০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

খাল হারিয়ে ‘বেহাল’ ঢাকা

  • আপডেট সময়: ০৮:৩০:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • 3

নগরায়নে হারিয়ে গেছে ঢাকার খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল


-খাল বন্ধ হওয়ায় মাঝারি বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী

-অপরিকল্পিত নগরায়নেই হারিয়ে গেছে খালগুলো

-‘দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে ব্যর্থ হয়েছে’

-১৯টি খালের ১২৫ কিলোমিটার সচলের লক্ষ্যমাত্রা

এক সময় রাজধানী ঢাকার বুক চিরে শত শত খাল বয়ে যেত। আজ সেই খালগুলোর বেশির ভাগই আর নেই। দখল, অবহেলা আর নগরায়নের ধাক্কায় সেগুলো হারিয়ে গেছে। ফলে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। মাঝারি বৃষ্টিতেই ডুবে যায় ঢাকা। ভুগতে হয় কোটি মানুষকে। খালগুলোর পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকলে রাজধানীবাসীর এই অবস্থা হতো না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খালগুলো হারিয়ে যাওয়ার কারণেই ঢাকার আজ ‘বেহাল’ দশা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার মোট খালের দৈর্ঘ্য এক সময় ছিল ৩২৬ কিলোমিটার, যা আজ নেমে এসেছে ২০৬ কিলোমিটারে। অর্থাৎ প্রায় ১২০ কিলোমিটার বা ৩০৭ হেক্টর জলপথ হারিয়ে গেছে।

পুরনো মানচিত্রে দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর, বেগুনবাড়ি, ধোলাই, রায়েরবাজারসহ বহু খাল ছিল শহরের প্রাণ। তবে আজ সেগুলোকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোথাও উঁচু দালান, কোথাও রাস্তাঘাট, কোথাও বস্তি বা মার্কেট। গবেষণায় দেখা গেছে, হারানো খালের জমির এক-তৃতীয়াংশে স্থায়ী স্থাপনা, প্রায় ১৯ শতাংশে প্লট এবং ১৭ শতাংশে রাস্তা তৈরি হয়েছে।

“এখন ঢাকা শহরে ড্রেনেজ পদ্ধতি ভালো করতে হলে অবশ্যই খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং স্থায়ী ও টেকসইভাবে এই খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।”

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দখলকারীদের পেছনে থাকে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ। সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা অনেক সময় নীরব দর্শকের মতো। খাল রক্ষার আইন থাকলেও প্রয়োগের উদাহরণ খুবই কম। বর্ষাকালে এর ফল ভয়াবহ হয়। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি ঢাকাকে অচল করে দেয়।

জানা যায়, ২০২৩ সালের জুনে এক দিনে রাজধানীতে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। দুই ঘণ্টার মধ্যে মিরপুর, বাড্ডা, শ্যামলী থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত বহু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এমন ঘটনা বছরে একাধিকবার ঘটে। শুধু জলাবদ্ধতা নয়, পানি স্থির থাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ।

এই দীর্ঘ যন্ত্রণার মধ্যে এবার রাজধানীর খাল পুনরুদ্ধারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর ১৯টি খালের ১২৫ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক সচল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ছয়টি খাল সংস্কার কার্যক্রম উদ্বোধন হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি খাল সংস্কার করা হবে।

নগরায়ন গিলে খাচ্ছে খাল, নেই কার্যকরী পদক্ষেপ

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকার খাল হারানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় আশির দশক থেকে, যখন উঁচু ও বন্যামুক্ত এলাকায় নগরায়ন শেষ হয়ে নিম্নভূমি, জলাশয় ও খালে বসতি বিস্তার শুরু হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও হাউজিং কোম্পানির প্রকল্পে পরিকল্পনাহীনভাবে খাল ভরাট ও দখল বাড়তে থাকে। গত চার দশকে অনেক ছোট শাখা-প্রশাখার খাল পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে, কিছু খাল বক্স কালভার্টে রূপান্তরিত হয়েছে, আবার কিছু সঙ্কুচিত বা ময়লা-মাটি জমে সমতল হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের গ্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে খাল চিহ্নিতকরণ থাকলেও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগগুলো টেকসই হয়নি। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে খালের সীমানা চিহ্নিত, দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ এবং সংরক্ষণ করলে খাল পুনরুদ্ধার সম্ভব। সুষ্ঠু ড্রেনেজ নিশ্চিত করতে খাল রক্ষা অপরিহার্য। তবে টেকসই ফল পেতে খাল পরিষ্কার, কঠিন বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ, বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনসচেতনতা তৈরি জরুরি। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন না হলে খাল সংরক্ষণ দীর্ঘমেয়াদে সফল হবে না।

খাল থাকলেও নেই পানির প্রবাহ। ছবি: ঢাকা মেইল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আশির দশক থেকে খালগুলো হারাতে শুরু করে। যখন ঢাকা শহরে উঁচু এলাকাগুলোতে নগরায়ন শেষ হয়ে গেল তখন আশেপাশে যত নিম্নভূমি আছে সেগুলোতে নগরায়িত হওয়া শুরু করল অপরিকল্পিতভাবে। এরপর নিম্নভূমি, নিচু জলাশয় আর খালগুলো দখল হতে শুরু করল। এরপর সেগুলোও নগরায়ন হতে শুরু করল। একটা সময় ঢাকা শহরে নিচু এলাকা দিয়ে খালগুলো প্রবাহিত থাকত। আর যখন হাউজিংগুলো তৈরি হওয়া শুরু করল ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং হাউজিং কোম্পানির অধীনে, তখন ধীরে ধীরে খালগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করে। বলা যায়, গত চার দশকে এই পরিকল্পিত নগরায়নের কারণে খালগুলো হারিয়ে গেছে।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন খালের চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে কয়েকভাবে। এক হচ্ছে কিছু ছোট খাল আছে, যা একেবারে হারিয়ে গেছে। যেগুলো ব্রাঞ্চ ছিল, শাখা-প্রশাখা ছিল। আবার কিছু খাল আছে যেগুলো বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। যেমন-সেগুনবাড়ি খাল অথবা ধোলাইখাল। কিছু খাল আছে যেগুলো পুরোপুরি সংকুচিত হয়ে গেছে বলা যায়। যেখানে ৪০ ফিট ছিল, এখন আছে ১০ ফিট বা ১৫ ফিট। আবার কিছু খাল হয়ে গেছে এমন যে, ময়লা, কাদা, মাটি এগুলো জমে এগুলো সমতল হয়ে গেছে। এভাবে নানাভাবে খালের শাখা-প্রশাখাগুলো হারিয়ে গেছে।’

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘কখনো কখনো সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেয়, কিন্তু উদ্যোগগুলো টেকসই হয় না। খাল পরিষ্কার করে, কিন্তু এক মাস দেড় মাস পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ এখানে যে কঠিন বর্জ্যগুলো আছে, ময়লা আছে এবং অন্যান্য যে বর্জ্যগুলো আছে, এগুলো এসে মানুষ এখানে ফেলে। এখন পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই খালকে পরিষ্কার রাখতে হবে। আর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ করার দক্ষতা বাড়াতে হবে। খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তখনই এটা টেকসই হবে, না হলে টেকসই হবে না।’

করণীয় সম্পর্কে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এখন ঢাকা শহরে ড্রেনেজ পদ্ধতি ভালো করতে হলে অবশ্যই খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং স্থায়ী ও টেকসইভাবে এই খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।’

পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা সমাধানে খালগুলো দখলের হাত থেকে উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। দেখা যায়, কালেভদ্রে রাজধানীর বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে মাঠে নামে প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলে আর অন্যদিকে আবার খাল দখলের মহোৎসব চলতে থাকে! বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়।

দখলে হারিয়ে গেছে খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একটা মানুষের যে রকম রক্ত শিরা-উপশিরার মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং তাকে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করে; ঠিক তেমনি একটা শহরের বসবাসযোগ্যতা তৈরি করার ক্ষেত্রে এই শহরের খালগুলো একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নদীমাতৃক বাংলাদেশের শহরগুলো তৈরিই হয়েছে কোনো না কোনো নদীর তীরে। সেই নদী তীরের ড্রেনেজ সিস্টেমটাকে জিইয়ে রাখে। ঢাকা শহরের যখন বিস্তার শুরু হয় তখন থেকেই আস্তে আস্তে করে এই খালগুলোর ওপর বিভিন্ন রকমের আগ্রাসন শুরু হয়। ৫০টির কাছাকাছি খাল থাকার পরও সেগুলো এখন বিলীন হয়ে গেছে। বেগুনবাড়ি খাল, কুর্মিটোলা খাল, দোহাজারী খাল, মগবাজার খাল, গাবতলী খাল, হাতিরঝিলের সংযুক্ত খালগুলো একসময় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে এই ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কিংবা নৌ চলাচল বজায় রাখত।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, যে খালগুলো অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে এবং কোনো কোনো জায়গায় খালের ওপর বহু অট্টালিকা তৈরি হয়েছে। এটার ফলাফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিটের ভেতরে আমরা জলাবদ্ধতায় পড়ে যাচ্ছি ঢাকায়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই যে খালের ভরাট, দখল, দূষণ এবং পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া, এটি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালের সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কোন অবকাঠামোগুলো খালের সীমানায় পড়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। খালের দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা হবে এবং খাল নেটওয়ার্ক পুরো ঢাকায় পুনরুদ্ধার করা হবে।

ঢাকার খালগুলোতে এখনো ব্যাপক দখল রয়েছে। বিশেষ করে মিরপুরের রূপনগর খাল, যা একসময় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখন ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। অভিযোগ রয়েছে, খালের জায়গা দখল করে নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে খোদ তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা। ২০১৯ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও এ নিয়ে মামলা করেছিল।

ময়লা-আবর্জনা ফেলে ধ্বংস করা হয়েছে খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল

জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা পূর্বে ২৬টি খাল ও প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় নালা পরিচালনা করত। ২০২০ সালে ওয়াসার অধীনে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের হাতে হস্তান্তরিত হয়।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যে রাজধানীর ২২০ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন ও পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১১২ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হলে শহরের জলাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, এই ১০৮ কিলোমিটার খাল খননের জন্য পাঁচ কোটি টাকাও খরচ হয়নি, যা দেখিয়েছে কম টাকায়ও কার্যকর কাজ করা সম্ভব।

খাল পুনরুদ্ধারের সঙ্গে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দুই পাড়ে ২১৬ কিলোমিটারব্যাপী বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খালের পাড়ে হাঁটার ব্যবস্থা, গাছপালা, ফুল-ফল ও পাখি উপভোগের সুযোগ থাকবে। এই পদক্ষেপের ফলে শহরের পরিবেশ ও নাগরিক জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।

এদিকে রাজউক ‘ড্যাপ ২০২২-২০৩৫’ অনুযায়ী পার্ক, খেলার মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণে সরকারি দফতরগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে আফতাবনগর, মিরপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও ও তুরাগ এলাকায় প্রায় এক হাজার ৫০০ একর জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপন ও দখল রোধের কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর এই উদ্যোগ শুধু খাল উদ্ধারই নয়, বরং নগরের বাসযোগ্যতা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম। খালের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, পাড় সংরক্ষণ, হাঁটার রাস্তা, বৃক্ষরোপণ এবং জলাধার সংরক্ষণ—সবই মিলিয়ে ঢাকার নগর জীবনকে আরও টেকসই করার চেষ্টা। আব্দুল হাকিম, ঢাকা মেইল

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

খাল হারিয়ে ‘বেহাল’ ঢাকা

আপডেট সময়: ০৮:৩০:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

নগরায়নে হারিয়ে গেছে ঢাকার খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল


-খাল বন্ধ হওয়ায় মাঝারি বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী

-অপরিকল্পিত নগরায়নেই হারিয়ে গেছে খালগুলো

-‘দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে ব্যর্থ হয়েছে’

-১৯টি খালের ১২৫ কিলোমিটার সচলের লক্ষ্যমাত্রা

এক সময় রাজধানী ঢাকার বুক চিরে শত শত খাল বয়ে যেত। আজ সেই খালগুলোর বেশির ভাগই আর নেই। দখল, অবহেলা আর নগরায়নের ধাক্কায় সেগুলো হারিয়ে গেছে। ফলে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। মাঝারি বৃষ্টিতেই ডুবে যায় ঢাকা। ভুগতে হয় কোটি মানুষকে। খালগুলোর পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকলে রাজধানীবাসীর এই অবস্থা হতো না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খালগুলো হারিয়ে যাওয়ার কারণেই ঢাকার আজ ‘বেহাল’ দশা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার মোট খালের দৈর্ঘ্য এক সময় ছিল ৩২৬ কিলোমিটার, যা আজ নেমে এসেছে ২০৬ কিলোমিটারে। অর্থাৎ প্রায় ১২০ কিলোমিটার বা ৩০৭ হেক্টর জলপথ হারিয়ে গেছে।

পুরনো মানচিত্রে দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর, বেগুনবাড়ি, ধোলাই, রায়েরবাজারসহ বহু খাল ছিল শহরের প্রাণ। তবে আজ সেগুলোকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোথাও উঁচু দালান, কোথাও রাস্তাঘাট, কোথাও বস্তি বা মার্কেট। গবেষণায় দেখা গেছে, হারানো খালের জমির এক-তৃতীয়াংশে স্থায়ী স্থাপনা, প্রায় ১৯ শতাংশে প্লট এবং ১৭ শতাংশে রাস্তা তৈরি হয়েছে।

“এখন ঢাকা শহরে ড্রেনেজ পদ্ধতি ভালো করতে হলে অবশ্যই খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং স্থায়ী ও টেকসইভাবে এই খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।”

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ, নগর পরিকল্পনাবিদ

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দখলকারীদের পেছনে থাকে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ। সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা অনেক সময় নীরব দর্শকের মতো। খাল রক্ষার আইন থাকলেও প্রয়োগের উদাহরণ খুবই কম। বর্ষাকালে এর ফল ভয়াবহ হয়। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি ঢাকাকে অচল করে দেয়।

জানা যায়, ২০২৩ সালের জুনে এক দিনে রাজধানীতে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। দুই ঘণ্টার মধ্যে মিরপুর, বাড্ডা, শ্যামলী থেকে শুরু করে মতিঝিল পর্যন্ত বহু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এমন ঘটনা বছরে একাধিকবার ঘটে। শুধু জলাবদ্ধতা নয়, পানি স্থির থাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ।

এই দীর্ঘ যন্ত্রণার মধ্যে এবার রাজধানীর খাল পুনরুদ্ধারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর ১৯টি খালের ১২৫ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক সচল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ছয়টি খাল সংস্কার কার্যক্রম উদ্বোধন হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি খাল সংস্কার করা হবে।

নগরায়ন গিলে খাচ্ছে খাল, নেই কার্যকরী পদক্ষেপ

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকার খাল হারানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় আশির দশক থেকে, যখন উঁচু ও বন্যামুক্ত এলাকায় নগরায়ন শেষ হয়ে নিম্নভূমি, জলাশয় ও খালে বসতি বিস্তার শুরু হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও হাউজিং কোম্পানির প্রকল্পে পরিকল্পনাহীনভাবে খাল ভরাট ও দখল বাড়তে থাকে। গত চার দশকে অনেক ছোট শাখা-প্রশাখার খাল পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে, কিছু খাল বক্স কালভার্টে রূপান্তরিত হয়েছে, আবার কিছু সঙ্কুচিত বা ময়লা-মাটি জমে সমতল হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের গ্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে খাল চিহ্নিতকরণ থাকলেও পুনরুদ্ধারের উদ্যোগগুলো টেকসই হয়নি। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে খালের সীমানা চিহ্নিত, দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ এবং সংরক্ষণ করলে খাল পুনরুদ্ধার সম্ভব। সুষ্ঠু ড্রেনেজ নিশ্চিত করতে খাল রক্ষা অপরিহার্য। তবে টেকসই ফল পেতে খাল পরিষ্কার, কঠিন বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণ, বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনসচেতনতা তৈরি জরুরি। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন না হলে খাল সংরক্ষণ দীর্ঘমেয়াদে সফল হবে না।

খাল থাকলেও নেই পানির প্রবাহ। ছবি: ঢাকা মেইল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আশির দশক থেকে খালগুলো হারাতে শুরু করে। যখন ঢাকা শহরে উঁচু এলাকাগুলোতে নগরায়ন শেষ হয়ে গেল তখন আশেপাশে যত নিম্নভূমি আছে সেগুলোতে নগরায়িত হওয়া শুরু করল অপরিকল্পিতভাবে। এরপর নিম্নভূমি, নিচু জলাশয় আর খালগুলো দখল হতে শুরু করল। এরপর সেগুলোও নগরায়ন হতে শুরু করল। একটা সময় ঢাকা শহরে নিচু এলাকা দিয়ে খালগুলো প্রবাহিত থাকত। আর যখন হাউজিংগুলো তৈরি হওয়া শুরু করল ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং হাউজিং কোম্পানির অধীনে, তখন ধীরে ধীরে খালগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করে। বলা যায়, গত চার দশকে এই পরিকল্পিত নগরায়নের কারণে খালগুলো হারিয়ে গেছে।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন খালের চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে কয়েকভাবে। এক হচ্ছে কিছু ছোট খাল আছে, যা একেবারে হারিয়ে গেছে। যেগুলো ব্রাঞ্চ ছিল, শাখা-প্রশাখা ছিল। আবার কিছু খাল আছে যেগুলো বক্স কালভার্ট করা হয়েছে। যেমন-সেগুনবাড়ি খাল অথবা ধোলাইখাল। কিছু খাল আছে যেগুলো পুরোপুরি সংকুচিত হয়ে গেছে বলা যায়। যেখানে ৪০ ফিট ছিল, এখন আছে ১০ ফিট বা ১৫ ফিট। আবার কিছু খাল হয়ে গেছে এমন যে, ময়লা, কাদা, মাটি এগুলো জমে এগুলো সমতল হয়ে গেছে। এভাবে নানাভাবে খালের শাখা-প্রশাখাগুলো হারিয়ে গেছে।’

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ‘কখনো কখনো সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেয়, কিন্তু উদ্যোগগুলো টেকসই হয় না। খাল পরিষ্কার করে, কিন্তু এক মাস দেড় মাস পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অর্থাৎ এখানে যে কঠিন বর্জ্যগুলো আছে, ময়লা আছে এবং অন্যান্য যে বর্জ্যগুলো আছে, এগুলো এসে মানুষ এখানে ফেলে। এখন পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই খালকে পরিষ্কার রাখতে হবে। আর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ করার দক্ষতা বাড়াতে হবে। খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। তখনই এটা টেকসই হবে, না হলে টেকসই হবে না।’

করণীয় সম্পর্কে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এখন ঢাকা শহরে ড্রেনেজ পদ্ধতি ভালো করতে হলে অবশ্যই খালগুলো উদ্ধার করতে হবে, সীমানা চিহ্নিত করতে হবে এবং স্থায়ী ও টেকসইভাবে এই খালগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।’

পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা সমাধানে খালগুলো দখলের হাত থেকে উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। দেখা যায়, কালেভদ্রে রাজধানীর বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে মাঠে নামে প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলে আর অন্যদিকে আবার খাল দখলের মহোৎসব চলতে থাকে! বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়।

দখলে হারিয়ে গেছে খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একটা মানুষের যে রকম রক্ত শিরা-উপশিরার মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং তাকে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করে; ঠিক তেমনি একটা শহরের বসবাসযোগ্যতা তৈরি করার ক্ষেত্রে এই শহরের খালগুলো একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নদীমাতৃক বাংলাদেশের শহরগুলো তৈরিই হয়েছে কোনো না কোনো নদীর তীরে। সেই নদী তীরের ড্রেনেজ সিস্টেমটাকে জিইয়ে রাখে। ঢাকা শহরের যখন বিস্তার শুরু হয় তখন থেকেই আস্তে আস্তে করে এই খালগুলোর ওপর বিভিন্ন রকমের আগ্রাসন শুরু হয়। ৫০টির কাছাকাছি খাল থাকার পরও সেগুলো এখন বিলীন হয়ে গেছে। বেগুনবাড়ি খাল, কুর্মিটোলা খাল, দোহাজারী খাল, মগবাজার খাল, গাবতলী খাল, হাতিরঝিলের সংযুক্ত খালগুলো একসময় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে এই ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কিংবা নৌ চলাচল বজায় রাখত।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, যে খালগুলো অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে এবং কোনো কোনো জায়গায় খালের ওপর বহু অট্টালিকা তৈরি হয়েছে। এটার ফলাফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই আধা ঘণ্টা বা ৪০ মিনিটের ভেতরে আমরা জলাবদ্ধতায় পড়ে যাচ্ছি ঢাকায়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই যে খালের ভরাট, দখল, দূষণ এবং পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া, এটি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালের সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। কোন অবকাঠামোগুলো খালের সীমানায় পড়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। খালের দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা হবে এবং খাল নেটওয়ার্ক পুরো ঢাকায় পুনরুদ্ধার করা হবে।

ঢাকার খালগুলোতে এখনো ব্যাপক দখল রয়েছে। বিশেষ করে মিরপুরের রূপনগর খাল, যা একসময় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখন ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। অভিযোগ রয়েছে, খালের জায়গা দখল করে নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে খোদ তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা। ২০১৯ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও এ নিয়ে মামলা করেছিল।

ময়লা-আবর্জনা ফেলে ধ্বংস করা হয়েছে খালগুলো। ছবি: ঢাকা মেইল

জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা পূর্বে ২৬টি খাল ও প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় নালা পরিচালনা করত। ২০২০ সালে ওয়াসার অধীনে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের হাতে হস্তান্তরিত হয়।

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, চলতি বছরের মধ্যে রাজধানীর ২২০ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন ও পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১১২ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হলে শহরের জলাবদ্ধতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, এই ১০৮ কিলোমিটার খাল খননের জন্য পাঁচ কোটি টাকাও খরচ হয়নি, যা দেখিয়েছে কম টাকায়ও কার্যকর কাজ করা সম্ভব।

খাল পুনরুদ্ধারের সঙ্গে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দুই পাড়ে ২১৬ কিলোমিটারব্যাপী বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খালের পাড়ে হাঁটার ব্যবস্থা, গাছপালা, ফুল-ফল ও পাখি উপভোগের সুযোগ থাকবে। এই পদক্ষেপের ফলে শহরের পরিবেশ ও নাগরিক জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।

এদিকে রাজউক ‘ড্যাপ ২০২২-২০৩৫’ অনুযায়ী পার্ক, খেলার মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণে সরকারি দফতরগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে আফতাবনগর, মিরপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও ও তুরাগ এলাকায় প্রায় এক হাজার ৫০০ একর জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপন ও দখল রোধের কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর এই উদ্যোগ শুধু খাল উদ্ধারই নয়, বরং নগরের বাসযোগ্যতা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম। খালের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, পাড় সংরক্ষণ, হাঁটার রাস্তা, বৃক্ষরোপণ এবং জলাধার সংরক্ষণ—সবই মিলিয়ে ঢাকার নগর জীবনকে আরও টেকসই করার চেষ্টা। আব্দুল হাকিম, ঢাকা মেইল