১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলেদের কেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে?

  • আপডেট সময়: ০৫:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 57

আরাকান আর্মির অভিযানে হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করছেন কয়েকজন জেলে


কক্সবাজারের নাফ নদী এবং এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ বা অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় জেলেদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গত এক মাসে প্রায় ১০০ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

নাফ নদী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বিভক্ত করেছে। এখানকার জেলেরা মূলত এই নদী এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু আরাকান আর্মির হাতে জেলেদের অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ভয়ে সাগরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের কোস্টগার্ড বলছে, বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, জেলেরা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের জলসীমা অতিক্রম করার কারণেই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেলেদের কী অভিজ্ঞতা?

গত ২৬ আগস্ট রশিদ আহমেদের ছেলে তার চোখের সামনেই আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত হন। রশিদ আহমেদ বলেন, হঠাৎ দেখি স্পিডবোটে করে আরাকান আর্মি আসছে। আমরা পালিয়ে আসতে পারলেও আমার ছেলের নৌকা স্রোতের টানে দূরে চলে যাওয়ায় তারা ধরা পড়ে। স্পিডবোটে থাকা সবার হাতেই বন্দুক ছিল এবং তাদের পোশাক দেখতে পুলিশের মতো।

সেই দিন পাঁচজন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের একজন হলেন ইমাম হোসেন। তার স্ত্রী পারভীন বেগম জানান, তাদের স্বামীরা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, তা তারা জানেন না। তবে কয়েকদিন পর মিয়ানমারের একটি ওয়েবসাইটে ইমাম হোসেনসহ পাঁচ জেলের ছবি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ায়’ আরাকান আর্মি তাদের গ্রেফতার করেছে। স্বজনরা ছবির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করেন।

গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক নামে একটি ওয়েব পোর্টালে আরাকানআর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেদের আটকের খবর

কেন জেলেদের অপহরণ করা হচ্ছে?

স্থানীয়দের মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আরাকান আর্মির তৎপরতা বেড়েছে। জেলেদের অপহরণও তখন থেকেই বেড়েছে। শাহপরীর দ্বীপের জেলে আব্দুর রহমান, যিনি ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মির হাতে আটক হয়েছিলেন। তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আট দিন পর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর মাধ্যমে তাকে ফেরত দেওয়া হয়।

আব্দুর রহমান বলেন, ওরা বলতেছিল, তোমরা মিয়ানমার সীমানায় কেন মাছ ধরতে আসছো? আমরা তো জানি না এটা মিয়ানমারের সীমানা। আমরা মনে করছিলাম এটা বাংলাদেশের সীমানা।

নাফ নদী এবং সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে কোস্টগার্ড। তাদের নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলা সত্ত্বেও কীভাবে একের পর এক জেলে নিখোঁজ হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোস্টগার্ড বলছে, জেলেরা অসাবধানতাবশত বা বেশি মাছ পাওয়ার আশায় সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে ফেলেন।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ সময় দেখেছি, জেলেরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার যে সীমারেখা আছে, সেই সীমারেখা অতিক্রম করার কারণে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তারা জেলেদের নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জেলেদের সতর্ক করছে।

জেলেদের মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশের কারণ

জেলেরা কেন মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করছেন, তার কয়েকটি কারণ আছে:

কোস্টগার্ডের মতে, অসাবধানতা এবং বেশি মাছ পাওয়ার আশায় জেলেরা প্রায়ই সীমা অতিক্রম করেন।

নাফ নদীর মোহনায় ডুবোচরের কারণে বাংলাদেশের অংশে পানির গভীরতা কমে গেছে, তাই জেলেরা মিয়ানমারের জলসীমার গভীর পথ ব্যবহার করেন।

অনেক সময় তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের দিকে ভেসে যায়।

টেকনাফ পৌর বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ জানান, আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও মিয়ানমার জেলেরা বাধা দিত না, কিন্তু এখন আরাকান আর্মি আসার পর কড়াকড়ি শুরু হয়েছে।

নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে কোস্টগার্ডের টহল

নেপথ্যে কারণ কী?

বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সীমান্তের দখল নেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, জেলেরা এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা এমনটাই বলছেন।

তবে আরাকান আর্মি যে শুধু মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকলে বাধা দিচ্ছে কিংবা আটক করছে তেমনটা নয়।

বাংলাদেশি জেলেদের কেউ কেউ দাবি করছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা অতীতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকেও জেলেদের ধরে নিয়ে গেছেন।

এদিকে আরাকানের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নাফ নদী কিংবা সাগরে আরাকান আর্মির বিভিন্ন অভিযানের খবর, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

এরকম কিছু ভিডিও এবং ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিড বোটে করে জেলেদের নৌকাকে ধাওয়া করছেন।

পরে মিয়ানমারের জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকা এবং জেলেদের আটকের ছবি এবং ভিডিও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এরকম কয়েকটি ছবি ও ভিডিওতে যেসব জেলেকে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই আবার বাংলাদেশের জেলে বলে শনাক্ত করেছেন স্বজনেরা।

যদিও এসব জেলে নৌকা মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আটক হয়েছে, সেটা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

তবে জেলেদের ভাষ্য অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, আরাকান আর্মির তৎপরতার কারণে অনেকে জেলেই এখন নাফ নদীর গভীরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না।

গত এক মাসে অন্তত: একশত জেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আরাকান আর্মি যে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে সেটা স্পষ্ট। যেটাকে জেলেরা দেখছেন, অনেকটা ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান হিসেবে।

কিন্তু আরাকান আর্মির হঠাৎ এমন ‘আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার’ কারণ কী?

নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট এবং স্থানীয়রা এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করছেন।

প্রথমটি হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে আরাকানের দখল নিতে চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেছেন বলেও দাবি করছেন বাংলাদেশি জেলেরা। সবমিলিয়ে নৌপথে সরকারি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় নদী ও সাগরে কড়া নজরদারি করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

দ্বিতীয়টি কারণটি হচ্ছে, জেলেদের নৌকা আটকের পর লাখ লাখ টাকার মাছ, জাল, খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দখল।

আর তৃতীয়টি হচ্ছে, জেলেদের আটকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা পরিচালনা এবং এর মাধ্যমে একধরণের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পরোক্ষ চেষ্টা করছে আরাকান আর্মি।

টেকনাফের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এই ধারণা জোরালো হয়েছে।

যদিও এসব বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। কোস্টগার্ড দাবি করছে, বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর থেকে জেলেদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে না। কারণ জেলেদের নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের জোরদার নিরাপত্তা কার্যক্রম রয়েছে।

তবে কারণ যেটাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশি জেলেরা একের পর এক আটক হচ্ছেন এবং একশত জেলে আটক হওয়ার পর তাদের খোঁজ কিংবা ফেরত আনাও যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য চাওয়া হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, রাখাইনে নির্দিষ্ট বৈধ কোন সরকারের অস্তিত্ব না থাকায় জেলেদের ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ভ্যাঙ্কি আংটি: ঐশ্বরিয়ার হাতের এই আংটি কখনও খোলেন না, জানেন এর পেছনের গল্প?

আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জেলেদের কেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে?

আপডেট সময়: ০৫:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরাকান আর্মির অভিযানে হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করছেন কয়েকজন জেলে


কক্সবাজারের নাফ নদী এবং এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশি জেলে নিখোঁজ বা অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় জেলেদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গত এক মাসে প্রায় ১০০ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

নাফ নদী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বিভক্ত করেছে। এখানকার জেলেরা মূলত এই নদী এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু আরাকান আর্মির হাতে জেলেদের অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ভয়ে সাগরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের কোস্টগার্ড বলছে, বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, জেলেরা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের জলসীমা অতিক্রম করার কারণেই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেলেদের কী অভিজ্ঞতা?

গত ২৬ আগস্ট রশিদ আহমেদের ছেলে তার চোখের সামনেই আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত হন। রশিদ আহমেদ বলেন, হঠাৎ দেখি স্পিডবোটে করে আরাকান আর্মি আসছে। আমরা পালিয়ে আসতে পারলেও আমার ছেলের নৌকা স্রোতের টানে দূরে চলে যাওয়ায় তারা ধরা পড়ে। স্পিডবোটে থাকা সবার হাতেই বন্দুক ছিল এবং তাদের পোশাক দেখতে পুলিশের মতো।

সেই দিন পাঁচজন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের একজন হলেন ইমাম হোসেন। তার স্ত্রী পারভীন বেগম জানান, তাদের স্বামীরা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, তা তারা জানেন না। তবে কয়েকদিন পর মিয়ানমারের একটি ওয়েবসাইটে ইমাম হোসেনসহ পাঁচ জেলের ছবি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ায়’ আরাকান আর্মি তাদের গ্রেফতার করেছে। স্বজনরা ছবির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করেন।

গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক নামে একটি ওয়েব পোর্টালে আরাকানআর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেদের আটকের খবর

কেন জেলেদের অপহরণ করা হচ্ছে?

স্থানীয়দের মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আরাকান আর্মির তৎপরতা বেড়েছে। জেলেদের অপহরণও তখন থেকেই বেড়েছে। শাহপরীর দ্বীপের জেলে আব্দুর রহমান, যিনি ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মির হাতে আটক হয়েছিলেন। তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আট দিন পর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর মাধ্যমে তাকে ফেরত দেওয়া হয়।

আব্দুর রহমান বলেন, ওরা বলতেছিল, তোমরা মিয়ানমার সীমানায় কেন মাছ ধরতে আসছো? আমরা তো জানি না এটা মিয়ানমারের সীমানা। আমরা মনে করছিলাম এটা বাংলাদেশের সীমানা।

নাফ নদী এবং সাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে কোস্টগার্ড। তাদের নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলা সত্ত্বেও কীভাবে একের পর এক জেলে নিখোঁজ হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোস্টগার্ড বলছে, জেলেরা অসাবধানতাবশত বা বেশি মাছ পাওয়ার আশায় সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে ফেলেন।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগ সময় দেখেছি, জেলেরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার যে সীমারেখা আছে, সেই সীমারেখা অতিক্রম করার কারণে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

কোস্টগার্ড জানিয়েছে, তারা জেলেদের নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জেলেদের সতর্ক করছে।

জেলেদের মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশের কারণ

জেলেরা কেন মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করছেন, তার কয়েকটি কারণ আছে:

কোস্টগার্ডের মতে, অসাবধানতা এবং বেশি মাছ পাওয়ার আশায় জেলেরা প্রায়ই সীমা অতিক্রম করেন।

নাফ নদীর মোহনায় ডুবোচরের কারণে বাংলাদেশের অংশে পানির গভীরতা কমে গেছে, তাই জেলেরা মিয়ানমারের জলসীমার গভীর পথ ব্যবহার করেন।

অনেক সময় তীব্র স্রোতের কারণে নৌকা অনিচ্ছাকৃতভাবে মিয়ানমারের দিকে ভেসে যায়।

টেকনাফ পৌর বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ জানান, আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও মিয়ানমার জেলেরা বাধা দিত না, কিন্তু এখন আরাকান আর্মি আসার পর কড়াকড়ি শুরু হয়েছে।

নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে কোস্টগার্ডের টহল

নেপথ্যে কারণ কী?

বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সীমান্তের দখল নেওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, জেলেরা এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা এমনটাই বলছেন।

তবে আরাকান আর্মি যে শুধু মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকলে বাধা দিচ্ছে কিংবা আটক করছে তেমনটা নয়।

বাংলাদেশি জেলেদের কেউ কেউ দাবি করছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা অতীতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকেও জেলেদের ধরে নিয়ে গেছেন।

এদিকে আরাকানের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নাফ নদী কিংবা সাগরে আরাকান আর্মির বিভিন্ন অভিযানের খবর, ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

এরকম কিছু ভিডিও এবং ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিড বোটে করে জেলেদের নৌকাকে ধাওয়া করছেন।

পরে মিয়ানমারের জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে নৌকা এবং জেলেদের আটকের ছবি এবং ভিডিও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এরকম কয়েকটি ছবি ও ভিডিওতে যেসব জেলেকে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই আবার বাংলাদেশের জেলে বলে শনাক্ত করেছেন স্বজনেরা।

যদিও এসব জেলে নৌকা মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশের জলসীমা থেকে আটক হয়েছে, সেটা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

তবে জেলেদের ভাষ্য অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, আরাকান আর্মির তৎপরতার কারণে অনেকে জেলেই এখন নাফ নদীর গভীরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন না।

গত এক মাসে অন্তত: একশত জেলে নিখোঁজ হওয়ার পর আরাকান আর্মি যে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে সেটা স্পষ্ট। যেটাকে জেলেরা দেখছেন, অনেকটা ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান হিসেবে।

কিন্তু আরাকান আর্মির হঠাৎ এমন ‘আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার’ কারণ কী?

নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট এবং স্থানীয়রা এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করছেন।

প্রথমটি হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে আরাকানের দখল নিতে চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের জঙ্গি বিমান উড়তে দেখেছেন বলেও দাবি করছেন বাংলাদেশি জেলেরা। সবমিলিয়ে নৌপথে সরকারি বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় নদী ও সাগরে কড়া নজরদারি করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

দ্বিতীয়টি কারণটি হচ্ছে, জেলেদের নৌকা আটকের পর লাখ লাখ টাকার মাছ, জাল, খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম দখল।

আর তৃতীয়টি হচ্ছে, জেলেদের আটকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা পরিচালনা এবং এর মাধ্যমে একধরণের বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পরোক্ষ চেষ্টা করছে আরাকান আর্মি।

টেকনাফের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এই ধারণা জোরালো হয়েছে।

যদিও এসব বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। কোস্টগার্ড দাবি করছে, বাংলাদেশের জলসীমার ভেতর থেকে জেলেদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে না। কারণ জেলেদের নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিত করতে কোস্টগার্ডের জোরদার নিরাপত্তা কার্যক্রম রয়েছে।

তবে কারণ যেটাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশি জেলেরা একের পর এক আটক হচ্ছেন এবং একশত জেলে আটক হওয়ার পর তাদের খোঁজ কিংবা ফেরত আনাও যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ জানতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য চাওয়া হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, রাখাইনে নির্দিষ্ট বৈধ কোন সরকারের অস্তিত্ব না থাকায় জেলেদের ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা