
শেষমেশ ভারতের পথই অনুসরণ করছে আফগানিস্তান। এবার আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানমুখী কুনার নদীতে বাঁধ তৈরি ও পানি প্রবাহ সীমীত করার পরিকল্পনা করছে তালেবান সরকার। সম্প্রতি সীমান্তে যুদ্ধে জড়িয়েছিল দুই প্রতিবেশী দেশ। তার রেশ কাটতে না কাটতেই তালেবান সরকারের এই পদক্ষেপকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আফগান তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ কুনার নদীর ওপরে একটি বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
বৃহস্পতিবার এক এক্স-পোস্টে দেশটির তথ্য উপমন্ত্রী মুহাজের ফারাহি বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা কুনার নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণে বিদেশি কোম্পানির জন্য অপেক্ষা না করে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি স্বাক্ষরের নির্দেশ দিয়েছেন।’
পৃথক এক্স পোস্টে আফগান পানি মন্ত্রী মোল্লা আব্দুল লতিফ মনসুর বলেছেন, ‘আফগানদের নিজস্ব পানি ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে।’
৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুনার নদীটির উৎপত্তি উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালায়। এটি আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় প্রবেশ করেছে, সেখানে এটি চিত্রাল নামে পরিচিত। এছাড়াও আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরের কাছে কাবুল নদীর সঙ্গেও মিলিত হয় কুনার, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বৃহত্তম আন্তঃসীমান্ত নদী।
অন্যদিকে কাবুল নদী অ্যাটকের কাছে সিন্ধু নদে মিলিত হয় এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেচ এবং অন্যান্য পানির চাহিদার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে কুনার নদীর পানি প্রবাহ হ্রাস হলে সিন্ধু নদীর ওপর তীব্র প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবানরা দেশের নদীর মাধ্যমে বিদুৎ উৎপাদন, সেচ ব্যবস্থায় উন্নতির ওপর জোর দিয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে বাঁধ নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ উন্নয়নের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে।
এদিকে আফগানিস্তানের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ আগেই সতর্ক করেছে, পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ আঞ্চলিক পানি সংকটকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।
এরআগে চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে ঐতিহাসিক ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি’ স্থগিত করে মোদি সরকার।
প্রসঙ্গত, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলোর পানি বণ্টনের জন্য বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী— সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর থেকে ভারত সরকারকে পর পর চার বার চিঠি দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহহবাজ শরিফ জানান, এই চুক্তির ওপর ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভর করে আছে। তিনি দাবি করেন, ভারতের সিদ্ধান্ত বেআইনি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তিনি।’
অন্যদিকে সিন্ধু নদে ভারত বাঁধ নির্মাণ করলে তা মিসাইল মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল অসীম মুনির। তবে এসব কিছু উপেক্ষা করেই নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে ভারত।
সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস























