ভারতে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নামে দেশটির শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর বেজায় চটেছেন সাধারণ মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরুর দিনই এক মুসলিম যুবকের মৃত্যু নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মুসলিম। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, মুসলিম ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতেই বিজেপি এই ছলচাতুরী শুরু করেছে।
পরিবার এবং রাজ্যের শাসকদলের দাবি, এসআইআর-আতঙ্কে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন উলুবেড়িয়ার এক যুবক। এ নিয়ে রাজ্যে ‘এসআইআর-আতঙ্কে’ পঞ্চম মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।
উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের খলিসানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ছিলেন জাহির মাল। ২৮ বছরের যুবক দিনমজুরের কাজ করতেন।
উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। তবে বাড়ি থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।
পরিবারের দাবি, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন জাহির। সেই জন্যই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন এ মুসলিম যুবক। তার স্ত্রী রেজিনা বিবি বলেন, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল ও।
সবসময় বলত, ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। গত কয়েক দিন এই ভয় কাজ করত ওর মনে। ভয়েই নিজেকে শেষ করে ফেলেছে ও।
তৃণমূল জানিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একটি প্রতিনিধিদল যাচ্ছে ওই যুবকের বাড়িতে।
রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে বলেন, আমাদের দল এই পরিবারের পাশে রয়েছে।
অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, এমন ঘটনার জন্য দায়ী তৃণমূলই। তারাই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। অকারণে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বালুরঘাটের এমপি সুকান্ত মজুমদার বলেন, এসআইআর নিয়ে ভয় দেখিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
এর আগে রাজ্যে চারটি মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআর নিয়ে আতঙ্ককে দায়ী করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ‘এনআরসি-র আতঙ্কে’ আত্মঘাতী হন আগরপাড়ার মশারি ব্যবসায়ী প্রদীপ কর। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মেলে।
হাতের লেখা তার কি না, মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে ওই নোটের। খড়দহ থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপের ভ্রাতৃবধূ। এর পর ৩০ অক্টোবর বীরভূমের ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লি এলাকায় আত্মহত্যা করেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ ক্ষিতীশ মজুমদার। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা ক্ষিতীশ।
ইলামবাজারে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম ছিল না। এ জন্য এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন ওই নবতিপর। তার মৃত্যুতে নির্বাচন কমিশনের নামে এফআইআর দায়ের হয় ইলামবাজার থানায়।
এর পর গত ২ নভেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে বাড়িতে মৃত্যু হয় দিঘার এক মুসলিম হোটেল মালিকের। মৃতের নাম শেখ সিরাজউদ্দিন।
পরিবারের দাবি, একটি নথিতে বাবার নাম ভুল দেখে চিন্তায় পড়ে যান ওই প্রৌঢ় ব্যবসায়ী। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার। হুগলির ডানকুনি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৬০ বছরের হাসিনা বেগের মৃত্যু হয়েছে সোমবার।
২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম ছিল না। সেই কারণে তিনি বেশ চিন্তায় ছিলেন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। এ জন্য এসআইআরকে দায়ী করেছে পরিবার। তা সমর্থন করেছে তৃণমূল।