেশ করতে গিয়ে লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে অনেক বাংলদেশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।

তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। ঘটছে প্রাণহানিও। তবে এতোকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না। গত একযুগে এভাবে সাগর পাড়িয়ে দিয়ে ইউরোপে গেছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যাদের লিবিয়া নেওয়া হয় তাদের সবাই চাকুরি পায় না। উল্টো অধিকাংশকেই লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদেরকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। তবে এতোকিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না।

ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করে। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পযর্ন্ত এই পথে অন্তত ৯২ হাজার ৪২৭ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ, এ বছরের জানুয়ারিতে লিবিয়ায় অন্তত ২৩ বাংলাদেশির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয় যারা লিবিয়া থেকে নৌযানে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু পরে ভূমধ্যসাগরে সেটি ডুবে যায়।


আরো পড়ুন

অস্কারজয়ী প্রামাণ্যচিত্রে কাজ করা ফিলিস্তিনি সমাজকর্মীকে গুলি করে হত্যা

https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/07/29/1554285


ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে যারা ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের বেশিরভাগ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এলাকার। তাদের ৬০ শতাংশের পরিবারকে স্থানীয় দালালরা ভালো চাকুরির প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু ৮৯ শতাংশই চাকুরি বা কোন কাজ পাননি। উল্টো নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন। যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই-মিসর হয়ে লিবিয়া গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তানবুল-দুবাই হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে কাতার হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া এবং অল্প কিছু লোক ঢাকা থেকে সরাসরি লিবিয়া গিয়েছেন। এভাবে লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দি হয়েছেন। বন্দিদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। বন্দিদের ৭৯ শতাংশই শারিরীক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তারা কখনো তিনবেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।

মানবপাচারের মামলা হলেও বিচার মিলছে না
মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালে সরকার আইন করার পর থেকে মানবপাচার আইনে নিয়মিত মামলা হলেও অধিকাংশ মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না। আবার যেগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে সেখানে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবপাচার মামলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পযর্ন্ত ৪ হাজার ৩৬০ টা মামলা ঝুলে আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৪৬ টা মামলা এখনো তদন্তধীন। আর তিন হাজার ১৪ টি মামলা বিচারাধীন।