
বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াপদা সড়কের পাশে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন গাছি রফিকুল ইসলাম। সোমবার সকালে তোলা। -কালের কণ্ঠ
শীতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক খেজুরগাছের। শীতকালে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ থেকে পাওয়া যায় রস ও গুড়। ফল হিসেবেও জুড়ি নেই খেজুরের। শীতের মিষ্টি রোদে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি, রসের পিঠা, গুড়ের পায়েস ক্ষীর খাওয়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্য।
তবে সেব ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের ইটভাটায় উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে খেজুর গাছ। ফলে শীত এলে গাছে গাছে গাছিদের রস সংগ্রহের সেই চেনা দৃশ্য এখন বিরল। দা-কাঁচি, একগাছি রশি, একদণ্ড বাঁশ ও কোমরে ঝোলানো লম্বা-গোল আকৃতির বিশেষ পাত্র (ঠুঙ্গি বা তুন) নিয়ে গাছে উঠতে দেখা যায় না তাদের।
শীতের সকালে কাঁধে ভার চেপে ঝুলন্ত কলস নিয়ে তাঁদের হাঁটতে দেখা যায় না।
দুই যুগ আগেও বরগুনার উপকূলীয় জনপদ বেতাগীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে হেমন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটার প্রাথমিক কাজগুলো করার হিড়িক পড়তো। গাঁয়ের পথে-ঘাটে, নদী বা পুকুরপাড়ে, বড় রাস্তার দুই পাশে বা ক্ষেতের আলঘেঁষে শতশত গাছের শীর্ষভাগ বিশেষভাবে কাটতেন গাছিরা। ১৫ থেকে ১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করতেন।
আড়াআড়িভাবে বাঁধা বাঁশের দণ্ডে দাঁড়িয়ে কোমর ও গাছে রশি পেঁচিয়ে ধারালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ চাঁছা বা কাটার দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। এমন দুর্লভ দৃশ্য এখন কেবল বইয়ের পাতায়ই শোভা পাচ্ছে। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে দেখা যায় রসের পিঠা বা ভাপা-পুলি।
গত সোমবার বিকেলে বেতাগী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াপদা রোডের পাশে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে আসা ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন,দুই যুগ আগেও শীতের এই মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করতেন তিনি।
এ বছর রস সংগ্রহের জন্য সাতটি গাছ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন,সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে কৃষকদেরও। তাঁদের উচিত হবে গাছিদের মজুরি বাড়িয়ে দেওয়া। খেজুরগাছ থেকে উৎপাদিত রস ও গুড়ের উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে। বনবিভাগ স্বল্প ব্যয়ে সড়কের পাশে বা ডিভাইডারে বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজার হাজার খেজুরগাছ রোপণ করতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণ ও রস আহরণের জন্য স্থায়ীভাবে গাছি নিয়োগ দিতে পারে তারা। এতে সড়কের সৌন্দর্য যেমন বাড়বে, তেমনি অনেক দরিদ্র গাছির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।


























