
ইউজিসি ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে কর্মশালা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেছেন, জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, তোমরা বড় যোদ্ধা, দেশের পরিবর্তনকারী। তোমাদের অবদানের জন্য সারা বিশ্ব আমাদের সম্মান করছে। জাতি তোমাদের সম্মান করে, অনেক কিছু প্রত্যাশাও করে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ইউজিসি ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সোশ্যাল ইমোশনাল ওয়েলবিং অব ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনের অডিটোরিয়ামে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ইউজিসি’র ইন্টারন্যাশনাল কোলাবরেশন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোছা. জেসমিন পারভিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম।
প্রফেসর ফায়েজ বলেন, জুলাইয়ের ট্রমা থেকে শিক্ষার্থীদের বের হয়ে আসতে সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহায়ক হবে। তিনি জানান, জুলাই স্মৃতিচারণে শীঘ্রই ইউজিসি একটি সেমিনার আয়োজন করবে।
প্রফেসর তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ৫ আগস্টের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ও হলগুলোতে স্বৈরাচারী পরিবেশ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভোগান্তি ও মানসিক চাপে ছিলেন। খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষক তখন শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে শিক্ষার্থীরা অদম্য সাহস ও শক্তি প্রদর্শন করেছে।
প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে দেশের স্বার্থে আন্দোলন করেছে। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ ১৪০০ জন শহিদ হয়েছেন এবং প্রায় ২০ হাজার আহত হয়েছেন। তিনি জানান, আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের মানসিক ট্রমায় ভুগছেন, যা কমিয়ে আনতে ইউজিসি নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রফেসর মাছুমা হাবিব বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইউজিসি অব্যাহতভাবে কাজ করবে। এ সময় তিনি সময়োপযোগী এ প্রকল্পে সহায়তার জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান।
প্রফেসর আইয়ুব ইসলাম বলেন, তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এ বিষয়টি অবহেলিত ছিল, তবে ইউজিসি’র এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।
কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে এসেছে। এখন আর র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটছে না এবং হলের সিট পেতে শিক্ষার্থীরা কোনো অসুবিধায় পড়ছেন না। তারা আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে স্বচ্ছতা ও মেধার প্রাধান্য দিতে হবে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ আয়কর আদায় বন্ধে ইউজিসি হস্তক্ষেপ করবে।
এ কর্মশালায় জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থী রিফাত হাওলাদার, সানজিদা তন্বী, রবিউস সানী, মাহফুজা খাতুন ও উমামা ফাতেমাসহ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর সহায়তায় ইউজিসি ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় চলতি নভেম্বর মাস থেকে ২২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।
























