০৫:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে ‘শাটডাউন’ কী? কত দিন চলবে এই অচলাবস্থা

  • আপডেট সময়: ০৩:৫০:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
  • 37

যুক্তরাষ্ট্রে ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফের শুরু হয়েছে শাটডাউন। বাজেট নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে অচলাবস্থার কারণে সময়মতো ব্যয়বিল পাস না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১২টা (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টা) থেকে ‘শাটডাউন’ শুরু হয় দেশটিতে। এর ফলে বেশ কিছু সরকারি দফতর বন্ধ হয়ে গেছে। এসব দফতরের কর্মীদের অবৈতনিক ছুটিতে থাকতে হবে।

যদিও এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৈঠক করেছিলেন সিনেটের ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সদস্যরা। কিন্তু তহবিল নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা। সোমবার ট্রাম্প নিজেও সিনেট সদস্যদের নিয়ে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। মতানৈক্য চলতে থাকায় শাটডাউনের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দেয় হোয়াইট হাউস।

শাটডাউন কী?

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাজ চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন অর্থবছরের ব্যয় বাজেট পাস করতে হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে সিনেট সদস্যরা একমত হয়ে ব্যয় বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে না পারেন, তবে বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যতদিন পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে অর্থ বরাদ্দ না করা হচ্ছে, ততদিন দফতরগুলো বন্ধ থাকবে।

১০০ সদস্যের মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩। যে কোনও বিল পাস করাতে অন্তত ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে সাত জন ডেমোক্র্যাট সদস্যের সমর্থন তাদের প্রয়োজন ছিল। সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিলে তা হয়নি। বিলটি ৪৭–৫৩ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। আর সেই কারণে সিনেটের অনুমোদনও মেলেনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ব্যয় বাজেট গঠনকারী ১২টি বিলের কোনওটিই এখনও আইনসভার দুই কক্ষে পাস হয়নি। ফলে শাটডাউনটি হতে চলেছে ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’।

কোন কোন দফতর বন্ধ, কী কী খোলা

‘শাটডাউন’-এ মার্কিন সরকারের অধিকাংশ দফতরের কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। চালু থাকবে কেবল জরুরি পরিষেবাগুলো। কোন কোন দফতর চালু থাকবে, কত জন কর্মীকে নিয়ে চলবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হয়। যারা শাটডাউন চলাকালীনও কাজ করবেন, তাদের অধিকাংশই বেতন পাবেন না। ‘শাটডাউন’ শেষ হলে আবার তাদের বেতন দেওয়া হবে।

শাটডাউনের প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য দফতরে। জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও অনেক কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনও কোনও কাজ পিছিয়ে যেতে পারে বা সাময়িক ভাবে বন্ধও হতে পারে।

মার্কিন শিক্ষা দফতরও জানিয়েছে, অধিকাংশ কর্মীকেই আপাতত বসিয়ে রাখা হবে।

এদিকে শাটডাউনের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চালু থাকবে। এই দফতরের কর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শুল্ক এবং সীমান্তরক্ষা দফতরের কর্মীদেরও কাজ করতে হবে। এছাড়া শাটডাউনের মধ্যেও অভিবাসন, পরিবহন নিরাপত্তা, সিক্রেট সার্ভিস, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার কাজ চালু থাকবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরে বাছাই করা কিছু অংশ খোলা রাখা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণ সীমান্ত, পশ্চিম এশিয়া এবং গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অগ্রাধিকার পাবে বলে দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্যদের মার্কিন সরকারের তরফ থেকে যে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দেওয়া হয়, তাও বন্ধ হচ্ছে না।

মার্কিন শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য তহবিল রয়েছে, ততক্ষণ মার্কিন বেকারদের সুযোগসুবিধাগুলো বন্ধ হবে না। তবে বিনা বেতনে কাজ করতে হবে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদের।

ট্রাম্প কী বললেন

অবশ্য ঠিক কতদিন এই শাটডাউন চলতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম দফায় মার্কিন প্রশাসন ৩৫ দিনের জন্য অচল হয়ে পড়েছিল। ট্রাম্প তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ চেয়ে কংগ্রেসে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের আপত্তির মুখে সেই বিল পাস হয়নি। ফলে শাটডাউন দীর্ঘ ৩৫ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

এদিকে তহবিল সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদেরই দোষারোপ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইতোমধ্যে গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘শাটডাউনের অনেক ভালো দিকও রয়েছে। আমরা যেগুলো চাই না, তেমন অনেক জিনিস ফেলে দিতে পারি। অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তারা প্রত্যেকেই হবেন ডেমোক্র্যাট।’

 

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

ভ্যাঙ্কি আংটি: ঐশ্বরিয়ার হাতের এই আংটি কখনও খোলেন না, জানেন এর পেছনের গল্প?

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারে ‘শাটডাউন’ কী? কত দিন চলবে এই অচলাবস্থা

আপডেট সময়: ০৩:৫০:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফের শুরু হয়েছে শাটডাউন। বাজেট নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে অচলাবস্থার কারণে সময়মতো ব্যয়বিল পাস না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১২টা (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১০টা) থেকে ‘শাটডাউন’ শুরু হয় দেশটিতে। এর ফলে বেশ কিছু সরকারি দফতর বন্ধ হয়ে গেছে। এসব দফতরের কর্মীদের অবৈতনিক ছুটিতে থাকতে হবে।

যদিও এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বৈঠক করেছিলেন সিনেটের ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান সদস্যরা। কিন্তু তহবিল নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা। সোমবার ট্রাম্প নিজেও সিনেট সদস্যদের নিয়ে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। মতানৈক্য চলতে থাকায় শাটডাউনের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করে দেয় হোয়াইট হাউস।

শাটডাউন কী?

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাজ চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন অর্থবছরের ব্যয় বাজেট পাস করতে হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে সিনেট সদস্যরা একমত হয়ে ব্যয় বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে না পারেন, তবে বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যতদিন পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে অর্থ বরাদ্দ না করা হচ্ছে, ততদিন দফতরগুলো বন্ধ থাকবে।

১০০ সদস্যের মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩। যে কোনও বিল পাস করাতে অন্তত ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে সাত জন ডেমোক্র্যাট সদস্যের সমর্থন তাদের প্রয়োজন ছিল। সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিলে তা হয়নি। বিলটি ৪৭–৫৩ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। আর সেই কারণে সিনেটের অনুমোদনও মেলেনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ব্যয় বাজেট গঠনকারী ১২টি বিলের কোনওটিই এখনও আইনসভার দুই কক্ষে পাস হয়নি। ফলে শাটডাউনটি হতে চলেছে ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’।

কোন কোন দফতর বন্ধ, কী কী খোলা

‘শাটডাউন’-এ মার্কিন সরকারের অধিকাংশ দফতরের কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। চালু থাকবে কেবল জরুরি পরিষেবাগুলো। কোন কোন দফতর চালু থাকবে, কত জন কর্মীকে নিয়ে চলবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হয়। যারা শাটডাউন চলাকালীনও কাজ করবেন, তাদের অধিকাংশই বেতন পাবেন না। ‘শাটডাউন’ শেষ হলে আবার তাদের বেতন দেওয়া হবে।

শাটডাউনের প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য দফতরে। জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও অনেক কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনও কোনও কাজ পিছিয়ে যেতে পারে বা সাময়িক ভাবে বন্ধও হতে পারে।

মার্কিন শিক্ষা দফতরও জানিয়েছে, অধিকাংশ কর্মীকেই আপাতত বসিয়ে রাখা হবে।

এদিকে শাটডাউনের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চালু থাকবে। এই দফতরের কর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শুল্ক এবং সীমান্তরক্ষা দফতরের কর্মীদেরও কাজ করতে হবে। এছাড়া শাটডাউনের মধ্যেও অভিবাসন, পরিবহন নিরাপত্তা, সিক্রেট সার্ভিস, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার কাজ চালু থাকবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরে বাছাই করা কিছু অংশ খোলা রাখা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণ সীমান্ত, পশ্চিম এশিয়া এবং গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অগ্রাধিকার পাবে বলে দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্যদের মার্কিন সরকারের তরফ থেকে যে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দেওয়া হয়, তাও বন্ধ হচ্ছে না।

মার্কিন শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য তহবিল রয়েছে, ততক্ষণ মার্কিন বেকারদের সুযোগসুবিধাগুলো বন্ধ হবে না। তবে বিনা বেতনে কাজ করতে হবে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদের।

ট্রাম্প কী বললেন

অবশ্য ঠিক কতদিন এই শাটডাউন চলতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম দফায় মার্কিন প্রশাসন ৩৫ দিনের জন্য অচল হয়ে পড়েছিল। ট্রাম্প তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ চেয়ে কংগ্রেসে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের আপত্তির মুখে সেই বিল পাস হয়নি। ফলে শাটডাউন দীর্ঘ ৩৫ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

এদিকে তহবিল সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদেরই দোষারোপ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইতোমধ্যে গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘শাটডাউনের অনেক ভালো দিকও রয়েছে। আমরা যেগুলো চাই না, তেমন অনেক জিনিস ফেলে দিতে পারি। অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তারা প্রত্যেকেই হবেন ডেমোক্র্যাট।’