ভোট, নির্বাচন কমিশন, ব্যালট বাক্স, ভোটের লাইন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সে হিসেবে নির্বাচন কমিশন পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি সারছে।
এর অংশ হিসেবে প্রায় ৯ লাখ ২৫ হাজার ৬০৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রশিক্ষণ শুরু করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে মোট ৪৪ হাজার ৯৩৪টি ভোটকেন্দ্র এবং দুই লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৫টি ভোটকক্ষ থাকবে। এর মধ্যে সম্ভাব্য দুই হাজার ৭৮৬টি অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র ও ১৭ হাজার ৩০১টি অতিরিক্ত ভোটকক্ষ যোগ হবে। এসব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজন হবে প্রায় আট লাখ ৮১ হাজার ৫২৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার।
আগের নির্বাচনের মতো এবারও প্রয়োজনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি কর্মকর্তা প্যানেলভুক্ত এবং ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসেবে এবার ৯ লাখ ২৫ হাজারের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান
নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি (T0T) শুরুর পরিকল্পনা আছে আমাদের। সাড়ে তিন হাজারের বেশি কর্মকর্তা এ কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ নেবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশিক্ষণে কত টাকা ব্যয় হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন। এ প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি টাকা।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ টাকা দিয়ে অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কোর প্রশিক্ষণ, টোট প্রশিক্ষণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ সবই এর আওতাভুক্ত। ইতোমধ্যে আমাদের একটা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। আরও লাগলে পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণে।’
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের একটি চিত্র। ছবি- সংগৃহীত
সেপ্টেম্বরে প্রশিক্ষণ নেবেন ৩ হাজার ৬০০ প্রশিক্ষক
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করবে ইসি। এতে ৩ হাজার ৬০০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেবেন।
ইসি কর্মকর্তা বলেন, তফসিল ঘোষণার তিন থেকে সাড়ে তিন মাস আগে থেকেই কোর (Core) ও প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ (TOT) কার্যক্রম শুরু করতে হয়।
সে অনুযায়ী চলতি মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দেওয়া হবে কোর প্রশিক্ষণ। এতে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তা অংশ নেবেন—যা দুটি ব্যাচে দুই দিনব্যাপী হবে। এরপর ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। যেখানে ইসির মাঠ পর্যায়ের ও অন্যান্য বিভাগের সম্ভাব্য তিন হাজার ৬০০ জন কর্মকর্তাকে ১৪০-১৫০টি ব্যাচে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল শিগগির
ভোট সামনে রেখে শিগগির ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত করবে ইসি। এক্ষেত্রে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের তথ্য প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত রাখবে সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ সংক্রান্ত সভায় বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ থেকে কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে। প্যানেলভুক্তির চিঠিতে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার কথাও জানান তিনি।
প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের
তফসিলের আগে ও পরে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের জন্যও প্রশিক্ষণ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া EMS সফটওয়্যার পরিচালনা এবং অনলাইনে মনোনয়নপত্র পূরণে প্রার্থীদের সহায়তার জন্য প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে নিজস্ব কর্মচারী এবং আউটসোর্সিং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদেরও প্রশিক্ষণ দেবে ইসি।
জানা যায়, ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ৮ লাখ ২৫ হাজার জন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪৭ জন। একাদশ জাতীয় ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। মো. মেহেদী হাসান হাসিব, ঢাকা মেইল