জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। আজ শনিবার দেশটির ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রক্ষণশীল নেতা হিসেবে পরিচিত ৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি চলতি মাসের শেষের দিকে সংসদের অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার এলডিপির দলীয় প্রধান নির্বাচনে তাকাইচির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শিনজিরো কোইজুমি। প্রথম দফায় দলীয় প্রধান নির্বাচন সম্ভব না হওয়ায় ভোট রান অফে গড়ায়। এতে ১৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তাকাইচি, আর কোইজুমি পেয়েছেন ১৫৬ ভোট। ৪৪ বছর বয়সী কোইজুমি জিততে পারলে আধুনিক সময়ে জাপানের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হতেন।
এদিকে ভোটে জয়ের পর ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভক্ত হিসেবে পরিচিত এবং নিজেকে ‘জাপানের আয়রন লেডি’ বলে দাবি করা তাকাইচি বলেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ঢেলে সাজাতে সামনে পাহাড় সমান কাজ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, এলডিপি কয়েক দশক ধরে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপান শাসন করেছে। তবে মাত্র এক বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর দেশের স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ওই নির্বাচনে এলডিপি জোট সংসদের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
এই প্রেক্ষাপটে নিজ দল এলডিপিকে ঐক্যবদ্ধ করার কঠিন পরীক্ষায় নামতে হবে তাকাইচিকে। এছাড়াও দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে দেশের বয়স্ক জনসংখ্যা, ভূ-রাজনৈতিক উত্থান-পতন, স্থবির অর্থনীতি এবং অভিবাসন নিয়ে ক্রমবর্ধমান অস্বস্তিসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন মোকাবিলা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আগের সরকারের স্বাক্ষরিত শুল্ক চুক্তি বাস্তবায়নও করতে হবে।
উল্লেখ্য, টেলিভিশন উপস্থাপক তাকাইচি ১৯৯৩ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জপানের নিম্ন কক্ষের একটি আসনে জয়লাভ করার মধ্যে দিয়ে জাপানের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি এলডিপিতে যোগদান করেন এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী আবে শিনযোর অধীনে প্রথম মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। ওকিনাওয়া এবং উত্তর ভূখণ্ড বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি এলডিপির নীতি গবেষণা পরিষদের প্রথম নারী সভাপতির পদে আসীন হন। তাকাইচি এরপর স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রী হন, রেকর্ড ১ হাজার ৪৩৮ দিন সেই পদে তিনি ছিলেন। পরে তাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়, যেখানে তিনি সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষার জন্য ‘নিরাপত্তা ছাড়পত্র’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
সূত্র: এএফপি