
সজীব ওয়াজেদ জয়
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশনের দাখিল করা ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়ে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল গতকাল বৃহস্পতিবার এ পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার অন্য আসামি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আগামী ১০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় জয় ও পলকের বিরুদ্ধে তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের হত্যার তথ্য আড়াল, হত্যাযজ্ঞে উসকানি, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততা। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম, তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, প্রথম অভিযোগ হলো—জুলাই আন্দোলনের সময় তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পর পর তিনটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে সম্বোধন করেন এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এ দেশে থাকার অধিকার নেই, পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন।
এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের পর ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালায়। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ নিহত হন এবং সারা দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া হত্যার নির্দেশ বাস্তবায়নে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে প্রতিমন্ত্রী পলক প্রথমে ইন্টারনেটের গতি কমান এবং পরে পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। এতে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের তথ্য আড়াল রেখে হত্যাযজ্ঞ চালানো সহজ হয়।
ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা নিহত হন।
তৃতীয় অভিযোগ—যাঁরা মাঠে থেকে হত্যাযজ্ঞ চালান, তাঁদের বিরুদ্ধে জয় ও পলক কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থ হন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় জয় দেশে ছিলেন না—এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(১) ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক দেশের ভেতরে বা বাইরে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিচার করতে পারবেন। দেশে থাকেন কি না, তিনি তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট জয়ের পরামর্শে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছিলেন—এ তথ্য উল্লেখ করে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, মামলায় সালমান এফ রহমান ও শেখ রেহানার একটি মোবাইল ফোন কথোপকথনের তথ্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শেখ রেহানা বলেন, ‘আপনি জয়ের কথা শোনেন, জয়ের কথামতো চলে যান।
’ তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনুরোধেও শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না; পরে জয়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ তিনি সব ক্ষেত্রে জয়ের উপদেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেন।
প্রসিকিউটর তামীম বলেন, যেহেতু আইসিটি উপদেষ্টা ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর যৌথ পরিকল্পনা, পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছিল, সেহেতু অপরাধের দায় তাঁদের দুজনের ওপর বর্তায়। তিনি দাবি করেন, ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ শুধু মৌখিকভাবে নয়, লিখিত আদেশ ও মোবাইলের এসএমএসেও দেওয়া হয়েছিল।
মামলা বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে এর বেশি কোনো তথ্য জানায়নি প্রসিকিউশন।



























