০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা, ‘সিন্ধু নদ’ ঘিরে বিশাল পরিকল্পনা ভারতের

  • আপডেট সময়: ১২:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 58

সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি’ স্থগিত করার পর নয়াদিল্লির এটি প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ, যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

গত শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের শীর্ষ বৈঠকে জানানো হয়, সিন্ধু নদকে বিয়াস নদীর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি ১৪ কিমি দীর্ঘ টানেল নির্মাণের ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রস্তুত হচ্ছে।

বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বহুজাতিক নির্মাণ সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টুবরো এই ডিপিআর তৈরি করছে, যা আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্রের আরও খবর, একই বৈঠকে প্রস্তাবিত ১১৩ কিমি দীর্ঘ খাল নির্মাণের কাজের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সিন্ধুর পানি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী— সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান।

তবে চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে মোদি সরকার। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত এই চুক্তি স্থগিত থাকবে। মে মাসে ভারত-পাক সংঘাত বন্ধ হলেও চুক্তি কিন্তু স্থগিতই রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়, ‘রক্ত ও একসঙ্গে বইতে পারে না।’

এদিকে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর থেকে ভারত সরকারকে পর পর চার বার চিঠি দিয়েছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহহবাজ শরিফ জানান, এই চুক্তির উপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। তিনি দাবি করেন, ভারতের সিদ্ধান্ত বেআইনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে সিন্ধু নদে ভারত বাঁধ নির্মাণ করলে তা মিসাইল মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল অসীম মুনির।

তবে এসব কিছু উপেক্থা করে সিন্ধু নদীর পানি সর্বাধিক ব্যবহারের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করল ভারত।

সূত্রের খবর, এই প্রকল্পটির সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে ১৪ কিমি দীর্ঘ টানেল নির্মাণ। পাহাড়ি অঞ্চলের শিলা পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন এলাকায় সরাসরি টানেল খোঁড়া সম্ভব আর কোন এলাকায় পাইপের মাধ্যমে পথ তৈরি করতে হবে। এই জন্য আধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ও রক শিল্ড প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে, যাতে নিরাপত্তা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা যায়। কেন্দ্রীয় সরকার ডিপিআর রিপোর্ট পাওয়ার পর নির্মাণ কাজ শুরু করবে।

সূত্র আরও জানায়, এই টানেল সরাসরি যুক্ত হবে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার উঝ মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট-এর সঙ্গে। এর ফলে রাভির উপনদী উঝ নদী থেকে পানি নিয়ে বিয়াস বেসিনে পাঠানো যাবে। টানেলটি সম্পন্ন হলে রাভি-বিয়াস-সতলজ নদী ব্যবস্থা সিন্ধু বেসিনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। যার ফলে ভারত নদীর পানিের সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩-৪ বছর সময় লাগবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি রুপি।

ভারত সরকারের মতে এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী ক্যানাল-এর মাধ্যমে সেচের সুযোগ বহুগুণ বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি ও পাঞ্জাবও এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। চেনাব নদীকে রাভি-বিয়াস-সতলজ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর ফলে উত্তর ভারতে থাকা খাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি শ্রীগঙ্গানগর পর্যন্ত পানি পৌঁছে যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের মানুষের জন্য খাবার পানির প্রাপ্যতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।

সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ভ্যাঙ্কি আংটি: ঐশ্বরিয়ার হাতের এই আংটি কখনও খোলেন না, জানেন এর পেছনের গল্প?

পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা, ‘সিন্ধু নদ’ ঘিরে বিশাল পরিকল্পনা ভারতের

আপডেট সময়: ১২:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিন্ধু নদের পানি প্রবাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত সরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি’ স্থগিত করার পর নয়াদিল্লির এটি প্রথম কৌশলগত পদক্ষেপ, যা ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

গত শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের শীর্ষ বৈঠকে জানানো হয়, সিন্ধু নদকে বিয়াস নদীর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি ১৪ কিমি দীর্ঘ টানেল নির্মাণের ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রস্তুত হচ্ছে।

বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বহুজাতিক নির্মাণ সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টুবরো এই ডিপিআর তৈরি করছে, যা আগামী বছরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্রের আরও খবর, একই বৈঠকে প্রস্তাবিত ১১৩ কিমি দীর্ঘ খাল নির্মাণের কাজের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সিন্ধুর পানি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী— সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান।

তবে চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে মোদি সরকার। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত এই চুক্তি স্থগিত থাকবে। মে মাসে ভারত-পাক সংঘাত বন্ধ হলেও চুক্তি কিন্তু স্থগিতই রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায়, ‘রক্ত ও একসঙ্গে বইতে পারে না।’

এদিকে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর থেকে ভারত সরকারকে পর পর চার বার চিঠি দিয়েছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী শেহহবাজ শরিফ জানান, এই চুক্তির উপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। তিনি দাবি করেন, ভারতের সিদ্ধান্ত বেআইনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে সিন্ধু নদে ভারত বাঁধ নির্মাণ করলে তা মিসাইল মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল অসীম মুনির।

তবে এসব কিছু উপেক্থা করে সিন্ধু নদীর পানি সর্বাধিক ব্যবহারের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করল ভারত।

সূত্রের খবর, এই প্রকল্পটির সবচেয়ে কঠিন অংশ হচ্ছে ১৪ কিমি দীর্ঘ টানেল নির্মাণ। পাহাড়ি অঞ্চলের শিলা পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন এলাকায় সরাসরি টানেল খোঁড়া সম্ভব আর কোন এলাকায় পাইপের মাধ্যমে পথ তৈরি করতে হবে। এই জন্য আধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ও রক শিল্ড প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে, যাতে নিরাপত্তা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা যায়। কেন্দ্রীয় সরকার ডিপিআর রিপোর্ট পাওয়ার পর নির্মাণ কাজ শুরু করবে।

সূত্র আরও জানায়, এই টানেল সরাসরি যুক্ত হবে জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার উঝ মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট-এর সঙ্গে। এর ফলে রাভির উপনদী উঝ নদী থেকে পানি নিয়ে বিয়াস বেসিনে পাঠানো যাবে। টানেলটি সম্পন্ন হলে রাভি-বিয়াস-সতলজ নদী ব্যবস্থা সিন্ধু বেসিনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। যার ফলে ভারত নদীর পানিের সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩-৪ বছর সময় লাগবে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি রুপি।

ভারত সরকারের মতে এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী ক্যানাল-এর মাধ্যমে সেচের সুযোগ বহুগুণ বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি ও পাঞ্জাবও এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। চেনাব নদীকে রাভি-বিয়াস-সতলজ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর ফলে উত্তর ভারতে থাকা খাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি শ্রীগঙ্গানগর পর্যন্ত পানি পৌঁছে যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানের মানুষের জন্য খাবার পানির প্রাপ্যতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।

সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস