০৩:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

কেশবপুর: লোকালয়ে পানি, উঁচু সড়কের পাশে আশ্রয় খুঁজছে দুর্গতরা

  • আপডেট সময়: ০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • 6

কেশবপুরের মধ্যকূল এলাকায় যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে জলাবদ্ধতার শিকার মানুষেরা। শনিবার তোলা। -কালের কণ্ঠ

টানা বৃষ্টিতে যশোরের কেশবপুরের হরিহর নদের পানি বিপৎসীমার দুই ফুট ওপরে উঠে এসেছে। এতে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পৌরসভার মধ্যকূল এলাকার মানুষ যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য নদ-নদীতে পলি জমার পাশপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। পানিপ্রবাহে বাধা পাওয়ায় এ অবস্থা  সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) সরেজমিনে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকূল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার সরদারপাড়ার বাসিন্দাদের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি। একইভাবে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সাহাপাড়া খ্রিস্টান মিশনের পাশের সড়কটিতেও উঠে এসেছে জলাবদ্ধতার পানি। যশোর-চুকনগর সড়কের মধ্যকূল আমতলা এলাকায় জলাবদ্ধতার শিকার মানুষ টংঘর বেঁধে সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে।

টংঘরের পাশে দাঁড়িয়ে মধ্যকূল এলাকার বাসিন্দা হামিদা খাতুন (৪০) বলেন, এক মাস ধরে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে তাঁর ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। এ কারণে যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় ভ্যানচালক জিন্নাত আলী বলেন, ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় এসে টংঘর বাঁধছি।

অনেকেই এভাবে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আয়ুব খান বলেন, জলাবদ্ধতার শিকার  মানুষ সাহায্য চান না। তারা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান। কয়েক বছর ধরে এলাকাটি জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ায় মৎস্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, পলিতে নদ-নদী ভরাট হওয়ার পাশিপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এতে কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করছে। দ্রুত ভবদহ অঞ্চলের হরি নদী অববাহিকার যেকোনো একটি বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুসহ নদ-নদী খনন না করা হলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়বে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন জানান, তাঁর ইউনিয়নে ১১টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪০০-তে পৌঁছেছে। আলতাপোল এলাকার ১১টি পরিবার সড়কের পাশে একটি উঁচু ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ২০০ হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে হরিহর নদে পানি বেড়ে দুই ফুট ওপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে নদে পানি রয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ ফুট। স্বাভাবিক থাকার কথা ৮ দশমিক ৬৯ ফুট। তিনি বলেন, হরিহর, আপারভদ্রা ও হরিনদীসহ ১০টি সংযোগ খাল পুনঃখননের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে খননকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান হরিহর নদের উৎপত্তিস্থল থেকে আপারভদ্রা নদীর তিন দশমিক ৭০০ মিটার খনন কাজ চলছে। পাশাপাশি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট উৎপত্তিস্থল থেকে হরিহর নদের চার কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করবে। খনন হলে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

কেশবপুর: লোকালয়ে পানি, উঁচু সড়কের পাশে আশ্রয় খুঁজছে দুর্গতরা

আপডেট সময়: ০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

কেশবপুরের মধ্যকূল এলাকায় যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে জলাবদ্ধতার শিকার মানুষেরা। শনিবার তোলা। -কালের কণ্ঠ

টানা বৃষ্টিতে যশোরের কেশবপুরের হরিহর নদের পানি বিপৎসীমার দুই ফুট ওপরে উঠে এসেছে। এতে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পৌরসভার মধ্যকূল এলাকার মানুষ যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর তৈরি করে সেখানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য নদ-নদীতে পলি জমার পাশপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। পানিপ্রবাহে বাধা পাওয়ায় এ অবস্থা  সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) সরেজমিনে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যকূল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার সরদারপাড়ার বাসিন্দাদের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি। একইভাবে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর সাহাপাড়া খ্রিস্টান মিশনের পাশের সড়কটিতেও উঠে এসেছে জলাবদ্ধতার পানি। যশোর-চুকনগর সড়কের মধ্যকূল আমতলা এলাকায় জলাবদ্ধতার শিকার মানুষ টংঘর বেঁধে সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে।

টংঘরের পাশে দাঁড়িয়ে মধ্যকূল এলাকার বাসিন্দা হামিদা খাতুন (৪০) বলেন, এক মাস ধরে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে পানি বেড়ে তাঁর ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। এ কারণে যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁকে। স্থানীয় ভ্যানচালক জিন্নাত আলী বলেন, ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় এসে টংঘর বাঁধছি।

অনেকেই এভাবে টংঘর বেঁধে আশ্রয় নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

এলাকার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আয়ুব খান বলেন, জলাবদ্ধতার শিকার  মানুষ সাহায্য চান না। তারা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান। কয়েক বছর ধরে এলাকাটি জলাবদ্ধতার শিকার হওয়ায় মৎস্য ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, পলিতে নদ-নদী ভরাট হওয়ার পাশিপাশি অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এতে কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করছে। দ্রুত ভবদহ অঞ্চলের হরি নদী অববাহিকার যেকোনো একটি বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালুসহ নদ-নদী খনন না করা হলে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়বে।

সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন জানান, তাঁর ইউনিয়নে ১১টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪০০-তে পৌঁছেছে। আলতাপোল এলাকার ১১টি পরিবার সড়কের পাশে একটি উঁচু ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার পরিবারের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ২০০ হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে হরিহর নদে পানি বেড়ে দুই ফুট ওপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে নদে পানি রয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ ফুট। স্বাভাবিক থাকার কথা ৮ দশমিক ৬৯ ফুট। তিনি বলেন, হরিহর, আপারভদ্রা ও হরিনদীসহ ১০টি সংযোগ খাল পুনঃখননের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে খননকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমান হরিহর নদের উৎপত্তিস্থল থেকে আপারভদ্রা নদীর তিন দশমিক ৭০০ মিটার খনন কাজ চলছে। পাশাপাশি খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট উৎপত্তিস্থল থেকে হরিহর নদের চার কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করবে। খনন হলে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।