
ক্যালেন্ডারের কালো তারিখ খুঁজতে বলা হলে কোন তারিখেটি বেছে নেবেন? নিশ্চয়ই ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর! শুধু আপনি না, এই মুহূর্তে দেশের অনেকেই এরকম ভাবছেন। কারণ দিনটি শুধু ঢালিউডের থমকে যাওয়ার না, বরং একটি যুগের অবসান। এদিন মাত্র ২৫ বছর বয়সে কোটি দর্শকের স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন।
ঢালিউড সুপারস্টারের মৃত্যু আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ছিল শুক্রবার। সেদিন সকালে সন্তানের অসুস্থতার খবর পেয়ে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে যান তাঁর মা নীলা চৌধুরী। গিয়ে দেখতে পান, সালমানের স্ত্রী সামিরার এক আত্মীয়ের পার্লারের কয়েকজন মেয়ে অভিনেতার হাতে-পায়ে সরিষার তেল দিচ্ছেন। এসময় পরিবারের সদস্য ও গৃহকর্মীরা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

প্রথমে হলি ফ্যামিলি এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলেও চিকিৎসক জানান, সালমান শাহ আর নেই। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তদের ঢল নামে হাসপাতাল ও নিউ ইস্কাটন রোডের বাসার সামনে। শোকের ছায়া নেমে আসে শোবিজ অঙ্গনে।
সুপরস্টারের মৃত্যুর পরপরই শুরু হয় জল্পনা। পুলিশ প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা করে। কিন্তু সালমান শাহর মায়ের দাবি ছিল, এটি কোনোভাবেই আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ফলে অপমৃত্যুর মামলা রূপ নেয় হত্যা মামলায়।

পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে একে একে কাজ করে ডিবি, সিআইডি, র্যাব এবং সর্বশেষ পিবিআই। সিআইডির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এটি আত্মহত্যা। কিন্তু পরিবারের আপত্তি অব্যাহত থাকায় মামলার জট খুলতে পারেনি কেউ।
২০২০ সালে পিবিআই চূড়ান্তভাবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জানায় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন। তাদের তদন্ত অনুযায়ী, দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন, স্ত্রীর সঙ্গে অমিল, প্রযোজকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি এবং আবেগপ্রবণ স্বভাব এসব কারণে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ অভিনেতার মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত্যর আগে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
তবে অভিনেতার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি তার ভক্ত-অনুরাগী ও পরিবার। ফলে মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরও সালমান শাহর বিদায় নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি।

৯০ দশকের গোড়ার দিকে একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। প্রায় চার বছরের অভিনয় জীবনে ২৭টি সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘জীবন সংসার’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’। সালমান শাহ-শাবনূর সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। শাবনূর ছাড়াও সালমান শাহ স্ক্রিন শেয়ার করেছেন মৌসুমী, শাবনাজ, রোজিনার মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে।























