
সংগৃহীত ছবি
গাজামুখী ত্রাণবাহী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে ফেরত আসার পর আইডিএফ-এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আইডিএফ-এর হাতে আটক হওয়া ১৩৭ জন শনিবার (৫ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছেন। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেরত আসা ১৩৭ জনের মধ্যে ৩৬ জন তুর্কি নাগরিক, বাকিরা যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক।
মুক্তি পাওয়া তুর্কি সাংবাদিক ও ‘গাজা সুমুদ ফ্লোটিলা’র সদস্য এরসিন সেলিক স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি, গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাকে মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয়।’
একই ধরনের বিবরণ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিভার। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তারা সাংবাদিকদের বলেন, থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং তাকে ইসরায়েলি পতাকা হাতে হাঁটানো হয়।
হেলমি বলেন, ‘এটা ছিল এক দুঃস্বপ্ন। আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছিল। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, এমনকি ওষুধও দেওয়া হয়নি।’
বিভার জানান, ‘গ্রেটার সঙ্গে ভয়ংকর আচরণ করা হয়।
তাকে রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নিজে দেখেছি, ইসরায়েলি কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির একটা কক্ষে প্রবেশ করার পর গ্রেটাকে ধাক্কা মেরে সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।’
ইতালীয় সাংবাদিক লোরেঞ্জো আগোস্তিনোও একই দাবি করেছেন। তিনি আনাদোলুকে বলেন, ‘মাত্র ২২ বছর বয়সী সাহসী নারী গ্রেটা থুনবার্গকে অপমান করা হয়েছে। তাকে ইসরায়েলি পতাকায় মোড়ানো হয় এবং ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়।’
তুর্কি টেলিভিশন উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার জানান, ‘আমাদের কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছে। তিন দিন না খাইয়ে রাখা হয়। পানি না পেয়ে টয়লেটের পানি খেতে হয়। প্রচণ্ড গরমে আমরা সবাই ঝলসে যাচ্ছিলাম। এই অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝিয়েছে—গাজায় মানুষের সঙ্গে আসলে কি ঘটছে।’
আরেক তুর্কি কর্মী আয়সিন কানতোগলু বলেন, ‘কারাগারের দেয়ালে রক্তের দাগ আর আগের বন্দিদের লেখা বার্তা ছিল। অনেক মা তাদের সন্তানের নাম লিখে রেখেছেন। আমরা যেন অল্প সময়ের জন্য হলেও ফিলিস্তিনিদের কষ্টটা অনুভব করেছি।’
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, আটক ২৬ ইতালীয় নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তবে আরও ১৫ জন এখনো ইসরায়েলে আটক রয়েছেন।
আইনি সহায়তা প্রদানকারী ইসরায়েলি অধিকার গোষ্ঠী আদালাহ জানিয়েছে, বন্দিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত-পা বেঁধে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, ওষুধ দেওয়া হয়নি এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতেও বাঁধা দেওয়া হয়েছে।
তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে। এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সব বন্দিকে আইন অনুযায়ী আচরণ করা হয়েছে। তাদের পানি, খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আইনি অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে।’























