ছবি: কালের কণ্ঠ
বিলম্বিত অভিযোজন অর্থায়নে ঝুঁকির্পূণ দেশগুলোর অস্তিত্ব হুমকিতে বলে মনে করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের মতো উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে নিজস্ব সম্পদের ওপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘কপ-৩০ এর ফলাফল; বাংলাদেশের পরবর্তী ভূমিকা ও নাগরিক সমাজের অভিমত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত তুলে ধরেন তারা।
ইক্যুইডিবিডির চিফ মডারেটর এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ওয়াটারকিপারর্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল, সেন্টার ফর পার্টিসেপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি)’র প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দোহা, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (সিপিডি)’র নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, বাংলদেশ ক্লাইমেট চেঞ্চ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাউসার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন বাবলু, কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম. এ. হাসান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বরাবরের মতো এবারো ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিশ্রুতি আসেনি, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে এমন নয়, পেলেও যৎসামান্য অনুদানভিত্তিক বাকি পুরোটাই ঋণ নির্ভর। তাই ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। দেশের জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, যদি জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেই এনডিসি-০৩ জমা দেয়নি, তারাই আবার এনডিসি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছে, বিষয়গুলো হাস্যকর। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে অর্থায়নের ক্ষেত্রে, কোনও তাৎপর্যই বহন করে না। কারণ এর কোন নির্দিষ্ট ভিত্তিরেখা নেই।
সামসুদ্দোহা বলেন, এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কোন সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি, শুধু আলোচনার কথা বলা হয়েছে।
সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলনের মূল অলোচনার বাহিরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, ব্রাজিলের নেতৃত্বে এবারের নতুন তহবিল ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরেভার ফ্যাসিলিটি তেমনই একটি। এটাও একধরনের ঋণ তৈরির হাতিয়ার। এ বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে হবে।
জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির আলোচনা এবারে সম্মেলন থেকে রাজনৈতিকভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জ্বালানি লবিষ্টদের প্রভাবে জলবায়ু আলোচনা এখন অধিকার ভিত্তিক না হয়ে কর্পোরেট ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। পুরো প্রক্রিয়াটি চলে আমলাতান্ত্রিক ভাবে।
মূল প্রবন্ধে এম.এ. হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থ প্রাপ্তির সুনির্দীষ্ট নিশ্চয়তা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার রোডম্যাপ ছাড়াই বেলেম চুক্তি (কপ-৩০) চুড়ান্তভাবে ব্যার্থ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস বাধ্যতামূলক না করে স্বেচ্ছায় করার আহ্বান মূলত বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের মূল কারণকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত ট্রিপল অভিযোজন অর্থায়ন লক্ষ্য ২০৩০ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই বিলম্বিত অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা উন্নত বিশ্বের দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের সিংহভাগই আসে ঋণ হিসেবে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য দেওয়া প্রতি ৫ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৭ ডলার, বাংলাদেশর মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৮০ ডলার। সুতরাং ঋণ ভিত্তিক পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে, এবং নিজস্ব অর্থায়ন বাড়াতে ব্লু-ইকেনোমির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।