
বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম হীরা কাটা ও পালিশের কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাট। রাজ্যটির সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ভাবনগর, আমরেলি এবং জুনাগড়ে হীরা কাটা এবং পালিশের কয়েক হাজার কারখানা রয়েছে, যেখানে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এসব কারখানা নির্ভর করে বিদেশি চাহিদার ওপর, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। তবে সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের জেরে গুজরাটের ব্যবসায় ব্যাপক ধস নেমেছে। এর জেরে এই খাতের প্রায় ১ লাখ কর্মী ইতোমধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গুজরাটের ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক আরোপ করার পর থেকে গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে প্রায় ১ লাখ হীরা কাটা এবং পালিশ করার শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন।
ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ভাবেশ ট্যাঙ্ক বলেছেন, ‘ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের জেরে মার্কিন ক্রেতারা অনেক রফতানি আদেশ হয় স্থগিত অথবা বাতিল করা হয়েছে। এর জেরে গত ১০ দিনে কর্মী ছাঁটাইয়ের গতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। এরমধ্যে ভাবনগর, আমরেলি এবং জুনাগড়ের ছোট কারখানাগুলোর বেশিরভাগ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন, যারা সাধারণত রুক্ষ হীরা কাটা এবং পালিশের কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘সৌরাষ্ট্র, জুনাগড়, ভাবনগর এবং আমরেলি জুড়ে বিস্তৃত ছোট ছোট কারখানাগুলোতে প্রায় ৪ লাখ কর্মী কাজ করেন। চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন হীরার আমদানি কমিয়ে দিলে এই ব্যবসায় অবনতি হচ্ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে গত এপ্রিলে ট্রাম্পের ঘোষিত মার্কিন শুল্কের ফলে, যা হীরার ব্যবসায় অনিশ্চয়তা তৈরি করে। তারপর থেকে অধিকাংশ কারখানায় হীরা কাটা এবং পালিশ করার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে।’
ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হীরা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘কিরণ জেমস’, যার বার্ষিক আয় প্রায় ১৭,০০০ কোটি রুপি- এর ডিরেক্টর দীনেশ লাখানি বলেন, উচ্চ শুল্কের জেরে যদি অর্ডারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, তাহলে খরচ পরিচালনার জন্য আমাদের কর্মী কমাতে বাধ্য হতে পারি।
প্রসঙ্গত, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম হীরা রফতানিকারক, যারা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনসহ প্রধান হীরার বাজারে সরবরাহ করে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০টি হীরার মধ্যে ৯টিই ভারতে কাটা এবং পালিশ করা হয়। ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলারের মূল্যের রত্ন ও গহনা রফতানি করেছে ভারত, যার বেশিরভাগই কাটা এবং পালিশ করা হীরা এবং হীরার গহনা।
হীরা শিল্পের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে শুল্ক ব্যবধান দূর করার জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা দ্রুত করার জন্য ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন এবং উচ্চতর রফতানি প্রণোদনা, ভর্তুকি এবং দ্রুত পণ্য ও পরিষেবা কর ফেরত দেওয়ার দাবিও করেছেন।
আরো পড়ুন
বাংলাদেশের শুল্ক কমায় ভারতের পোশাক বাজারে ধস
দেশটির আরেক শীর্ষস্থানীয় হীরা রফতানিকারক গ্যালান্ট জুয়েলারির এমডি অরবিন্দ গুপ্তা বলেন, ‘শুল্কের কারণে তীব্র মূল্যবৃদ্ধি বাণিজ্যের পরিমাণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে, লভ্যাংশের মার্জিন সংকুচিত করবে এবং সম্ভাব্যভাবে হাজার হাজার কর্মী জাকরি হারাবে।’
হীরা ব্যবসার কেন্দ্রস্থল সুরাট-ভিত্তিক ধানি জুয়েলসের এমডি বিজয় কুমার মাঙ্গুকিয়া বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারা ভাবছেন ভারত থেকে হীরা নিয়ে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে গয়না তৈরি করা যায় কিনা, কারণ এই দেশগুলোতে মার্কিন শুল্ক কম।’