হাসান জাহিদ
২০০৪ সালে আত্মপ্রকাশ করেছিল সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২০ বছর পূর্ণ হয় এর। এ উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী ‘কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে উদ্বোধনী সন্ধ্যায় পত্রিকাটির বিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মোড়ক উন্মোচিত হয়। অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো।
আমি তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। টরোন্টো থেকে আমার স্ত্রী এলো। বেড়ানো, শপিং ও নানা প্রোগ্রামে ব্যস্ত ছিলাম। এরমধ্যে আমার একজন জুনিয়র সাহিত্য অনুরাগী বন্ধু আমাকে জানালো এই খবরটি। আমি জানতে চাইলাম প্রফেসর সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম থাকবেন কিনা। সে জানাতে পারেনি।
মোড়ক উন্মোচনে আমার যাওয়া হয়নি; বন্ধু গিয়েছিলো কিনা তা-ও জানা হয়নি।
প্রকৃত অর্থে আমি কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকার প্রসঙ্গ টেনেছি সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে। ২০২৪এ আমার স্ত্রী দেড়মাস অবস্থান করে টরোন্টোতে ফিরে গেলে আমি একদিন স্যারকে ফোন করলাম। কুশলাদি বিনিময়ের পর সাহিত্য ও আমার সংগীত সম্পর্কে আলাপ হলো। তিনি আমার প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াকালিন তার নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ভারত ও নেপাল সফর করি। এই সফরের আগে তিনি আমাকে ভালোভাবে চিনতেন না। স্মরণীয় একটা সফরের পর আমি তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলাম। লেখালেখি, টক শো, শিক্ষাদানে তিনি অনন্য।
তার সাথে আমার শুধু ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ছিলো না। ছিলো শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক। তিনি নীতিবান, সমাজ সচেতন ও মানুষ গড়ার কারিগর। পরীক্ষার খাতায় নাম্বার দেয়ার বিষয়েও সেটা আমি লক্ষ করেছি। তার সাথে পরিচয়ের আগে আমি একবার ক্রিস্টোফার মার্লো’র ড. ফস্টাসের পরীক্ষার খাতায় বেশ ভালো নাম্বার পেয়েছিলাম। পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতার পর অন্য এক পরীক্ষায় আমি কম নাম্বার পেলাম। হয়তো আমি ভালো পরীক্ষা দিইনি, তাই।
মোটা দাগে বললে বলতে হয়, তার সাথে পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাওয়ার সম্পর্ক আমার ছিলো না। সম্পর্কটা ছিলো আত্মিক। তিনি আমার বাসায় আসেন দুইবার। একবার আমার বিয়ের আগে, নেপাল-ভারত সফরের পরপর। আরেকবার আমার বিয়ের পর, আমার মোহাম্মদপুরের বাসায় সম্ভবত ২০০৯ সালে।
এই তো গতমাসে মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে স্যারের সাথে আমার কথা হলো ফোনে। ক্যানেডা, দেশের পটপরিবর্তন, সাহিত্য ও আমার গানের বিষয়ে কথা হলো। তিনি স্পষ্টভাবে জানালেন, আমার কন্ঠ চমৎকার। আমি উনাকে কথা দিলাম একটা ছোটোখাটো একক গানের অনুষ্ঠান করবো আমি। সেখানে তিনি ও ভাবি থাকবেন।
আমি কয়েকটা জিনিস পারি না। তেল মর্দন, অন্যের গীবত করা ও অহংকার করা। আমার লেখা ও গানের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন অনেকে, তাতে আমি আনন্দিত হই, গর্বিত হই। কিন্তু অহংকারকে ঠাঁই দিই না।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল এবং তৈলাক্ত বিষয়গুলো পছন্দ করেন। এমন একজন ছিলেন, যিনি এখন ধরাধামে নেই। তিনি ছিলেন অনেক সিনিয়র একজন ব্যক্তি। একটা জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। তার সাথে লেখালেখি নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় আমার। তিনি ফুঁসে উঠেছিলেন; অথচ এটা ছিলো সামান্য দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। সেটা বহুবছর আগের কথা। আমি গল্প নিয়ে তার কাছে আর যাইনি। পরে দেখেছিলাম, যারা তাকে ঘিরে বসে থাকত, তাদের নিম্নমানের গল্প তিনি প্রকাশ করছেন। তাহলে এখানে লেখার প্যারামিটার হলো, তেল মর্দনকারী গুণগত মানহীন লেখা প্রকাশ, সেসব লেখকদের নাম এখন আমারও মনে নেই। পাঠকরা কীভাবে মনে রাখবেন?
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরবাস’ সাহিত্য পত্রিকা একটি সংকলন বের করেছে। সেখানে আমার গল্প আছে। গল্পটা আমি দিইনি; তারাই পরবাস পত্রিকার বিভিন্ন পর্বে প্রকাশিত আমার গল্পগুলো থেকে একটা গল্প বেছে নিয়েছেন।
বর্তমান সময়ে অনেক তরুণ ও পুরোনো অনেক লেখকই বেশ ভালো লিখছেন। আমিও লেখালেখির মধ্যেই আছি। তবে একটা প্রবণতা লক্ষ করছি। সেটা হলো জাদুবাস্তবতা নিয়ে গল্প-উপন্যাস লেখা। সেগুলো বোধহয় ঠিক জাদুবাস্তবতার আদলে আসছে না। জাদুবাস্তবতার প্রবর্তকদের অন্যতম গার্সিয়া মার্কেজ বা হোর্হে লুই বোরহেস, মারিও ভার্গাস য়োসা প্রমুখদের ছায়া দেখতে পাচ্ছি কেবল। জাদুবাস্তবতা বুঝতে হবে আগে। আর উল্লিখিত জগদ্বিখ্যাত লেখকদের লেখা পড়তে হবে। তারপর নিজের ভাবে জাদুবাস্তবীয় লেখা তৈরি করতে হবে। লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তবতার জনকদের লেখার ছায়া দেখতে ভালো লাগবে না।
সবশেষ কথা, ‘কালি ও কলম’ (প্রিন্ট ও অনলাইন) জুলাই ২০২৫ সংখ্যায় আমার একটি গল্প ‘ডিডেলাস মিথ কিংবা অজগর বুড়ো’ প্রকাশিত হয়েছে। জাদুবাস্তবতা সম্পর্কে আমার যে যৎসামান্য পড়াশোনা বা বীক্ষণ আছে, সেটা কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছি। আমার সম্মানিত পাঠকদের পড়ার জন্য: https://www.kaliokalam.com এই ওয়েবসাইটে ঢুকে আমার নাম বা গল্পের নাম লিখে দিলে গল্পটি চলে আসবে। লিংক দেয়া গেলো না। সেটা অনেক বিশাল আকারে আসছে সংখ্যা ও নাম্বার মিলে।
(টরোন্টোর ‘বাংলা কাগজ’এ আমার নিয়মিত কলাম ‘বালুকা বেলা; থেকে নেয়া)
