ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের একটি চিত্র। ছবি- সংগৃহীত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। যা এরইমধ্যে সহিংস রূপ নিয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এই বিক্ষোভ করছে দেশটির জনগণ।
বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ার খবর বলছে, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সদর দফরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে একটি ভবনে তিনজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) এক ভিডিও বার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো দেশবাসীকে শান্ত থাকার এবং তার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এই ভাষণের পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় এই সংঘাতকে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির ৫৮০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার) পাওয়ার খবর প্রকাশিত হলে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। এই অর্থ জাকার্জায় একজন মানুষের ন্যূনতম মাসিক মজুরির চেয়ে প্রায় ১০ গুন বেশি।
২৮ কোটি জনসংখ্যার ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশ ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী একজন বলেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত পার্লামেন্ট সদস্যদের বেতন কমানোর দাবি তুলেছেন। তার অভিযোগ, করের বোঝা ও লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল প্রাবোও পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আট শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি গড়ে ৪.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা প্রাবোও-র প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক কম।
যেভাবে ছড়াল সহিংসতা
ইন্দোনেশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় গত সোমবার থেকে। তবে বৃহস্পতিবার পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় খাবার ডেলিভারি সার্ভিসের এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
২১ বছর বয়সি ওই মোটরসাইকেল চালক দাঙ্গা পুলিশের সাঁজোয়া যানের ধাক্কায় নিহত হন। এই ঘটনার পর শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা জাকার্তায় পুলিশের মোবাইল ব্রিগেডের সদর দফতর অভিমুখে মিছিল করে এবং সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রাতে জাকার্তার পুলিশের একটি কম্পাউন্ডের কাছে পাঁচতলা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সহিংসতা শুধু জাকার্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়াতে বিক্ষোভকারীরা গভর্নরের অফিস চত্বরে ঢুকে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া মাকাসার, সোলো, যোগ জাকার্তা, মেদানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, জাকার্তা থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার পূর্বে মাকাসার শহরে একটি আঞ্চলিক আইনসভা ভবনে বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও দুজন।
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্তের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়িতে আমি মর্মাহত ও হতাশ।