১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ঠেলে দিচ্ছে ভারত: এইচআরডব্লিউ

  • আপডেট সময়: ১২:২১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • 60

ভারতের মদনপুর খাদার শরণার্থী শিবিরে একজন রোহিঙ্গা নারী পানি নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: এইচআরডব্লিউ


কোনো আইনি সুরক্ষা ছাড়াই ভারত গত মে মাস থেকে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জোরপূর্বক বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সীমান্তে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শত শত রোহিঙ্গাকে নির্বিচার আটক এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেককে আটক ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, চলতি বছরের মে মাসে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল- বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে রোহিঙ্গা ও    বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে অভিযান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে অন্তত ১৯২ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যদিও তারা জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআরে নিবন্ধিত ছিলেন। আরও ৪০ জনকে নৌকায় তুলে মিয়ানমারের উপকূলের কাছে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া এই দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলাইন পিয়ারসন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বাসিত করার ভারত সরকার এই পদক্ষেপ মানিবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করার উদাহরণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা এই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বিজেপির নীতিকেই প্রতিফলিত করে। এই বিজেপি মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে।’

এদিকে কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরে সম্প্রতি ভারত থেকে আসা নয়জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর হামলা করেছে এবং তাদের টাকা, মোবাইল ফোন ও ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন কার্ড কেড়ে নিয়েছে। অন্য তিনজন গ্রেফতার এড়াতে পুলিশি হুমকির মুখে কাশ্মির, অন্ধ্রপ্রদেশ ও দিল্লি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

ভারতের পুর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় আটক হওয়া ৩৭ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ৬ মে রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা বন্দুকের মুখে তার স্বামী, তিন সন্তানসহ তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য করে।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যখন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের কোনো টাকা নেই এবং এলাকা চিনি না, কোথায় যাব, তখন তারা তাকে এত জোরে থাপ্পড় মারেন যে, সে এখনও ঠিকমতো কানে শুনতে পায় না। আর কোনো কথা বললে তারা আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।’


আরো পড়ুন

নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে ভারত


এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে দিল্লি থেকে ১৩ নারী সহ ৪০ জন মুসলিম ও খ্রিষ্টান রোহিঙ্গাকে আটক করে। সেখান থেকে তাদের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাঠিয়ে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে দেয়া হয়। পরে জাহাজটি মিয়ানমারের উপকূলের কাছে পৌঁছালে তাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সমুদ্রে নামতে বাধ্য করা হয়।

ওই ৪০ জনের মধ্যে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, আমরা সবাইকে মেরে ফেললেও কেউ জবাব চাইবে না। এ ছাড়া হায়দরাবাদ থেকে পালানোর পথে পুলিশ চার বছরের শিশুসহ এক রোহিঙ্গা পরিবারকে বেদম প্রহার করেছে। সীমান্তে পুরুষদের লাঠিপেটা করে ভিডিও বানাতে বাধ্য করা হয়, যেখানে তাদের দিয়ে স্বীকার করানো হয় যে তারা বাংলাদেশি।’

প্রসঙ্গত, ভারতে বর্তমানে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে। তাদের অন্তত ২০ হাজার ইউএনএইচসিআর নিবন্ধিত। যদিও ভারত ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি, আন্তর্জাতিক আইনে শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানি করে রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ নাকি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ এবং তাদের অধিকার ও সুরক্ষা কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করবেন। তবে গত মে মাসে রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ঠেকাতে অস্বীকৃতি জানায় আদালত এবং সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসার অভিযোগকে সুন্দরভাবে সাজানো গল্প বলে উড়িয়ে দেয়।

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ভ্যাঙ্কি আংটি: ঐশ্বরিয়ার হাতের এই আংটি কখনও খোলেন না, জানেন এর পেছনের গল্প?

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ঠেলে দিচ্ছে ভারত: এইচআরডব্লিউ

আপডেট সময়: ১২:২১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

ভারতের মদনপুর খাদার শরণার্থী শিবিরে একজন রোহিঙ্গা নারী পানি নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: এইচআরডব্লিউ


কোনো আইনি সুরক্ষা ছাড়াই ভারত গত মে মাস থেকে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জোরপূর্বক বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সীমান্তে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শত শত রোহিঙ্গাকে নির্বিচার আটক এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেককে আটক ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, চলতি বছরের মে মাসে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল- বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে রোহিঙ্গা ও    বাংলাভাষী মুসলমানদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে অভিযান শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে অন্তত ১৯২ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যদিও তারা জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআরে নিবন্ধিত ছিলেন। আরও ৪০ জনকে নৌকায় তুলে মিয়ানমারের উপকূলের কাছে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া এই দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলাইন পিয়ারসন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বাসিত করার ভারত সরকার এই পদক্ষেপ মানিবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করার উদাহরণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা এই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ বিজেপির নীতিকেই প্রতিফলিত করে। এই বিজেপি মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে।’

এদিকে কক্সবাজারের শরণার্থীশিবিরে সম্প্রতি ভারত থেকে আসা নয়জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর হামলা করেছে এবং তাদের টাকা, মোবাইল ফোন ও ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন কার্ড কেড়ে নিয়েছে। অন্য তিনজন গ্রেফতার এড়াতে পুলিশি হুমকির মুখে কাশ্মির, অন্ধ্রপ্রদেশ ও দিল্লি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

ভারতের পুর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় আটক হওয়া ৩৭ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ৬ মে রাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা বন্দুকের মুখে তার স্বামী, তিন সন্তানসহ তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য করে।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যখন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের কোনো টাকা নেই এবং এলাকা চিনি না, কোথায় যাব, তখন তারা তাকে এত জোরে থাপ্পড় মারেন যে, সে এখনও ঠিকমতো কানে শুনতে পায় না। আর কোনো কথা বললে তারা আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।’


আরো পড়ুন

নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে ভারত


এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে দিল্লি থেকে ১৩ নারী সহ ৪০ জন মুসলিম ও খ্রিষ্টান রোহিঙ্গাকে আটক করে। সেখান থেকে তাদের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাঠিয়ে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে দেয়া হয়। পরে জাহাজটি মিয়ানমারের উপকূলের কাছে পৌঁছালে তাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সমুদ্রে নামতে বাধ্য করা হয়।

ওই ৪০ জনের মধ্যে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, আমরা সবাইকে মেরে ফেললেও কেউ জবাব চাইবে না। এ ছাড়া হায়দরাবাদ থেকে পালানোর পথে পুলিশ চার বছরের শিশুসহ এক রোহিঙ্গা পরিবারকে বেদম প্রহার করেছে। সীমান্তে পুরুষদের লাঠিপেটা করে ভিডিও বানাতে বাধ্য করা হয়, যেখানে তাদের দিয়ে স্বীকার করানো হয় যে তারা বাংলাদেশি।’

প্রসঙ্গত, ভারতে বর্তমানে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে। তাদের অন্তত ২০ হাজার ইউএনএইচসিআর নিবন্ধিত। যদিও ভারত ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি, আন্তর্জাতিক আইনে শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানি করে রোহিঙ্গারা ‘শরণার্থী’ নাকি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ এবং তাদের অধিকার ও সুরক্ষা কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করবেন। তবে গত মে মাসে রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ঠেকাতে অস্বীকৃতি জানায় আদালত এবং সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসার অভিযোগকে সুন্দরভাবে সাজানো গল্প বলে উড়িয়ে দেয়।