দেশে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। জ্বর ও কাশির লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের ৫৯ শতাংশ ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় নির্দেশনায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত সোম ও বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি ডিজিএইচএস) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর কারিগরি সহায়তায় যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি।
কর্মশালার প্রথম দিনে ইন্টার্নাল মেডিসিন, শিশু-বিশেষজ্ঞ, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, কার্ডিওলজি, শ্বাসনালি ও কিডনিরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকি কমাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে বিদ্যমান চিকিৎসা পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল প্রণয়ন করা।
কর্মশালায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের গুরুতর অসুস্থতা এবং ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ।
বাংলাদেশে ১৯টি হাসপাতালে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনে হাসপাতালে জ্বর ও কাশির লক্ষণ নিয়ে আসা রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিল, যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসকে (গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা) ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী- ৬০ বছরের বেশি বয়সী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে টিকা নেওয়া উচিত, যাতে সর্বাধিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য প্রতি বছর নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রদানকে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জোর দিলেও বাংলাদেশে এই টিকা গ্রহণের হার সচেতনতার অভাব, নীতি নির্ধারণের ঘাটতি এবং প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে এখনো অত্যন্ত কম।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে, আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন ২০০৭ সাল থেকে আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি-র যৌথভাবে পরিচালিত ইনফ্লুয়েঞ্জার হাসপাতাল পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস (গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা) পর্যন্ত থাকে এবং জুন-জুলাইতে সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার লক্ষ করা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সময়মতো ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকাদানের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অনেক গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকাদান বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর এবং খরচ সাশ্রয়ী।
আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসিসট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ড. ফাহমিদা চৌধুরী প্রথম দিনের কর্মশালায় বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একসঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল সেবার অন্তর্ভুক্ত করতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশল ও সুপারিশ প্রস্তাব করেছেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমানো।’