০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

‘রাজাকার সবগুলোকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’

  • আপডেট সময়: ০৭:২৭:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • 2

ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে কতটা মরিয়া ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তার কিছু ফোনালাপে। এবার তার ফোনালাপের নতুন একটি অডিও ক্লিপ তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। ফরেনসিকে সত্যতা পাওয়ার পর প্রসিকিউশন সেই ফোনালাপের অডিওটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) শেখ হাসিনার মোবাইল কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে। এটি তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে করেছিলেন।

সেই ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়- ‘রাজাকারের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলোকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়বো না।’

আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক মাকসুদ কামালকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইংল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতির জন্য কয়েকজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল, ওই রকম অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া আরও কোনো উপায় নাই।’

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ফোনালাপটি পাওয়ার পর তারা এটির ফরেনসিক করেন। এর সত্যতা পাওয়ার পর এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার যে বিচারকাজ চলছে এতে এই অডিওটি প্রমাণ হিসেবে কাজে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।

মামলা পরিচালনায় জড়িতদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি

এদিকে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আদালতের কর্মচারীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়টি উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। গতকাল রোববার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলের কথোপকথন (ফাঁস হওয়া অডিও) তুলে ধরা হয়েছে। এর এক জায়গায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ শেখ হাসিনার এই কথার পর বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি আসসালামু আলাইকুম।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।’

আন্দোলনকারীদের সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

অডিওতে শেখ হাসিনাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘একটা কথা আমি বলি, তোমাদের কার বাড়ি পোড়াইছে কে?’ তখন বুলবুল বলেন, ‘ওই ওরাই নেত্রী, সবাই, জামাত-বিএনপি সকলেই।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নাই?’ বুলবুল বলেন, ‘আছে নেত্রী।’ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি নাই।’ বুলবুল বলেন, ‘জি, আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’ বুলবুল বলেন, ‘জি না, না নেত্রী, জি।’ এরপর শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।’

কথোপকথনের এই বিষয়টি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, এসব বলে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে বুলবুলকে উসকে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথনের ওই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরেও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির তদন্ত করেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তদন্ত সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, গাইবান্ধার সাংবাদিক সুমন মিয়া ফাঁস হওয়া ওই অডিও প্রথমে পান। অডিওর কথোপকথনটি স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বুলবুল। তদন্তে আরও উঠে আসে, ‘এ টিম’ নামের একটি গ্রুপের (অনলাইনভিত্তিক) মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে ও জুমে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) গোপন সভা হতো। গত বছরের ২৫ অক্টোবর সে রকম একটি সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।

বুলবুলের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝামাঝি সময়ে শেখ হাসিনা কী বলেছেন, সেটিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। আর এক মামলার যে শাস্তি আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’

রায়ে বলা হয়েছে, বুলবুলের কাছে শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন। সে জন্য বুলবুলকে তিনি ২২৭ জনের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন।

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

‘রাজাকার সবগুলোকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’

আপডেট সময়: ০৭:২৭:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ছিলেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে কতটা মরিয়া ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তার কিছু ফোনালাপে। এবার তার ফোনালাপের নতুন একটি অডিও ক্লিপ তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। ফরেনসিকে সত্যতা পাওয়ার পর প্রসিকিউশন সেই ফোনালাপের অডিওটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে।

সোমবার (১১ আগস্ট) শেখ হাসিনার মোবাইল কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ্যে এসেছে। এটি তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে করেছিলেন।

সেই ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়- ‘রাজাকারের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলোকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়বো না।’

আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক মাকসুদ কামালকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইংল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতির জন্য কয়েকজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল, ওই রকম অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া আরও কোনো উপায় নাই।’

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ফোনালাপটি পাওয়ার পর তারা এটির ফরেনসিক করেন। এর সত্যতা পাওয়ার পর এটি ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার যে বিচারকাজ চলছে এতে এই অডিওটি প্রমাণ হিসেবে কাজে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।

মামলা পরিচালনায় জড়িতদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি

এদিকে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আদালতের কর্মচারীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়টি উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে। গতকাল রোববার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলের কথোপকথন (ফাঁস হওয়া অডিও) তুলে ধরা হয়েছে। এর এক জায়গায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ শেখ হাসিনার এই কথার পর বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি আসসালামু আলাইকুম।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।’

আন্দোলনকারীদের সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

অডিওতে শেখ হাসিনাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘একটা কথা আমি বলি, তোমাদের কার বাড়ি পোড়াইছে কে?’ তখন বুলবুল বলেন, ‘ওই ওরাই নেত্রী, সবাই, জামাত-বিএনপি সকলেই।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নাই?’ বুলবুল বলেন, ‘আছে নেত্রী।’ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি নাই।’ বুলবুল বলেন, ‘জি, আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’ বুলবুল বলেন, ‘জি না, না নেত্রী, জি।’ এরপর শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।’

কথোপকথনের এই বিষয়টি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, এসব বলে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে বুলবুলকে উসকে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথনের ওই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরেও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির তদন্ত করেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তদন্ত সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, গাইবান্ধার সাংবাদিক সুমন মিয়া ফাঁস হওয়া ওই অডিও প্রথমে পান। অডিওর কথোপকথনটি স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বুলবুল। তদন্তে আরও উঠে আসে, ‘এ টিম’ নামের একটি গ্রুপের (অনলাইনভিত্তিক) মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে ও জুমে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) গোপন সভা হতো। গত বছরের ২৫ অক্টোবর সে রকম একটি সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।

বুলবুলের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝামাঝি সময়ে শেখ হাসিনা কী বলেছেন, সেটিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। আর এক মামলার যে শাস্তি আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’

রায়ে বলা হয়েছে, বুলবুলের কাছে শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন। সে জন্য বুলবুলকে তিনি ২২৭ জনের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন।