০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

চূড়ান্ত হচ্ছে আরপিও, বাড়ছে ইসির কর্তৃত্ব

  • আপডেট সময়: ১১:২১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • 6

রোদমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ছবি: সংগৃহীত


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার আগেই ভোটের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা বা আরপিও গুরুত্বপূর্ণ। সেই আরপিওর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত করবে ইসি। খসড়ায় প্রথম দিকে ‘না ভোট’ এর বিধান রাখা হলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় তা থাকছে না। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে আরপিওতে।

বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আমরা খসড়া চূড়ান্ত করব। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

আব্দুর রহমানেল মাউসদ, ইসি

ইসি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রথম যখন আমরা আরপিও নিয়ে কাজ শুরু করি তখন সেখানে ‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। খসড়াও প্রস্তুত করেছিলাম। পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় ‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করবে না। রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সরকার যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে তা পরে আরপিওতে যুক্ত করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সরকার ও ইসির মধ্যে মতবিরোধ হলে প্রাধান্য পাবে ইসির চাহিদা; তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগেই প্রশাসন ও পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসির অধীনে যাবে; সরকারি কর্মকর্তারা নির্দেশনা না মানলে গোপনীয় অনুবেদন ও শাস্তির ব্যবস্থা নেবে ইসি। এছাড়া সমভোট হলে লটারি প্রথা বিলোপ করে পুনঃভোট, নির্বাচনী ব্যয় তদারকিতে কমিটি গঠন, দলের নির্বাচনী ব্যয় ও আয় ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ, প্রতীক বরাদ্দের আগেই যেন মামলার নিষ্পত্তি, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরেও ব্যবস্থা, মিথ্যা অভিযোগ দিলে মামলাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব পর্যালোচনায় রয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কমিশন সভায় আরপিও প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাউসদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আমরা খসড়া চূড়ান্ত করব। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।’

‘না ভোট’ এর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘না ভোট নিয়ে আমরা চুপচাপ আছি। ঐকমত্য কমিশন ও সরকার যদি বলে তাহলে আমরা তা পরে যুক্ত করব। আপাতত আমাদের প্রস্তাবনায় ‘না ভোট’ থাকছে না।’

আরও জোরদার হচ্ছে ইসির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা

ইসিকে প্রাধান্য এবং কর্তব্যে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চাইছে ইসি। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আরপিও-এর ৫ অনুচ্ছেদে নতুন দফা (৩) ও (৪) যুক্ত করে এ সংক্রান্ত সুপারিশে করেছে। সরকার ও ইসির মধ্যে কোনো মতবিরোধ হলে ‘ইসির চাহিদাকে’ প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টিও আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা সরকারের কোনো বিভাগ কর্তব্যে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী বা বিভাগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে ইসি। সরকারের সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ইসিকে সহায়তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাধারণত নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে। সে সময় ইসির চাহিদা বা নির্দেশনার প্রতি সরকারি দফতর ও কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকে আনুগত্য। তবে দলীয় সরকারের সময়ে একই ধরনের সহযোগিতা সব সময় পাওয়া যায় না—এমন অভিজ্ঞতা অতীতে একাধিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বা ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করার মতো ঘটনায় জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে পারে ইসি। শুধু তাই নয়, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিতে পারে কমিশন।

এ লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে দুটি নতুন উপধারা—৭(৭)(ঘ) ও ৭(৭)(ঙ)—সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা তার চাকরির বই এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি, কমিশনকে সেই তথ্য জানাতে হবে তিন কার্যদিবসের মধ্যে।

সবশেষ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন পুরোপুরি বন্ধ করার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন বিধান যুক্ত হলে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ইসির এখতিয়ার বাড়বে।

নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে নির্বাচনকালীন প্রশাসনের ওপর ইসির কর্তৃত্বে সময়ও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।

সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অথবা তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগে থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা থেকে বিভাগীয় প্রশাসন-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না। এরমধ্যে ডিআইজির বিষয়টি আগে না থাকলেও এবার যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধানে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ কর্তৃত্বের সুযোগ রয়েছে।

কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করার দরকার হলে ইসি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা করতে হবে। নির্দেশ পালনে বিলম্ব বা অনীহা করলে ইসি সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে গোপনীয় অনুবেদন দেবে, যার মাধ্যমে তাদের পদোন্নতি বা শাস্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনপূর্ব সময়, নির্বাচনকালীন বা নির্বাচনের পরে কোনো অভিযোগ উঠলে বা অপরাধ করলে তদন্ত করবে ইসি; তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। পাশাপাশি তদন্তে মিথ্যা, সাজানো বা ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযোগকারীকে সতর্ক বা তার বিরুদ্ধে মামলা করবে ইসি।

সমভোটে লটারি নয়, পুনঃভোটের বিধান চায় ইসি

দুই বা ততধিক প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট পেলে আর লটারি নয়, পুনঃভোট আয়োজনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী (আরপিও ৩৮ অনুচ্ছেদ), সমভোট হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লটারির মাধ্যমে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করেন। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে এই পদ্ধতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সমভোট হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লিখিতভাবে বিষয়টি কমিশনকে জানাবেন। পরে ইসি ওই আসনে সমভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়ে পুনঃভোট আয়োজনের নির্দেশ দেবে।

নির্বাচনী ব্যয়ে নজরদারি বাড়াতে নতুন কমিটি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের অনিয়ম রোধে ‘নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। অনিয়ম ধরা পড়লে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিকে নিরীক্ষা করতে হবে এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে। বর্তমান আইনে এসব তথ্য নিরীক্ষা কিংবা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসিকে না শুনে আদালতের আদেশ নয়

জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণের বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তির পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ইসিকে না শুনে আদালত যেন আদেশ না দেয়, সেই সুপারিশও রয়েছে।

ইসির অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আপিল নিষ্পত্তির পরও অনেকে আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান বা হারান। এতে ব্যালট ছাপা হয়ে যাওয়ার পরও জটিলতা দেখা দেয়, যা এড়াতেই নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতীক বরাদ্দের আগে মামলার নিষ্পত্তির প্রস্তাব

প্রতীক বরাদ্দের পর আদালতের আদেশে প্রার্থিতা পরিবর্তনে জটিলতা এড়াতে, মনোনয়নসংক্রান্ত মামলা প্রতীক বরাদ্দের আগেই নিষ্পত্তির প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আপিল করলে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধরা হয়। তবে আদালতে গিয়ে আদেশ নিলে ব্যালট ছাপা ও ভোট ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়।

কমিশনের প্রস্তাব- এ ধরনের মামলা প্রতীক বরাদ্দের আগে নিষ্পত্তি না হলে, তা নির্বাচনের পর ‘নির্বাচনি বিরোধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

হলফনামা থেকে নিবন্ধন স্থগিত পর্যন্ত আসছে বড় সংস্কার

নির্বাচনব্যবস্থায় প্রার্থী হলফনামা ও যোগ্যতায় নতুন নিয়ম আনার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থীদের ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি দেশের ও বিদেশের আয়ের উৎসও হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে।

অনলাইন মনোনয়ন, আইটিভিত্তিক পোস্টাল ব্যালট, প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকারে সংস্কার প্রস্তাবিত হয়েছে।

রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা বাড়াতে অনুদানসীমা নির্ধারণ, ট্যাক্স রিটার্ন জমা এবং নিবন্ধন স্থগিতের বিধান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করা হবে।

নির্বাচনী অনিয়ম ধরা পড়লে প্রার্থিতা বাতিল ও সংসদ সদস্যের আর্থিক সুবিধা ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা ইসির হাতে রাখা হয়েছে। একাধিক রিটার্নিং অফিসার প্যানেল, ইভিএম সংক্রান্ত সংশোধন ও নির্বাচনী এলাকা ভোট স্থগিতের বিধানও প্রস্তাবিত।

আলোচনায় কয়েকটি সুপারিশ

ইসির কয়েকটি সুপারিশ বেশ আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে-

> আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিদ্যমান সংজ্ঞায় পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান, আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ান আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বিএনসিসির নাম রয়েছে। এখন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের নাম যুক্তের সুপারিশ আছে।

> রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার পাশাপাশি অনলাইনে জমার ব্যবস্থা।

> সংসদে প্রার্থী হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রস্তাব। এখন প্রার্থী হতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না, স্বশিক্ষিত ব্যক্তিও ভোটে প্রার্থী হতে পারেন। স্থানীয় সরকারে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ আসায় তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

> একজনের সর্বোচ্চ দুটি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে। অবশ্য সংস্কার কমিশন কেবল একটি আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে। বর্তমানে তিন আসনে ভোট করার সুযোগ রয়েছে। আগে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করা যেতো।

> প্রার্থীকে অন্তত ‘না’ ভোটের সঙ্গে লড়াইয়ের সুপারিশ করা রয়েছে। কোনো আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে না ভোটের সঙ্গে লড়তে হবে। আবার কোনো আসনে না ভোট সবার চেয়ে বেশি পড়লে আবার নির্বাচন হতে হবে।

> ইসির তত্ত্বাবধানে প্রার্থীদের প্রচারের ব্যবস্থা। খসড়া আচরণবিধিতে এটা যুক্ত করা হয়েছে।

> প্রবাসীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা বিবেচনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটারকে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে আগ্রহের কথা জানাতে হবে।

> ভোটের প্রচারে বিলবোর্ড সংযোজন করা। নতুন আচরণবিধিতে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি সম্পাদন এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির তদারকির দায়িত্ব রয়েছে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, সংশোধিত আরপিওতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হবে। তবে প্রার্থীদের প্রচারণা ইসি করে দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে অর্থ সংস্থানের বিষয় রয়েছে।

ইসি মাছউদ বলেন, ভোটে অনিয়ম হলে আইনসাপেক্ষে পুরো আসনের কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটের দিনের পরিবর্তে ‘নির্বাচন’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি হবে। তাতে আগের মতো ক্ষমতা পাবে ইসি।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, হলফনামার মিথ্যা তথ্য নিয়ে দুই ধরনের বিষয় রয়েছে। ঋণখেলাপি হলে যোগ্যতা-অযোগ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সম্পদের তথ্যে গড়মিল থাকলে তা নিয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা হবে। কিছু বিষয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসবে, সেগুলো এখানে ইনকরপোরেট করব। মো. মেহেদী হাসান হাসিব, ঢাকা মেইল

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

চূড়ান্ত হচ্ছে আরপিও, বাড়ছে ইসির কর্তৃত্ব

আপডেট সময়: ১১:২১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

রোদমে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ছবি: সংগৃহীত


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাওয়ার আগেই ভোটের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা বা আরপিও গুরুত্বপূর্ণ। সেই আরপিওর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত করবে ইসি। খসড়ায় প্রথম দিকে ‘না ভোট’ এর বিধান রাখা হলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় তা থাকছে না। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে আরপিওতে।

বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আমরা খসড়া চূড়ান্ত করব। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

আব্দুর রহমানেল মাউসদ, ইসি

ইসি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রথম যখন আমরা আরপিও নিয়ে কাজ শুরু করি তখন সেখানে ‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। খসড়াও প্রস্তুত করেছিলাম। পরে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় ‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করবে না। রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সরকার যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে তা পরে আরপিওতে যুক্ত করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সরকার ও ইসির মধ্যে মতবিরোধ হলে প্রাধান্য পাবে ইসির চাহিদা; তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগেই প্রশাসন ও পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসির অধীনে যাবে; সরকারি কর্মকর্তারা নির্দেশনা না মানলে গোপনীয় অনুবেদন ও শাস্তির ব্যবস্থা নেবে ইসি। এছাড়া সমভোট হলে লটারি প্রথা বিলোপ করে পুনঃভোট, নির্বাচনী ব্যয় তদারকিতে কমিটি গঠন, দলের নির্বাচনী ব্যয় ও আয় ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ, প্রতীক বরাদ্দের আগেই যেন মামলার নিষ্পত্তি, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরেও ব্যবস্থা, মিথ্যা অভিযোগ দিলে মামলাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব পর্যালোচনায় রয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কমিশন সভায় আরপিও প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাউসদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আমরা খসড়া চূড়ান্ত করব। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।’

‘না ভোট’ এর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘না ভোট নিয়ে আমরা চুপচাপ আছি। ঐকমত্য কমিশন ও সরকার যদি বলে তাহলে আমরা তা পরে যুক্ত করব। আপাতত আমাদের প্রস্তাবনায় ‘না ভোট’ থাকছে না।’

আরও জোরদার হচ্ছে ইসির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা

ইসিকে প্রাধান্য এবং কর্তব্যে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চাইছে ইসি। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আরপিও-এর ৫ অনুচ্ছেদে নতুন দফা (৩) ও (৪) যুক্ত করে এ সংক্রান্ত সুপারিশে করেছে। সরকার ও ইসির মধ্যে কোনো মতবিরোধ হলে ‘ইসির চাহিদাকে’ প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টিও আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা সরকারের কোনো বিভাগ কর্তব্যে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী বা বিভাগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে ইসি। সরকারের সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ইসিকে সহায়তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাধারণত নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে। সে সময় ইসির চাহিদা বা নির্দেশনার প্রতি সরকারি দফতর ও কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকে আনুগত্য। তবে দলীয় সরকারের সময়ে একই ধরনের সহযোগিতা সব সময় পাওয়া যায় না—এমন অভিজ্ঞতা অতীতে একাধিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বা ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করার মতো ঘটনায় জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে পারে ইসি। শুধু তাই নয়, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিতে পারে কমিশন।

এ লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে দুটি নতুন উপধারা—৭(৭)(ঘ) ও ৭(৭)(ঙ)—সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা তার চাকরির বই এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি, কমিশনকে সেই তথ্য জানাতে হবে তিন কার্যদিবসের মধ্যে।

সবশেষ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন পুরোপুরি বন্ধ করার পরও দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন বিধান যুক্ত হলে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ইসির এখতিয়ার বাড়বে।

নিরপেক্ষ ভোটের স্বার্থে নির্বাচনকালীন প্রশাসনের ওপর ইসির কর্তৃত্বে সময়ও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।

সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অথবা তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগে থেকে ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা থেকে বিভাগীয় প্রশাসন-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না। এরমধ্যে ডিআইজির বিষয়টি আগে না থাকলেও এবার যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান বিধানে তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ কর্তৃত্বের সুযোগ রয়েছে।

কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করার দরকার হলে ইসি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা করতে হবে। নির্দেশ পালনে বিলম্ব বা অনীহা করলে ইসি সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে গোপনীয় অনুবেদন দেবে, যার মাধ্যমে তাদের পদোন্নতি বা শাস্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনপূর্ব সময়, নির্বাচনকালীন বা নির্বাচনের পরে কোনো অভিযোগ উঠলে বা অপরাধ করলে তদন্ত করবে ইসি; তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেয়ে তা নিষ্পত্তি করা হবে। পাশাপাশি তদন্তে মিথ্যা, সাজানো বা ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযোগকারীকে সতর্ক বা তার বিরুদ্ধে মামলা করবে ইসি।

সমভোটে লটারি নয়, পুনঃভোটের বিধান চায় ইসি

দুই বা ততধিক প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট পেলে আর লটারি নয়, পুনঃভোট আয়োজনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী (আরপিও ৩৮ অনুচ্ছেদ), সমভোট হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লটারির মাধ্যমে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করেন। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে এই পদ্ধতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সমভোট হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা লিখিতভাবে বিষয়টি কমিশনকে জানাবেন। পরে ইসি ওই আসনে সমভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়ে পুনঃভোট আয়োজনের নির্দেশ দেবে।

নির্বাচনী ব্যয়ে নজরদারি বাড়াতে নতুন কমিটি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয়ের অনিয়ম রোধে ‘নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষিত অডিট ফার্মের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। অনিয়ম ধরা পড়লে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ব্যয় ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিকে নিরীক্ষা করতে হবে এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাবও রয়েছে। বর্তমান আইনে এসব তথ্য নিরীক্ষা কিংবা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসিকে না শুনে আদালতের আদেশ নয়

জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণের বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তির পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, এমন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে ইসিকে না শুনে আদালত যেন আদেশ না দেয়, সেই সুপারিশও রয়েছে।

ইসির অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আপিল নিষ্পত্তির পরও অনেকে আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান বা হারান। এতে ব্যালট ছাপা হয়ে যাওয়ার পরও জটিলতা দেখা দেয়, যা এড়াতেই নতুন বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতীক বরাদ্দের আগে মামলার নিষ্পত্তির প্রস্তাব

প্রতীক বরাদ্দের পর আদালতের আদেশে প্রার্থিতা পরিবর্তনে জটিলতা এড়াতে, মনোনয়নসংক্রান্ত মামলা প্রতীক বরাদ্দের আগেই নিষ্পত্তির প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আপিল করলে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ধরা হয়। তবে আদালতে গিয়ে আদেশ নিলে ব্যালট ছাপা ও ভোট ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়।

কমিশনের প্রস্তাব- এ ধরনের মামলা প্রতীক বরাদ্দের আগে নিষ্পত্তি না হলে, তা নির্বাচনের পর ‘নির্বাচনি বিরোধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

হলফনামা থেকে নিবন্ধন স্থগিত পর্যন্ত আসছে বড় সংস্কার

নির্বাচনব্যবস্থায় প্রার্থী হলফনামা ও যোগ্যতায় নতুন নিয়ম আনার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থীদের ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি দেশের ও বিদেশের আয়ের উৎসও হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে।

অনলাইন মনোনয়ন, আইটিভিত্তিক পোস্টাল ব্যালট, প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকারে সংস্কার প্রস্তাবিত হয়েছে।

রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা বাড়াতে অনুদানসীমা নির্ধারণ, ট্যাক্স রিটার্ন জমা এবং নিবন্ধন স্থগিতের বিধান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করা হবে।

নির্বাচনী অনিয়ম ধরা পড়লে প্রার্থিতা বাতিল ও সংসদ সদস্যের আর্থিক সুবিধা ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা ইসির হাতে রাখা হয়েছে। একাধিক রিটার্নিং অফিসার প্যানেল, ইভিএম সংক্রান্ত সংশোধন ও নির্বাচনী এলাকা ভোট স্থগিতের বিধানও প্রস্তাবিত।

আলোচনায় কয়েকটি সুপারিশ

ইসির কয়েকটি সুপারিশ বেশ আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে-

> আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিদ্যমান সংজ্ঞায় পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান, আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ান আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বিএনসিসির নাম রয়েছে। এখন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের নাম যুক্তের সুপারিশ আছে।

> রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার পাশাপাশি অনলাইনে জমার ব্যবস্থা।

> সংসদে প্রার্থী হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রস্তাব। এখন প্রার্থী হতে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না, স্বশিক্ষিত ব্যক্তিও ভোটে প্রার্থী হতে পারেন। স্থানীয় সরকারে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ আসায় তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

> একজনের সর্বোচ্চ দুটি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে। অবশ্য সংস্কার কমিশন কেবল একটি আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে। বর্তমানে তিন আসনে ভোট করার সুযোগ রয়েছে। আগে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করা যেতো।

> প্রার্থীকে অন্তত ‘না’ ভোটের সঙ্গে লড়াইয়ের সুপারিশ করা রয়েছে। কোনো আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে না ভোটের সঙ্গে লড়তে হবে। আবার কোনো আসনে না ভোট সবার চেয়ে বেশি পড়লে আবার নির্বাচন হতে হবে।

> ইসির তত্ত্বাবধানে প্রার্থীদের প্রচারের ব্যবস্থা। খসড়া আচরণবিধিতে এটা যুক্ত করা হয়েছে।

> প্রবাসীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাসূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা বিবেচনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটারকে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে আগ্রহের কথা জানাতে হবে।

> ভোটের প্রচারে বিলবোর্ড সংযোজন করা। নতুন আচরণবিধিতে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি সম্পাদন এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির তদারকির দায়িত্ব রয়েছে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, সংশোধিত আরপিওতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হবে। তবে প্রার্থীদের প্রচারণা ইসি করে দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে অর্থ সংস্থানের বিষয় রয়েছে।

ইসি মাছউদ বলেন, ভোটে অনিয়ম হলে আইনসাপেক্ষে পুরো আসনের কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটের দিনের পরিবর্তে ‘নির্বাচন’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি হবে। তাতে আগের মতো ক্ষমতা পাবে ইসি।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, হলফনামার মিথ্যা তথ্য নিয়ে দুই ধরনের বিষয় রয়েছে। ঋণখেলাপি হলে যোগ্যতা-অযোগ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সম্পদের তথ্যে গড়মিল থাকলে তা নিয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা হবে। কিছু বিষয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসবে, সেগুলো এখানে ইনকরপোরেট করব। মো. মেহেদী হাসান হাসিব, ঢাকা মেইল