০৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত

  • আপডেট সময়: ১২:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • 28
  • এনসিপি ও চার বাম দলের অনুষ্ঠান বর্জন, সই করেনি গণফোরাম, বিক্ষোভের মুখে পঞ্চম দফা সংশোধন

ছবি: কালের কণ্ঠ


সব সন্দেহ-সংশয়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পেছনে ফেলে চরম উত্তেজনা ও আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২৪টি রাজনৈতিক দলের ৪৮ জন প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সনদে সই করেন। এরপর সই করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের সদস্যরা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম দল।

গণফোরামও সনদে স্বাক্ষর করেনি। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো। সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসার প্রমাণ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে,

যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের বহু স্রোত কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে।

বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্বে বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় ব্যান্ডদলের পরিবেশনা শুরু হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

দর্শক সারিতে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় ছিল ব্যাপক উত্তেজনা। জুলাই যোদ্ধারা তিন দফা দাবি নিয়ে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। তাঁদের এই অবস্থান-আন্দোলন দুপুরে সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ কারণে বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। বিকেল থেকেই ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল দেখা যায়। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও একে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে বিক্ষোভ করেন জুলাই যোদ্ধারা। তাঁরা বলেন, এই সনদ তাঁরা মেনে নেবেন না। কারণ এতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সময় যোদ্ধাদের ওপর হামলার বিচার দাবি করেন তাঁরা। যদিও তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গতকাল ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় এক শ্রমিক সমাবেশে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ পিটিয়ে ও টিয়ার শেল ছুড়ে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাকর।’ সনদে এনসিপির স্বাক্ষর না করা এবং জুলাই যোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের অগ্রদূতদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সনদই অর্থবহ হবে না। এই সনদকে অর্থবহ করতে হলে জুলাইয়ের অগ্রদূতদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

সনদ স্বাক্ষরে আবেগঘন পরিবেশ : প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর বিকেল ৫টার পর প্রথমে রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং পরে প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এ সই করেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানান। পরে সবাই দাঁড়িয়ে স্বাক্ষরিত সনদ হাতে ফটো সেশনে অংশ নেন। এরপর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর সাত মিনিটের একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে স্মরণীয় এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এদিকে চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই সনদের আইনি ভিত্তির অস্পষ্টতাসহ তিন দফা শর্ত না মানলে এ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয় এনসিপি। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—এই চার দলও এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে। গণফোরামও সনদে স্বাক্ষর করেনি। তবে দলগুলো চাইলে আগামী দিনে এই সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে বলে আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসংবলিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো।” সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশেষ প্রামাণ্যচিত্রে নিষ্ঠুরতার প্রতিচিত্র : অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন নিষ্ঠুরতার প্রতিচিত্র। আয়নাঘরে গুম হওয়া পরিবারের আর্তনাদ, বেঁচে আসা ব্যারিস্টার আরমানের লোমহর্ষক বর্ণনা, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড ও জুলাই আন্দোলনের নির্মম হত্যার চিত্র প্রদর্শনের সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সাত মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্র দেখতে সংসদ ভবনের বাইরেও বিপুলসংখ্যক দর্শকের দৃষ্টি ছিল অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনের এলইডিতে। অনেকে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। দর্শকদের মধ্যে স্কুল শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে বিগত দিনে বাংলাদেশের অন্ধকার সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।’ আরেক অভিভাবক বলেন, ‘এই দৃশ্যগুলো আমাদের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়গুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এমন দিন আর না আসুক।’

জুলাই সনদ একটি সামাজিক চুক্তি :  অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়। এটি হচ্ছে নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, যাঁরা আজও আহত আছেন, যে জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবন যাপন করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণায় মনির হায়দার বলেন, এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনার জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।

অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফায় পরিবর্তন : জুলাইয়ের বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের আলোচনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফা পরিবর্তন করা হয়। জুলাইয়ের বীর যোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার কথা জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পরে তিনি অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্যটি পাঠ করেন।

এতে আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

যেসব দল সনদে স্বাক্ষর করেছে : সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), আমজনতার দল, এবি পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল-এনডিএম, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি-বিএসপি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।

জুলাই সনদে যা রয়েছে : সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে প্রণীত ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদের তিনটি ভাগের মধ্যে প্রথম ভাগে পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব ও তৃতীয় ভাগে সনদ বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। এই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন। জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমসহ সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর স্বাক্ষরের জায়গা রাখা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার করে বাস্তবায়িত বিষয়ের মধ্যে বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষার স্বীকৃতি, বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়, সংবিধান সংস্কারের বিধান, সংবিধান বিলুপ্তি ও স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধের অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের বিধান সংযুক্তি, মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সংশোধন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করার কথা রয়েছে।

সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত অংশে প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকার সীমা, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধানের পদে না থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার গঠন প্রক্রিয়া, কার্যাবলি ও মেয়াদ প্রভৃতি বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে। একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠন নিয়ে ৩০টি দল ও জোট একমত পোষণ করলেও প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধানের থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্নমত ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার ক্ষেত্রে ২৫টি রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। পাঁচটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে, তাতে ২৪টি রাজনৈতিক দলকে একমত হতে দেখা যাচ্ছে। আর সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের। উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি ও এখতিয়ার অংশে উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা, উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ১০০ জন করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে অস্থায়ী বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনধিক ১০ বছর পর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

বিচারব্যবস্থা অংশে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন ও এই কমিশনকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালীকরণ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাছাই কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তাদের কাজের ক্ষেত্রে যেসব সংশোধনীর প্রস্তাব জুলাই সনদে রাখা হয়েছে, তাতে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত পোষণ করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিধান হিসেবে ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কারের অঙ্গীকারও থাকছে জুলাই সনদে। সনদে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়সমূহের মধ্যে প্রথমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮(৫) সংশোধনসাপেক্ষে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদের কমিটিসমূহ ও সদস্যদের বিশেষ অধিকার, অধিকারের সীমা এবং দায় নির্ধারণের অঙ্গীকার থাকছে জুলাই সনদে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন প্রণয়ন, বিচারকদের জন্য অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি, সাবেক বিচারপতিদের জন্য অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠন, বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থাকে অধিদপ্তরে রূপান্তর, বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ দাখিল, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধিসংক্রান্ত বিষয় রাখা হয়েছে আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য। এ ছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (সাধারণ), সরকারি কর্ম কমিশন (শিক্ষা) এবং সরকারি কর্ম কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেসব প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট : জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে ১০টি নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রের মূলনীতির প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণফোরামের। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্বের কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠনপ্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত একমত হলেও পরের ধাপ নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। অন্যদিকে একটি অংশে ভিন্নমত আছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। কোন ধরনের দল (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নিয়ে ভিন্নতম রয়েছে বিএনপি ও এনডিএমের। উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে ভিন্নমত সিপিবি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও আমজনতার দলের। নারী আসনের বিধানে সিপিবি, বাসদ, আমজনতার দলের ভিন্নমত রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে (ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক) বিএনপিসহ সাতটি দল ও জোটের ভিন্নমত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে বিএনপিসহ সাতটি দল ও জোটের ভিন্নমত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের একটি ধারা (নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত) সংশোধনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভিন্নমত রয়েছে।

সনদে নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তাহলে তারা সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ যাচ্ছে না : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) চারটি বামপন্থী দলের আপত্তির পর জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না। আগে সনদে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলিসংক্রান্ত ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না।

সিপিবিসহ চার বাম দলের জুলাই জাতীয় সনদে সই করতে অস্বীকৃতি জানানোর অন্যতম কারণ ছিল এটি। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং সপ্তম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।

এ অবস্থায় জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না।

অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে থাকবে।

অঙ্গীকারনামা : জুলাই সনদের শেষ অংশে আছে সনদ বাস্তবায়নে সাত দফা অঙ্গীকারনামা। এতে বলা আছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। জনগণের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় সাধারণত প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে সনদ গ্রহণ করছে। তাই এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করা হবে। সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। উপরন্তু সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে দলগুলো আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

আরো বলা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের দ্বারা সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা দেওয়া, যেমন—মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সনদ বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করা হবে। যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে। নিজামুল হক ও নিখিল ভদ্র, কালের কণ্ঠ

উত্তরাধুনিক

Writer, Singer & Environmentalist

জেমস-আলী আজমতের কনসার্টে পুনম ও মধুবন্তী 

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত

আপডেট সময়: ১২:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
  • এনসিপি ও চার বাম দলের অনুষ্ঠান বর্জন, সই করেনি গণফোরাম, বিক্ষোভের মুখে পঞ্চম দফা সংশোধন

ছবি: কালের কণ্ঠ


সব সন্দেহ-সংশয়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পেছনে ফেলে চরম উত্তেজনা ও আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২৪টি রাজনৈতিক দলের ৪৮ জন প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সনদে সই করেন। এরপর সই করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের সদস্যরা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চারটি বাম দল।

গণফোরামও সনদে স্বাক্ষর করেনি। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো। সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসার প্রমাণ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে,

যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের বহু স্রোত কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে।

বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্বে বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় কাঙ্ক্ষিত জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় ব্যান্ডদলের পরিবেশনা শুরু হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

দর্শক সারিতে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় ছিল ব্যাপক উত্তেজনা। জুলাই যোদ্ধারা তিন দফা দাবি নিয়ে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন। তাঁদের এই অবস্থান-আন্দোলন দুপুরে সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ কারণে বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। বিকেল থেকেই ওই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, এপিবিএন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর টহল দেখা যায়। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরও একে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে বিক্ষোভ করেন জুলাই যোদ্ধারা। তাঁরা বলেন, এই সনদ তাঁরা মেনে নেবেন না। কারণ এতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সময় যোদ্ধাদের ওপর হামলার বিচার দাবি করেন তাঁরা। যদিও তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গতকাল ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় এক শ্রমিক সমাবেশে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ পিটিয়ে ও টিয়ার শেল ছুড়ে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাকর।’ সনদে এনসিপির স্বাক্ষর না করা এবং জুলাই যোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের অগ্রদূতদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সনদই অর্থবহ হবে না। এই সনদকে অর্থবহ করতে হলে জুলাইয়ের অগ্রদূতদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

সনদ স্বাক্ষরে আবেগঘন পরিবেশ : প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর বিকেল ৫টার পর প্রথমে রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং পরে প্রধান উপদেষ্টাসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এ সই করেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানান। পরে সবাই দাঁড়িয়ে স্বাক্ষরিত সনদ হাতে ফটো সেশনে অংশ নেন। এরপর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর সাত মিনিটের একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে স্মরণীয় এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এদিকে চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই সনদের আইনি ভিত্তির অস্পষ্টতাসহ তিন দফা শর্ত না মানলে এ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয় এনসিপি। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—এই চার দলও এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে। গণফোরামও সনদে স্বাক্ষর করেনি। তবে দলগুলো চাইলে আগামী দিনে এই সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে বলে আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারসংবলিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করেছে। সারা বিশ্বের কাছে এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো।” সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশেষ প্রামাণ্যচিত্রে নিষ্ঠুরতার প্রতিচিত্র : অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্রে উঠে আসে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন নিষ্ঠুরতার প্রতিচিত্র। আয়নাঘরে গুম হওয়া পরিবারের আর্তনাদ, বেঁচে আসা ব্যারিস্টার আরমানের লোমহর্ষক বর্ণনা, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড ও জুলাই আন্দোলনের নির্মম হত্যার চিত্র প্রদর্শনের সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

সাত মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্র দেখতে সংসদ ভবনের বাইরেও বিপুলসংখ্যক দর্শকের দৃষ্টি ছিল অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনের এলইডিতে। অনেকে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। দর্শকদের মধ্যে স্কুল শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে বিগত দিনে বাংলাদেশের অন্ধকার সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।’ আরেক অভিভাবক বলেন, ‘এই দৃশ্যগুলো আমাদের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়গুলোকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এমন দিন আর না আসুক।’

জুলাই সনদ একটি সামাজিক চুক্তি :  অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়। এটি হচ্ছে নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, যাঁরা আজও আহত আছেন, যে জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবন যাপন করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণায় মনির হায়দার বলেন, এই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচনার জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।

অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফায় পরিবর্তন : জুলাইয়ের বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের আলোচনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফা পরিবর্তন করা হয়। জুলাইয়ের বীর যোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার কথা জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। পরে তিনি অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্যটি পাঠ করেন।

এতে আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

যেসব দল সনদে স্বাক্ষর করেছে : সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), আমজনতার দল, এবি পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল-এনডিএম, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি-বিএসপি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।

জুলাই সনদে যা রয়েছে : সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে প্রণীত ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদের তিনটি ভাগের মধ্যে প্রথম ভাগে পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব ও তৃতীয় ভাগে সনদ বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকার রয়েছে। এই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন। জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমসহ সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর স্বাক্ষরের জায়গা রাখা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার করে বাস্তবায়িত বিষয়ের মধ্যে বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষার স্বীকৃতি, বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়, সংবিধান সংস্কারের বিধান, সংবিধান বিলুপ্তি ও স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধের অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধানে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের বিধান সংযুক্তি, মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণ, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সংশোধন এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মামলার বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতি নেওয়ার বিধান যুক্ত করার কথা রয়েছে।

সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত অংশে প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকার সীমা, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধানের পদে না থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার গঠন প্রক্রিয়া, কার্যাবলি ও মেয়াদ প্রভৃতি বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে। একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠন নিয়ে ৩০টি দল ও জোট একমত পোষণ করলেও প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধানের থাকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্নমত ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার ক্ষেত্রে ২৫টি রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। পাঁচটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত ভোটে উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে, তাতে ২৪টি রাজনৈতিক দলকে একমত হতে দেখা যাচ্ছে। আর সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের। উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি ও এখতিয়ার অংশে উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা, উচ্চকক্ষের সদস্যদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ১০০ জন করা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচন, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে অস্থায়ী বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনধিক ১০ বছর পর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

বিচারব্যবস্থা অংশে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন গঠন ও এই কমিশনকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালীকরণ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

বাছাই কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তাদের কাজের ক্ষেত্রে যেসব সংশোধনীর প্রস্তাব জুলাই সনদে রাখা হয়েছে, তাতে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত পোষণ করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিধান হিসেবে ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কারের অঙ্গীকারও থাকছে জুলাই সনদে। সনদে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়সমূহের মধ্যে প্রথমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮(৫) সংশোধনসাপেক্ষে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংসদের কমিটিসমূহ ও সদস্যদের বিশেষ অধিকার, অধিকারের সীমা এবং দায় নির্ধারণের অঙ্গীকার থাকছে জুলাই সনদে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন প্রণয়ন, বিচারকদের জন্য অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি, সাবেক বিচারপতিদের জন্য অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠন, বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থাকে অধিদপ্তরে রূপান্তর, বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীদের সম্পত্তির বিবরণ দাখিল, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধিসংক্রান্ত বিষয় রাখা হয়েছে আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য। এ ছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (সাধারণ), সরকারি কর্ম কমিশন (শিক্ষা) এবং সরকারি কর্ম কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেসব প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট : জুলাই সনদে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে ১০টি নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রের মূলনীতির প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বাংলাদেশ জাসদ, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণফোরামের। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্বের কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানে ভিন্নমত আছে বিএনপি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠনপ্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত একমত হলেও পরের ধাপ নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের ভিন্নমত আছে। অন্যদিকে একটি অংশে ভিন্নমত আছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। কোন ধরনের দল (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) উপদেষ্টার নাম প্রস্তাব করবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ নিয়ে ভিন্নতম রয়েছে বিএনপি ও এনডিএমের। উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে ভিন্নমত সিপিবি, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও আমজনতার দলের। নারী আসনের বিধানে সিপিবি, বাসদ, আমজনতার দলের ভিন্নমত রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে (ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক) বিএনপিসহ সাতটি দল ও জোটের ভিন্নমত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে বিএনপিসহ সাতটি দল ও জোটের ভিন্নমত রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের একটি ধারা (নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত) সংশোধনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভিন্নমত রয়েছে।

সনদে নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তাহলে তারা সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ যাচ্ছে না : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) চারটি বামপন্থী দলের আপত্তির পর জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না। আগে সনদে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলিসংক্রান্ত ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না।

সিপিবিসহ চার বাম দলের জুলাই জাতীয় সনদে সই করতে অস্বীকৃতি জানানোর অন্যতম কারণ ছিল এটি। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ষষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং সপ্তম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।

এ অবস্থায় জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না।

অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে থাকবে।

অঙ্গীকারনামা : জুলাই সনদের শেষ অংশে আছে সনদ বাস্তবায়নে সাত দফা অঙ্গীকারনামা। এতে বলা আছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। জনগণের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় সাধারণত প্রতিফলিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে সনদ গ্রহণ করছে। তাই এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করা হবে। সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। উপরন্তু সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে দলগুলো আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

আরো বলা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব বাংলাদেশে ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের দ্বারা সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারকে এবং জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর, আহত জুলাই বীর যোদ্ধাদের যথোপযুক্ত সহায়তা দেওয়া, যেমন—মাসিক ভাতা, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসনব্যবস্থা এবং শহীদ পরিবার ও আহত বীর যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সনদ বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করা হবে। যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে। নিজামুল হক ও নিখিল ভদ্র, কালের কণ্ঠ